ছবি: পিটিআই।
নতুন আক্রান্তের সংখ্যা বুধবারও তিনশোর ঘরে রইল। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে ৩৪০ জনের করোনা পজ়িটিভ ধরা পড়ায় রাজ্যে মোট আক্রান্তের সংখ্যা হল ৬৫০৮। সেই পরিসংখ্যানে দক্ষিণবঙ্গ তো বটেই উত্তরবঙ্গের ঘটনাক্রম নিয়েও শোরগোল পড়ে গেল।
দক্ষিণবঙ্গে চর্চার মূল বিষয়, নবান্নে দুই কর্তার গাড়িচালকের দেহে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব মেলার খবর এবং বারাসত হাসপাতালের এক নার্সের মৃত্যু। আর উত্তরবঙ্গে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে আচমকা একাধিক মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের বদলি। নবান্নের দুই কর্তার গাড়িচালক কোভিড পজ়িটিভ হওয়ায় এ দিন রাজ্য প্রশাসনিক কার্যালয়ের বেশ কিছু গাড়িচালকের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। আজ, বৃহস্পতিবার এবং কাল, শুক্রবার নবান্ন জীবাণুমুক্ত করা হবে বলেও খবর। আগামী ১০ জুন পর্যন্ত পরিযায়ী শ্রমিকেরা রাজ্যে ফিরবেন। এর পর যে সকল স্কুল এখন পরিযায়ী শ্রমিকদের ঠিকানা, তা-ও জীবাণুমুক্ত করা হবে।
করোনায় আক্রান্ত বারাসত হাসপাতালের সিস্টার-ইন-চার্জের আরজিকরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। মাঝবয়সি ওই নার্সকে মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেখানে তাঁর করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ এলে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিছু দিনের মধ্যে জ্বরের উপসর্গ নিয়ে ফের তিনি আরজিকর হাসপাতালে ভর্তি হন বলে স্বাস্থ্য ভবনের নার্সিং বিভাগ সূত্রে খবর। গত সোমবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়। আরজিকরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর যে করোনা পরীক্ষা হয়েছিল তা পজ়িটিভ ছিল। এই প্রথম রাজ্যের কোনও নার্স করোনার শিকার হলেন। চিকিৎসকদের নিয়মিত নজরদারি প্রয়োজন হওয়ায় করোনা আক্রান্ত দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুকে এ দিন গৃহ পর্যবেক্ষণ থেকে ই এম বাইপাস সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। পুলিশ ট্রেনিং স্কুলের আরও আট জনের দেহে এ দিন ভাইরাসের অস্তিত্ব মিলেছে।
আরও পড়ুন: করোনায় অভাব তীব্র, আড়াই মাসের শিশুকন্যা বিক্রির নালিশ ঘাটালে
আরও পড়ুন: পরিযায়ীকে দশ হাজার করে টাকা দিক কেন্দ্র: মমতা
এই পরিস্থিতিতে একযোগে একাধিক জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের (সিএমওএইচ) বদলি নিয়ে সরব হয়েছেন সরকারি চিকিৎসকদের একাংশ। আলিপুরদুয়ারের সিএমওএইচ পূরণ শর্মাকে বদলি করা হয়েছে পাস্তুর ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর পদে। পশ্চিম মেদিনীপুরের সিএমওএইচ গিরিশ বেরা গিয়েছেন আলিপুরদুয়ারে। কোচবিহারের সিএমওএইচ সুমিত গঙ্গোপাধ্যায়কে উত্তরকন্যায় এডিএইচএস পদে পাঠানো হয়েছে। তাঁর জায়গায় স্বাস্থ্য ভবনের এডিএইচএস (ট্রেনিং) রণজিৎ ঘোষকে কোচবিহারের দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছে।
স্বাস্থ্য দফতরের জনস্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, এখন প্রতি দিন আক্রান্তের সংখ্যায় দ্রুত বৃদ্ধি হচ্ছে। পরিযায়ী শ্রমিকেরা আসার পরে প্রতিটি জেলায় যখন সংক্রমণের হানা শুরু হয়েছে তখন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের এ ভাবে সরানোয় করোনা নিয়ন্ত্রণের কাজ ধাক্কা খাবে। অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টরসের সম্পাদক মানস গুমটা বলেন, ‘‘আলিপুরদুয়ার করোনা রোধে যে কাজ করেছে তার প্রশংসা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও করেছে। সঙ্কটের সময়ে সেই জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক-সহ বাকিদের বদলি বিস্ময়কর! দুর্ভাগ্যজনক সিদ্ধান্ত।’’
উত্তরবঙ্গে করোনা নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি চিকিৎসক সুশান্ত রায় বলেন, ‘‘বদলির বিষয়টি সম্পূর্ণ ভাবে সরকারি সিদ্ধান্ত। তা নিয়ে কিছু বলার নেই। আমাকে যে কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তা পালন করছি এবং করব। সরকার একটা সিস্টেমে চলে। ফলে বদলিতে সমস্যা হবে না।’’
এ দিন স্বস্তির খবর মিলেছে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে পোস্ট করোনা ক্লিনিক চালু হওয়ায়। প্রতি বুধবার রাজ্যের যে কোনও প্রান্তের করোনা রোগী সেখানে ফলো-আপের জন্য আসতে পারবেন। চিকিৎসক সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং যোগীরাজ রায় ক্লিনিকের দায়িত্বে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন অধ্যক্ষা অণিমা হালদার। তিনি জানান, হাসপাতাল থেকে সুস্থ হওয়ার পরে বাড়ি ফেরার পর করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসককে দেখানোর প্রয়োজন হতেই পারে। কিন্তু ভয়ভীতি-আশঙ্কার অনেকে সেই পরিষেবা থেকে নিজের এলাকায় বঞ্চিত হচ্ছিলেন। তার প্রেক্ষিতেই এই ক্লিনিক চালুর সিদ্ধান্ত।