—ফাইল চিত্র।
কোভিড বিধি শিকেয় তুলে যখনই জমায়েত বেড়েছে, তখনই নতুন করে প্রাণশক্তি পেয়েছে করোনাভাইরাস। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বার উৎসবের মরসুমে ভিড়ে রাশ টানতে রাজ্যগুলিকে পদক্ষেপের নির্দেশ দিল কেন্দ্র। ফলে গত বছরের মতো এ বছরেও পুজোয় বেরোনো যাবে না বাড়ির বাইরে। পশ্চিমবঙ্গ-সহ রাজ্যগুলিকে আজ চিঠি দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, আগত উৎসবগুলিতে (মহরম, ওনাম, জন্মাষ্টমী, গণেশ চতুর্থী ও দুর্গাপুজো) রাস্তায় যেন মানুষের ঢল না-নামে। তা নিশ্চিত করতে সব রাজ্যকে স্থানীয় স্তরে বিধিনিষেধ জারি করতে হবে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, স্বাস্থ্য মন্ত্রক আজ যে ভাবে অক্টোবর পর্যন্ত স্থানীয় স্তরে বিধিনিষেধের পক্ষে সওয়াল করেছে, তাতে নভেম্বরের মধ্যে রাজ্যে উপনির্বাচনগুলি সেরে ফেলা নিয়ে প্রশ্ন চিহ্ন উঠে গেল।
কেন্দ্র গত কালই জানিয়েছিল, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এখনও শেষ হয়নি। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নতুন করে বাড়ছে সংক্রমণের হার। এই পরিস্থিতিতে উৎসবের মতো ‘সুপার স্প্রেডার ইভেন্ট’ যাতে সংক্রমণে ইন্ধন না-জোগায়, তা নিশ্চিত করতে রাজ্যগুলিকে আজ নির্দেশ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ। প্রতিটি রাজ্যের মুখ্যসচিবকে লেখা চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন, সামনেই রয়েছে মহরম (১৯ অগস্ট), ওনাম (২১ অগস্ট), জন্মাষ্টমী (৩০ অগস্ট), গণেশ চতুর্থী (১০ সেপ্টেম্বর), দুর্গাপুজো (৫-১৫ অক্টোবর)। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ এবং ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল সংস্থার মতে, এ ধরনের উৎসবগুলি পুরোমাত্রায় ‘সুপার স্প্রেডার’ হয়ে উঠতে পারে। সে ক্ষেত্রে ফের করোনা সংক্রমণ দ্রুত গতিতে বাড়তে থাকবে। রাজ্যগুলিকে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিবের পরামর্শ, উৎসবের দিনগুলিতে যেন জমায়েত না-হয়, বিশেষ করে ভিড় যেন রাস্তায় নেমে না-আসে তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় স্তরে উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের যুক্তি, উৎসব আসবে-যাবে। কিন্তু দেশে যখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে এবং তৃতীয় ঢেউয়ের ভ্রুকূটি, তখন কোনও ভাবেই আর ঝুঁকি নেওয়া ঠিক নয়। গত বছর পশ্চিমবঙ্গে পুজোয় ভিড় রুখতে শেষ মুহূর্তে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল কলকাতা হাই কোর্টকে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, করোনার প্রথম ঢেউয়ের দাপট বেড়েছিল গত বছর উৎসবের মরসুমের পরে। এ বছর কুম্ভের জমায়েতের পরে এসেছে দ্বিতীয় ঢেউ। তাই জনসমাগম যেন করোনাভাইরাসের নতুন করে শক্তিবৃদ্ধিতে জলবাতাস না-জোগায় তা নিশ্চিত করতে এই কেন্দ্রীয় তৎপরতা।
পুজোয় বিধিনিষেধ জারির পরামর্শের পাশাপাশি, রাজ্যগুলিকে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান সংক্ষেপে করতে এবং সেই অনুষ্ঠানেও যাতে বিশেষ ভিড় না-হয়, সেই দিকে নজর দিতে বলেছে কেন্দ্র। ওই দিনের অনুষ্ঠানে চিকিৎসাকর্মী, সাফাইকর্মীদের মতো করোনা-যোদ্ধাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে তাঁদের কাজে উৎসাহিত করতে পরামর্শ দিয়েছে সরকার।
উৎসব নিয়ে রাজ্যগুলিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের আজকের নির্দেশ প্রশ্ন তুলে দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ-সহ রাজ্যগুলির উপনির্বাচন নিয়ে। পশ্চিমবঙ্গে একাধিক আসনে উপনির্বাচন বাকি। তাৎপর্যপূর্ণ হল, আগামী নভেম্বরের মধ্যে কোনও একটি আসন থেকে জিতে বিধানসভার সদস্য হতে হবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এই পরিস্থিতিতে আগামী অক্টোবর পর্যন্ত কেন্দ্রের ওই বিধিনিষেধ আজ নতুন করে চিন্তায় ফেলতে চলেছে তৃণমূল শিবিরকে।
দেশের অধিকাংশ রাজ্যের কোভিড-চিত্র যখন স্বস্তিদায়ক, তখন উদ্বেগ বাড়াচ্ছে কেরলের সংক্রমণ পরিস্থিতি। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের আজকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ৪২ হাজার ৬২৫ জন নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। পর পর ছ’দিন ৪০ হাজারের ঘরে দৈনিক সংক্রমণ থাকার পরে গত কাল তা ৩০ হাজারে নেমেছিল। আজ ১২ হাজার সংক্রমণ বৃদ্ধির পাশাপাশি, মৃত্যুর সংখ্যাও ৫০০-র গণ্ডি অতিক্রম করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে যত মানুষ সংক্রমিত হয়েছেন, তার অর্ধেকের বেশি কেরলের বাসিন্দা।