চলছে বাড়িতে গিয়ে স্বাস্থ্যপরীক্ষা।—ছবি পিটিআই।
সঙ্কটজনক অবস্থায় থাকা স্বাস্থ্যকর্তা কেমন আছেন? গত কয়েক দিনে এই প্রশ্নের উত্তর চেয়ে একাধিক বার উদ্বিগ্ন হয়েছেন স্বাস্থ্য ভবনের সহকর্মীরা। সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোরে তাঁর কর্মস্থলেও ছিল একই ছবি। শেষ পর্যন্ত আশঙ্কাই সত্যি হল। ন’দিনের লড়াই শেষে রবিবার সকালে করোনা-আক্রান্ত স্বাস্থ্যকর্তার (৬০) মৃত্যু হয়েছে বলে জানাল রাজ্য সরকার। রাজ্যে এই প্রথম করোনা পজ়িটিভ কোনও চিকিৎসকের মৃত্যু হল।
পশ্চিমবঙ্গ হেল্থ সার্ভিসের সহকারী অধিকর্তার মৃত্যুতে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইট করে জানিয়েছেন, ‘মানবতার স্বার্থে তাঁর ত্যাগ চিরকাল আমাদের হৃদয়ে থাকবে। আমাদের কোভিড-যোদ্ধারা আরও দৃঢ় সংকল্পের সঙ্গে মারাত্মক ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করবেন।’
স্বাস্থ্যকর্তা যেখানে ভর্তি ছিলেন, এ দিন সল্টলেকের ওই বেসরকারি কোভিড হাসপাতালে গার্ডেনরিচের বাসিন্দা ৩৪ বছরের এক যুবকেরও মৃত্যু হয়েছে। তাঁর উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা ছিল। সল্টলেকের এইচসি ব্লকের বেসরকারি হাসপাতাল থেকে ওই যুবককে সংশ্লিষ্ট ওই কোভিড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানে আরও এক চিকিৎসক আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি রয়েছেন। তিনি মিন্টো পার্ক এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক। পার্ক স্ট্রিট এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালের এক মহিলা চিকিৎসকও প্রসূতি-যোগে সংক্রমিত। এ দিকে এইচসি ব্লকের হাসপাতালেও আরও চার জন করোনা রোগী রয়েছেন। তার মধ্যে দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক, জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন: ‘রিজার্ভ বেঞ্চ নেই! রোগী কে দেখবেন?’
রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের এ দিনের বুলেটিনে মৃতের সংখ্যা ১৮ থেকে বেড়ে হয়েছে ২০। অন্য কারণে মৃত্যুর সংখ্যা ৩৯-ই রয়েছে। স্বাস্থ্যকর্তা এবং গার্ডেনরিচের যুবকের মৃত্যুকে হিসেবে ধরেই মৃত্যু সংখ্যা ১৮ থেকে ২০ বলা হল কি না, সেটা অবশ্য স্পষ্ট নয়। মৃত স্বাস্থ্যকর্তা করোনা পজ়িটিভ হওয়ার পাশাপাশি হৃদ্রোগী ছিলেন। উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবিটিসের সমস্যাও ছিল। বেসরকারি হাসপাতাল সূত্রের খবর, অন্য অসুখ থাকায় স্বাস্থ্যকর্তার চিকিৎসা সংক্রান্ত নথিও রাজ্য সরকারের ‘ডেথ কমিটি’র কাছে পাঠানো হয়েছে। তাঁর স্ত্রীও করোনা পজ়িটিভ হয়ে চিকিৎসাধীন।
করোনা ধরা পড়ার পরে গত ১৭ এপ্রিল বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি হন স্বাস্থ্য দফতরের পদস্থ কর্তা। আইডি সূত্রের খবর, অল্প জ্বর, পাঁচ দিনের কাশি নিয়ে ভর্তি হলেও দ্রুত তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। ডান দিকের ফুসফুস ৫০ শতাংশ এবং বাম দিকের ফুসফুস ৪০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে সল্টলেকের হাসপাতালে স্থানান্তরিত করানো হয়। সেই থেকে সেখানেই ছিলেন মৃত স্বাস্থ্যকর্তা।
আরও পড়ুন: লকডাউন থেকে পরিযায়ী শ্রমিক, আজ মোদীর কথা মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে
সহকর্মীর অকালমৃত্যুতে চিকিৎসক সংগঠনগুলি এ দিন বিবৃতি প্রকাশ করেছে। সার্ভিস ডক্টর্স ফোরামের সম্পাদক সজল বিশ্বাস বলেন, ‘‘মৃত চিকিৎসক হাসপাতাল নয়, স্বাস্থ্য দফতরের অফিসে কাজ করতেন। তিনি কী ভাবে সংক্রমিত হলেন?’’ পূর্ণ মর্যাদায় মৃত চিকিৎসকের শেষকৃত্য সম্পন্ন করার দাবি জানিয়েছে চিকিৎসক সংগঠনগুলি। তাদের তরফে আজ, সকাল ১১টায় নিজ নিজ কর্মস্থলে দু’মিনিট নীরবতা পালনের ডাক দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের আক্রান্ত হওয়ার আরও খবর মিলেছে। স্ত্রীরোগ, মেডিসিনের পরে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের কার্ডিয়োথোরাসিক বিভাগের এক ইন্টার্ন হস্টেল-যোগে আইডি-তে ভর্তি। স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিনের জেবিসি ওয়ার্ডে কর্মরত এক মহিলা সহকর্মীর নাম আক্রান্তের তালিকায় রয়েছে। কাশীপুরের বাসিন্দা ৭৬ বছরের করোনা আক্রান্ত এক বৃদ্ধও এ দিন আইডি-তে ভর্তি হয়েছেন। এ ছাড়া করোনা আক্রান্ত সিসিইউ রোগীর সংস্পর্শে আসায় ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের আরও তিন জন ইন্টার্নকে কোয়রান্টিনে পাঠানো হয়েছে।
আরও পড়ুন: উপসর্গহীন আক্রান্তদের নিয়েই চিন্তা দেশজুড়ে
চিত্তরঞ্জন সেবাসদন হাসপাতালে এক প্রসূতির করোনা ধরা পড়ায় সেখানে পাঁচ জন চিকিৎসক, পাঁচ জন নার্স, চার জন সাফাইকর্মী, এক জন গ্রুপ ডি এবং এক জন ডোমকে কোয়রান্টিনে পাঠাতে হয়েছে। অধ্যক্ষ আশিস মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বেলতলা রোডের ওই মহিলাকে বৃহস্পতিবার ভর্তি করানো হয়। প্রসূতি মৃত সন্তানের জন্ম দেন। শনিবার রাতে তঁার রিপোর্ট পজ়িটিভ এসেছে। এক নার্স এবং ওয়ার্ড বয় সংক্রমিত হওয়ায় আপাতত ভর্তি বন্ধ চিৎপুরের মারোয়াড়ি রিলিফ সোসাইটিতে।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)