Coronavirus in West Bengal

আরোগ্যের পথে তিন, তবু স্বস্তি কেড়ে রাজ্যে ফের করোনা আক্রান্ত ৪

এগরা-যোগে আক্রান্ত নয়াবাদের ৬৬ বছরের বৃদ্ধের অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানান চিকিৎসক অজয় সরকার।

Advertisement

সৌরভ দত্ত

শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২০ ০২:২২
Share:

এগরার বিয়েবাড়িতে যোগ দেওয়া করোনা-আক্রান্ত বৃদ্ধের দুই আত্মীয়কে নিয়ে বেলেঘাটা আইডির পথে স্বাস্থ্যকর্মীরা। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

দিন শুরু হয়েছিল স্বস্তির খবরে। রাতে ফিরে এল অস্বস্তি। রবিবার আক্রান্ত তিন জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টে করোনা মেলেনি। আক্রান্তের রিপোর্ট এই প্রথম নেগেটিভ, তাই স্বস্তির শ্বাস ফেলেন স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। কিন্তু রাতে একসঙ্গে চার জনের দেহে করোনা ধরা পড়ায় রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ১৮ থেকে বেড়ে হয় ২২।

Advertisement

চিকিৎসক শিবিরের খবর, আলিপুরের সেনা হাসপাতালের অ্যানাস্থেসিয়া বিভাগের প্রধান ১৭ মার্চ দিল্লি থেকে ফেরেন। ২১ মার্চ পর্যন্ত হাসপাতালে কাজ করেন। ২৩ তারিখে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ২৮ তারিখে ফুসফুসে সংক্রমণের জেরে ৫২ বছরের ওই চিকিৎসককে ভর্তি করানো হয় সেনা হাসপাতালের কোভিড-আইসোলেশনে। সিটি স্ক্যানে ভাইরাল নিউমোনিয়ার ইঙ্গিত মেলায় তাঁর লালারসের নমুনা নাইসেডে পাঠানো হয় রবিবার। করোনা ধরা পড়ে। রাজ্যের কোনও চিকিৎসক এই প্রথম করোনায় আক্রান্ত হলেন। তাঁর ডায়াবিটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদ্‌রোগের সমস্যা রয়েছে। তাঁকে আইসিইউয়ে রাখা হয়েছে। তাঁর সংস্পর্শে কারা এসেছেন, তার খোঁজ চলছে। কী করণীয়, সেই বিষয়ে সেনা হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় গবেষণা সংস্থা।

নাইসেডের খবর, এ দিন অন্য যে-তিন জনের শরীরে করোনা মিলেছে, উত্তরবঙ্গের ৪৪ বছরের মহিলার মতো ‘সারি’ (সিভিয়র অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইলনেস) প্রক্রিয়ায় তাঁদের নমুনা পাঠানো হয়েছিল। ওই তিন জনের মধ্যে বরাহনগরের ৬৬ বছরের এক বৃদ্ধ লেক টাউনের একটি নার্সিংহোমে ভর্তি ছিলেন। ২৮ মার্চ তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় মানিকতলার একটি হাসপাতালে। তিনি আছেন আইসিইউয়ে। মধ্যপ্রদেশের এক বাসিন্দা তাঁর বাড়িতে এসেছিলেন। তিনি জ্বর নিয়ে পিয়ারলেস হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এ দিন আক্রান্ত বাকি দু’জন ইএম বাইপাস সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। ৫৯ এবং ৭৭ বছর বয়সি ওই দুই রোগীই পুরুষ। ৫৯ বছরের প্রৌঢ় হুগলির বাসিন্দা, দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের কর্মী। সপ্তাহান্তে ট্রেনে হুগলিতে ফিরতেন ডায়াবিটিস ও হাইপারটেনশনের ওই রোগী। অর্থাৎ তাঁর রেল-যোগ একটা আছেই। ১৬ মার্চ থেকে জ্বরে ভুগছিলেন তিনি। শ্বাসকষ্ট নিয়ে শনিবার ভর্তি হন হাসপাতালে।

Advertisement

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘কোভিড১৯’ সংক্রমণ জানতে ‘সারি’ আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃত পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে রোগীর শ্বাসকষ্ট কেন হচ্ছে, চিকিৎসকেরা যদি তার ব্যাখ্যা না-পান, তা হলে আক্রান্তের নমুনা করোনা-পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। এই পদ্ধতিতে গত ২৪ ঘণ্টায় উত্তরবঙ্গের মহিলা-সহ মোট চার জনের দেহে করোনা ধরা পড়েছে। বিষয়টি উদ্বেগজনক। সঙ্কটজনক অবস্থায় ওই মহিলা ভেন্টিলেটরে আছেন।

এগরা-যোগে আক্রান্ত নয়াবাদের ৬৬ বছরের বৃদ্ধের অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানান চিকিৎসক অজয় সরকার। তিনি বলেন, ‘‘ওঁর মূত্রের পরিমাণ কম, একটু দুশ্চিন্তা আছে।’’ বৃদ্ধের আত্মীয়ের স্ত্রী ও পিসি, ন’মাসের শিশু, ছয় এবং ১১ বছরের বালক-বালিকা-সহ তেহট্টের পাঁচ জন ভাল আছেন বলে জানান আইডি হাসপাতালের অধ্যক্ষা অণিমা হালদার।

এ দিন স্বাস্থ্যকর্তাদের স্বস্তি দিয়েছে লন্ডন-যোগে আইডি-তে চিকিৎসাধীন আক্রান্ত তিন জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ আসার খবর। তাঁরা হলেন আমলা-পুত্র, দ্বিতীয় আক্রান্তের বাবা এবং উত্তর ২৪ পরগনার তরুণী, যিনি বঙ্গে করোনা-সচেতনতার মুখও বটে। আজ, সোমবার আবার তিন জনের নমুনা নাইসেডে পাঠানো হবে। এ বারেও রিপোর্ট নেগেটিভ এলে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ছেড়ে দেওয়া হবে তাঁদের তিন জনকেই।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement