গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
রাজ্যে করোনা সংক্রমণের প্রবণতা একই রকম থাকলেও উদ্বেগ বাড়ছে প্রতিদিন মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে। রবিবারও সর্বোচ্চ মৃত্যু হল রাজ্যে। এই নিয়ে দু’দিন ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হল সবচেয়ে বেশি ৬১ জনের। তবে শনিবারের তুলনায় ২৪ ঘণ্টায় সংক্রমিতের সংখ্যা সামান্য কমেছে। অন্য দিকে রবিবার এই প্রথম সুস্থতার হার পৌঁছে গেল ৮৭ শতাংশে, যা করোনা-যুদ্ধে অনেকটাই স্বস্তি দিচ্ছে রাজ্য প্রশাসনকে।
রবিবার নিয়ে পর পর চার দিন ২৪ ঘণ্টায় নতুন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কমল। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের এ দিনের বুলেটিন অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ১৭৭ জন। শনিবার এই সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ১৮৮, শুক্রবার ৩ হাজার ১৯২ এবং বৃহস্পতিবার ৩ হাজার ১৯৭। প্রতিদিন খুব সামান্য কমলেও তাতে কিছুটা স্বস্তিতে রাখছে রাজ্যের প্রশাসনিক আধিকারিকদের। চিকিৎসক-বিশেষজ্ঞরাও কিছুটা আশাবাদী। যদিও এটাই যে চূড়ান্ত প্রবণতা, এমনটা মনে করার কারণ নেই বলেও সাবধান করে দিচ্ছেন তাঁরা। এই নিয়ে রাজ্যে মোট কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা হল ২ লক্ষ ২৫ হাজার ১৩৭ জন।
গত কয়েক দিন রাজ্যে মৃতের সংখ্যা ৬০-এর নীচেই ছিল। রবিবার ফের মৃত্যু হল ৬০-এর বেশি মানুষের। গত ১৬ সেপ্টেম্বরেও ৬১ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এটাই এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ মৃত্যু। শনিবার এই সংখ্যা ছিল ৫৬। এক দিনে লাফিয়ে পাঁচ জনের বেশি মৃত্যু উদ্বেগে রাখছে রাজ্য স্বাস্থ্য প্রশাসনকে। এই নিয়ে রাজ্যে এখনও পর্যন্ত কোভিডের বলি হলেন ৪ হাজার ৩৫৯ জন রোগী। রাজ্যের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে উত্তর ২৪ পরগনায়-১৬ জন। কলকাতায় মারা গিয়েছেন ১৫ জন।
আরও পড়ুন: রাজ্যসভায় রুল বুক ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ, অস্বীকার করলেন ডেরেক
তবে সুস্থতার হারে ক্রমাগত বৃদ্ধি করোনা জয়ের আশা বাড়াচ্ছে রাজ্য সরকারের। রবিবারের বুলেটিন অনুযায়ী গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন ২ হাজার ৯৫৮ জন কোভিড রোগী। এই নিয়ে রাজ্যে মোট সুস্থ হয়ে ওঠা করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১ লক্ষ ৯৫ হাজার ৯৭২। এই মুহূর্তে রাজ্যে সক্রিয় কোভিড আক্রান্ত রোগী রয়েছেন ২৪ হাজার ৮০৬ জন। রাজ্যে সুস্থতার হার ৮৭.০৫ শতাংশ। শনিবার এই হার ছিল ৮৬.৯৬ শতাংশ।
আরও পড়ুন: ড্রাগ কন্ট্রোলারের সবুজ সঙ্কেত, সস্তার কোভিড টেস্ট কিট ‘ফেলুদা’ আসছে বাজারে
সুস্থতার হার বৃদ্ধি এবং সংক্রমণের হারে কমতি— দু’টোই করোনার ক্ষেত্রে সদর্থক ইঙ্গিত। সেই সংক্রমণের হারও কমেছে। প্রতি দিন যত জন রোগীর কোভিড-টেস্ট করা হচ্ছে এবং তার মধ্যে প্রতি ১০০ জনে যত সংখ্যক রোগীর কোভিড-রিপোর্ট পজিটিভ আসছে, তাকেই বলা হয় পজিটিভিটি রেট বা সংক্রমণের হার। স্বাস্থ্য দফতরের রবিবারের বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে ৪৫ হাজার ৬৫৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। তাতে রাজ্যে এই মুহূর্তে সংক্রমণের হার ৬.৯৬ শতাংশ। শনিবার এই হার ছিল ৭ শতাংশ। সব মিলিয়ে এ রাজ্যে এখনও পর্যন্ত মোট কোভিড পরীক্ষা হয়েছে ২৭ লক্ষ ৪৪ হাজার ৮৬২ জনের।
প্রতিদিন নোভেল করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যায় বেশ কিছু দিন ধরেই কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগনা কাছাকাছি থাকছে। কখনও কলকাতায় বেশি, তো পরের দিন উত্তর ২৪ পরগনা ছাপিয়ে যাচ্ছে মহানগরীকে। রবিবারের বুলেটিন অনুযায়ী রাজ্যে ২৪ ঘণ্টায় কোভিড আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে শীর্ষে কলকাতা (৫১৪)। তার পরেই উত্তর ২৪ পরগনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫০৭ জন। তার পর পর্যায়ক্রমে রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা (২১৯), হাওড়া (২১৮), হুগলি (১৭০), পশ্চিম মেদিনীপুর (১৫৩), পশ্চিম বর্ধমান (১৩৪), পূর্ব মেদিনীপুর (১২১), নদিয়া (১০২), মুর্শিদাবাদ (১০১)-এর মতো জেলা।
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২)