প্রতীকী ছবি।
ভোট আবহে উত্তেজনার মধ্যেও মানুষ যেন করোনার কথা ভুলে না যান —আবেদন জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
তাঁদের কথায়, ‘‘ভোট দান গণতান্ত্রিক অধিকার। আর করোনাকে প্রতিরোধ করতে সমস্ত বিধি মেনে চলাটা নৈতিক কর্তব্য। এটা ভুললে চরম বিপদের মুখে পড়তে হবে।’’ কারণ বুধবারে রাজ্যে এক দিনে সংক্রমণের সংখ্যাটা বেড়ে ৯৮২ হয়েছে। সংক্রমণের যে রেখাচিত্র ছিল নিম্নগামী তা আবার বাড়তে শুরু করেছে।
২৭ মার্চ রাজ্যের প্রথম দফার ভোটের ছবিটাতে একটা জিনিস স্পষ্ট হয়েছে। সে দিন করোনা বিধি মানা কার্যত শিকেয় উঠেছিল। আর তাতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন চিকিৎসকেরা। শল্যচিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকারের কথায়, ‘‘আধা সামরিক বাহিনীকে শুধু ভোটের হিংসা দেখলে চলবে না। করোনার হিংসাকেও প্রতিহত করতে কড়া হতে হবে। না হলে হয়তো ২ মে-র পরে রাজ্যের ক্ষমতা দখল করবে করোনা। আর বিপক্ষে থাকবে সমস্ত রাজনৈতিক দল।’’
বুধবার নির্বাচন কমিশনও রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কমিশন জানিয়েছে, আগে সপ্তাহে ২৪০০ জন আক্রান্ত হচ্ছিলেন। গত সপ্তাহে সেটি ৪৪০০ হয়েছে। বিশেষ করে কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়াতে করোনার প্রকোপ ক্রমশ বাড়ছে। হুগলি, বর্ধমান, আসানসোলেও প্রকোপ রয়েছে। এখন অ্যাক্টিভ পজ়িটিভ ৫ হাজারের বেশি। তার মধ্যে ৪২০০-৪৩০০ রোগীর মৃদু উপসর্গ থাকায় হোম আইসোলেশনে রয়েছেন। ৭৫০-৮০০ রোগী হাসপাতালে ভর্তি। তার মধ্যে ১০-১৫ শতাংশ আইসিইউতে।
রাজ্যে ফের করোনা প্রকোপ বাড়তে থাকায় সমস্ত সরকারি হাসপাতালের পরিকাঠামো তৈরি রাখার জন্য ইতিমধ্যেই নির্দেশিকা জারি করেছে স্বাস্থ্য দফতর। এ দিন কমিশনও জানিয়েছে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে ফের শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। টেলিমেডিসিন ও কলসেন্টার ফের পুরোদমে চালু করা হচ্ছে। কমিশন এ দিন দাবি করে, করোনা পরীক্ষার সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় গাইড লাইন মেনে ৭০ শতাংশ পরীক্ষা আরটিপিসিআর পদ্ধতিতে করা হচ্ছে।
এখনও পর্যন্ত রাজ্যে ৫০ লক্ষ মানুষকে প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছে। সেই পরিসংখ্যান উল্লেখ করে কমিশন জানিয়েছে, প্রতিষেধক নেওয়ার পরে ফের করোনা হলেও সংক্রমনের প্রভাব কম। গ্রামীন এলাকাতে করোনার প্রকোপ বেশি মাত্রায় ছড়ানোতে প্রতিষেধক দেওয়াতে ওই সমস্ত এলাকাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। তবে শুধু রাজ্য সরকারের পদক্ষেপে করোনাকে প্রতিহত করা সম্ভব নয় বলেই দাবি চিকিৎসকদের।
তাঁরা জানাচ্ছেন, দ্বিতীয় ঢেউ বঙ্গের দরজায় কড়া নাড়ছে। তাই দৈনিক আক্রান্তের পরিসংখ্যান ওঠানামা করতে করতে একদিন অত্যাধিক মাত্রায় পৌঁছে যাবে। যেমন কয়েক দিন আগেও দৈনিক আক্রান্ত ৮০০-র ঘরে পৌঁছনোর পরে ফের ৬০০-র ঘরে নেমে এসেছিল। কিন্তু বুধবারই সেই সংখ্যা ৯৮২ হয়েছে। যা দেখে চিকিৎসকেরা বলছেন, ‘‘মানুষের আত্মতৃপ্তি আর অত্যাধিক আত্মবিশ্বাস করোনার চরম বিপদকে আহ্বান জানাচ্ছে।’’