ট্রপিক্যাল, সাগর দত্ত ঘিরে আক্ষেপ
Coronavirus in West Bengal

রাজ্যে টিকা পরীক্ষা হবে ডিসেম্বরেই

নাইসেডের অধিকর্ত্রী শান্তা দত্ত জানান, ডিসেম্বরের গোড়ায় তাঁরা কোভ্যাক্সিনের পরীক্ষা শুরু করবেন। সারা দেশে ২৬টি পরীক্ষা-কেন্দ্রে মোট ২৫,৮০০ জন ‘স্টাডি ভলান্টিয়ার’-এর উপরে গবেষণা করছে আইসিএমআর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০২০ ০৪:৪৫
Share:

ছবি: সংগৃহীত।

দীর্ঘ আট মাস অপেক্ষার পরে শিকে ছিঁড়ল। রাজ্যে এই প্রথম টিকা পরীক্ষা (ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল) হতে চলেছে। করোনা টিকা কোভ্যাক্সিনের তৃতীয় পর্যায়ের (ফেজ় থ্রি) পরীক্ষার অনুমোদন পেল কেন্দ্রীয় গবেষণা সংস্থা নাইসেড (ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজ়িজ়েস)।

Advertisement

তবে রাজ্যের চিকিৎসক-গবেষকদের আক্ষেপ, স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন এবং সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজে ‘ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল’ শুরু হওয়ার বিষয়টি অনুমোদনের গেরোয় আটকে না-থাকলে দিল্লি, কর্নাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, বিহার, হরিয়ানা, চণ্ডীগড়, তেলঙ্গানা, রাজস্থান, ওড়িশাকে পিছনে ফেলে তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশের সঙ্গে একই সারিতে উঠে আসত পশ্চিমবঙ্গ।

নাইসেডের অধিকর্ত্রী শান্তা দত্ত এ দিন জানান, ডিসেম্বরের গোড়ায় তাঁরা কোভ্যাক্সিনের পরীক্ষা শুরু করবেন। সারা দেশে ২৬টি পরীক্ষা-কেন্দ্রে মোট ২৫,৮০০ জন ‘স্টাডি ভলান্টিয়ার’-এর উপরে গবেষণা করছে আইসিএমআর। নাইসেডে এক হাজার জনের উপরে এই পরীক্ষা হবে। শান্তা বলেন, ‘‘এক দলকে টিকা দেওয়া হবে। আর এক দলকে টিকার পরিবর্তে অন্য কিছু দেওয়া হবে। তাতে কী ফল হল সে বিষয়ে এক বছর ধরে পর্যবেক্ষণ চলবে।’’ এই সময়ের মধ্যে ‘স্টাডি ভলান্টিয়ার’রা অঙ্গীকারপত্রে যে ঠিকানা দিয়েছেন সেখান ছেড়ে কোথাও যেতে পারবেন না। শান্তার কথায়, ‘‘ফোনে জিজ্ঞাসা করার পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবকেরা কেমন আছেন, তা তাঁদের বাড়িতে গিয়েও দেখা হবে। তাঁরা দূরে কোথাও গেলে অসুবিধা হবে, তাই এই নিয়ম। অনেকে স্বেচ্ছাসেবক হতে চেয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাঁদের মধ্যে থেকেই স্টাডি ভলান্টিয়ার বাছার কথা ভাবা হয়েছে।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: দৈনিক সুস্থতার সংখ্যা কমায় উদ্বেগ বাড়ছে, বাড়তির দিকে নতুন সংক্রমণও

আরও পড়ুন: সরোবর বাঁচানোর মূল্য কি গঙ্গা-দূষণ?

ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল রেজিস্ট্রি অব ইন্ডিয়া (সিটিআরআই)-র তথ্য অনুযায়ী, কোভিড ভ্যাকসিনের পরীক্ষা-কেন্দ্র পাওয়ার প্রশ্নে শীর্ষে রয়েছে মহারাষ্ট্র (৯)। তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশে সেই সংখ্যা হল তিন। দিল্লি, অন্ধ্রপ্রদেশ, কর্নাটক ও বিহার কোভিশিল্ড-কোভ্যাক্সিন মিলিয়ে দু’টি করে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সাইট পেয়েছে। এ দিন নাইসেডে কোভ্যাক্সিনের ট্রায়ালের বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার পরে ভ্যাকসিন গবেষণায় হরিয়ানা, চণ্ডীগড়, তেলঙ্গানা, রাজস্থান এবং ওড়িশার সমকক্ষ হল বঙ্গ।
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের চিকিৎসক-গবেষকদের আক্ষেপ, সাগর দত্তে ‘স্পুটনিক ভি’ এবং স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনে ‘কোভাভ্যাক্স’-এর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদন মিললে মহারাষ্ট্রের পরেই পশ্চিমবঙ্গের নাম চলে আসত।

স্বেচ্ছাসেবক হতে গেলে

• প্রতিষেধক-পরীক্ষায় যোগদানে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের সুস্থ হওয়া আবশ্যক। এক বার করোনা হলে পরীক্ষায় শামিল হওয়া যাবে না। অন্তঃসত্ত্বারাও উপযুক্ত নন।
• পরীক্ষায় যোগদানের আগে স্বেচ্ছাসেবকের সচেতন-সম্মতি আবশ্যক। তার জন্য ‘ইনফর্মড কনসেন্ট’ প্রক্রিয়া রয়েছে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রতিষেধক পরীক্ষায় কী ধরনের ঝুঁকি রয়েছে, কেন এই পরীক্ষা করা হচ্ছে, স্বেচ্ছাসেবকের লাভ কী, ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কতটা, এ সবই জানানো হয়।
• এক দলকে প্রতিষেধক দেওয়া হয়, আর এক দলকে স্যালাইন জাতীয় কিছু দেওয়া হয়। কারা প্রতিষেধক পেলেন, কাদের অন্য কিছু দেওয়া হল তা গোপন থাকে। স্বেচ্ছাসেবক সে কথা জেনেই পরীক্ষায় যোগ দেন।
• নির্দিষ্ট মাত্রায় ডোজ় পাওয়ার পরবর্তী এক বছর ধরে প্রতিষেধক থেকে কোনও পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হল কি না সে বিষয়ে নজরদারি চলবে। এই সময়ের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবকের তাৎক্ষণিক বা দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার প্রয়োজন হলে তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটরের। স্বেচ্ছাসেবকের সুরক্ষার প্রশ্নে এথিক্স কমিটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
• কোনও প্রতিষেধকই ১০০% সুরক্ষা দিতে পারে না। সে জন্য পরীক্ষায় যোগ দিলেও মাস্ক পরা, বার বার হাত ধোওয়া, শারীরিক দূরত্ব মেনে চলায় ঢিলেমি দেওয়া উচিত নয়।

তথ্যসূত্র: শান্তনু ত্রিপাঠী, বিভাগীয় প্রধান, ফার্মাকোলজি, স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন

সাগর দত্তে ‘স্পুটনিক ভি’র পরীক্ষার অনুমোদন প্রাপ্তি নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে তা ইতিমধ্যে সর্বজনবিদিত। কিন্তু স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনে আইসিএমআর, সিরাম ইনস্টিটিউট অব পুণে এবং আমেরিকার সংস্থা নোভাম্যাক্সের যৌথ উদ্যোগে চলা টিকা পরীক্ষা নিয়েও যে জটিলতা তৈরি হয়েছে, তা অনেকের জানা ছিল না। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, প্রায় আড়াই মাস ধরে এই পরীক্ষার ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছে স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন। স্বাস্থ্য দফতরের অনুমোদন পেলে আগামী দশ দিনের মধ্যে ‘ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল’-এর কাজ শুরু করা সম্ভব বলে দাবি ট্রপিক্যালের চিকিৎসক-গবেষকদের একাংশের। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের খরচ বহন করছে আইসিএমআর (ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ)। দ্রুত অনুমোদন না-মিললে টিকা পরীক্ষার প্রকল্পটি ফিরে যাওয়ার আশঙ্কাও করছেন তাঁরা। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের চিকিৎসক-গবেষকদের কথায়, ‘‘নাইসেড ভ্যাকসিন ট্রায়ালের অনুমতি পাওয়ায় আমরা খুশি। কিন্তু রাজ্য সরকারের অধীন কোনও চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান এখনও ভ্যাকসিন পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত হতে পারল না, এটা দুর্ভাগ্যজনক। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে এ ধরনের গবেষণা করার মতো মেধা নেই তা তো নয়!’’

যদিও এই পর্যবেক্ষণের সঙ্গে একমত নন স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘আমরা কারও সঙ্গে কোনও প্রতিযোগিতার মধ্যে নেই। সম্মিলিত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে সরকারি প্রক্রিয়া নিজস্ব নিয়মে চলে। রাজ্যবাসীর নিরাপত্তা এবং স্বার্থ বিঘ্নিত যাতে না-হয় সেটা নিশ্চিত করাই হল আসল।’’ স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগম বলেন, ‘‘ভ্যাকসিন পরীক্ষার অনুমোদনের ক্ষেত্রে কোনও রকম প্রক্রিয়াগত দেরি হচ্ছে বলে মনে হয় না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement