Coronavirus in west Bengal

অসহযোগিতার অভিযোগ, ফের রাজ্যকে জোড়া চিঠি কেন্দ্রীয় দলের

স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় কী কী খামতি তাঁদের চোখে পড়েছে, রাজ্যকে লেখা চিঠিতে এ দিন তা উঠে এসেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০২০ ১৬:১৭
Share:

বৃহস্পতিবার ডুমুরজলা কোয়রান্টিন সেন্টারে কেন্দ্রীয় দল। —নিজস্ব চিত্র।

তাদের খাওয়াদাওয়া থেকে ঘোরাফেরা, পিপিই-র জোগান থেকে সুরক্ষা— কেন্দ্রের কথা মতো সবটাই রাজ্যের ব্যবস্থা করার কথা। কিন্তু এর কোনওটাই তারা করছে না বলে অভিযোগ জানাল রাজ্যে করোনা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আসা কেন্দ্রীয় দল। শনিবার বিভিন্ন অভিযোগ, পর্যবেক্ষণ ও প্রশ্নের সঙ্গে এ কথা জুড়ে দিয়ে রাজ্যকে ফের জোড়া চিঠি দিল তারা। দায়িত্ব পালন না করে অসহযোগিতা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ জানানো হয়েছে।

Advertisement

একাধিক বিষয় নিয়ে এর আগে শুক্রবারও রাজ্যকে দু’টি চিঠি লিখেছিলেন কলকাতায় আসা কেন্দ্রীয় দলটির প্রধান অপূর্ব চন্দ্র। শুক্রবার ফের মুখ্যসচিব রাজীব সিংহকে দু’টি চিঠি লেখেন তিনি। তাতে শুরুতেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পরামর্শের কথা মনে করিয়ে দেন অপূর্ব চন্দ্র। এর পর তিনি লেখেন, ‘‘২০ এপ্রিল সকাল ১০টায় থেকে এখনও পর্যন্ত রাজ্য সরকারকে চারটি চিঠি লিখেছে কেন্দ্রীয় দল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত একটিরও জবাব আসেনি। রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নিয়ে ২৩ এপ্রিল যে প্রেজেন্টেশন দেখানো হয়েছিল তাঁদের, তার হার্ডকপিও এসে পৌঁছয়নি।’’

করোনা পরিদর্শনে কোথায় কোথায় যেতে চান, তার একটি সম্ভাব্য তালিকা আগেই রাজ্য সরকারের হাতে তুলে দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকরা। সে ব্যাপারেও রাজ্য সরকার উদাসীন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। চিঠিতে অপূর্ব চন্দ্র লিখেছেন, ‘‘আগে থেকে তালিকা জমা দেওয়া সত্ত্বেও কোথাও বেরনোর আধ ঘণ্টা আগে কেন্দ্রীয় দলকে জানানো হয়। এখনও পর্যন্ত চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউট, বাঙুর হাসপাতাল, ডুমুরজলা কোয়রান্টিন সেন্টার, উলুবেড়িয়ার সঞ্জীবন হাসপাতাল এবং সালকিয়ার সংক্রমিত এলাকাতেই নিয়ে গিয়েছে রাজ্য সরকার।’’

Advertisement

সম্প্রতি রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ জানিয়েছিলেন, তাঁরা কেন্দ্রীয় দল ডাকেননি। ফলে ওঁরা থাকবেন, নাকি চলে যাবেন সেটা ওঁদের ব্যাপার। তাঁদের আর কিছু বলার বা দেখানোর নেই। সে প্রসঙ্গও উঠে এসেছে চিঠিতে। বলা হয়েছে, ‘‘মুখ্যসচিব বলেছেন, কেন্দ্রীয় দল যেখানে ইচ্ছা যেতে পারে। কিন্তু স্বাস্থ্য দফতরের অভিজ্ঞ আধিকারিকরা তাঁদের সঙ্গে সময় নষ্ট করতে পারেন না। এটা কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশিকার পরিপন্থী। পরিস্থিতি পরিদর্শনে যাওয়ার সময় কেন্দ্রীয় দলকে সব রকম ভাবে সাহায্য করা উচিত রাজ্যের।’’

আরও পড়ুন: দেশে ৯৬ শতাংশ পরিযায়ী শ্রমিকই রেশন পাচ্ছেন না, বলছে সমীক্ষা​

কেন্দ্রীয় দল নিজেদের ইচ্ছামতো পরিস্থিতি পরিদর্শনে বেরোলে পুলিশের অনুপস্থিতিতে রাজ্য সরকার কি কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকদের নিরাপত্তার দায় নেবে? পুলিশ না থাকলে যদি কোনও সমস্যা দেখা দেয়, সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকদের নিরাপত্তার স্বার্থে বিএসএফ কি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে পারবে? রাজ্য সরকারকে লেখা চিঠিতে এমন প্রশ্নও তোলেন অপূর্ব চন্দ্র। রাজ্য সরকারের অনুমতি ছাড়া লকডাউনে তাঁদের বিএসএফ গেস্ট হাউসের বাইরে পা রাখার অনুমতি নেই, আর বেরলে শুধুমাত্র বিমানবন্দর যাওয়ার অনুমতি রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। করোনা পরিদর্শনে যাওয়ার সময় স্বাস্থ্যবিভাগের অধস্তন আধিকারিকদেরই তাঁদের সঙ্গে পাঠানো হচ্ছে বলেও দাবি করেন অপূর্ব চন্দ্র।

শুক্রবার বিকালে হাওড়ার ডুমুরজলা স্টেডিয়াম কোয়রান্টিন সেন্টার, উলুবেড়িয়ার সঞ্জীবন হাসপাতাল এবং সালকিয়ার সংক্রমিত এলাকা পরিদর্শন করেন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকরা। সেখানে চরম অব্যবস্থা চোখে পড়েছে বলে এ দিন অভিযোগ করেন অপূর্ব চন্দ্র। রাজীব সিংহকে লেখা দ্বিতীয় চিঠিতে তিনি লেখেন, ‘‘ডুমুরজলা কোয়রান্টিন সেন্টারে যেখানে ১১৮ জন থাকতে পারেন, সেখানে এই মুহূর্তে ৮০ জন রয়েছেন। সেখানে পৌঁছনোর সাত দিন পর তাঁদের পরীক্ষা শুরু হয়। তারও দু’-তিন দিন পর রিপোর্ট এসে পৌঁছয়। সেখানে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা নিয়ে কেউই কোনও অভিযোগ করেননি। কিন্তু ছোট গাড়িতে গাদাগাদি করে তাঁদের পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানিয়েছেন কয়েক জন। রাজ্য সরকার মোবাইল নিয়ে নেওয়ায় বাড়ির লোকের খবর নিতে পাচ্ছেন না অনেকে। পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ আসা সত্ত্বেও এক ব্যক্তিকে সেখানে থেকে দু’সপ্তাহ পর মুক্তি পান। এত দিন ওখানে থাকতে থাকতেও সংক্রমণ হতে পারত তাঁর।’’

আরও পড়ুন: ‘হে পরবাসী বাঙালি সমালোচকগণ, যেখানে থাকেন তার কী হাল?’​

সঞ্জীবন হাসাপাতালে কোনও অনিয়ম চোখে না পড়লেও, হাসপাতালে কর্মী সংখ্যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অপূর্ব চন্দ্র। তিনি লেখেন, ‘‘৩২০ বেডের সঞ্জীবন হাসপাতালে এই মুহূর্তে ৭০ জন কোভিড রোগী রয়েছেন। যাঁরা তাঁদের চিকিৎসা করছেন তাঁরা প্রত্যেকেই পিপিই পরে চার ঘণ্টা করে ডিউটি করছেন। ওই ভাবে একটানা ১৪ দিন কাজ করার পর তাঁদের বিশ্রাম দেওয়া হচ্ছে। আনা হচ্ছে আর একটি দলকে। এতে একধাক্কায় হাসপাতালের কর্মীসংখ্যা চারভাগের এক ভাগে এসে ঠেকেছে। তাই ৩২০টি বেড থাকলেও আর রোগী ভর্তি নেওয়ার ক্ষমতা নেই ওই হাসপাতালের।’’ সালকিয়াতে লকডাউন আঁটোসাঁটো হলেও, সেখানে জেলাস্তরের কোনও আধিকারিকের সঙ্গে তাঁদের দেখা হয়নি বলে জানান তিনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement