বৃহস্পতিবার ডুমুরজলা কোয়রান্টিন সেন্টারে কেন্দ্রীয় দল। —নিজস্ব চিত্র।
শনিবার ফের পত্রাঘাত!
শুক্রবারের পর শনিবারও রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিংহকে দু’টি চিঠি পাঠালেন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক দলের নেতা অপূর্ব চন্দ্র। একটিতে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে, অন্যটিতে গত ২৪ এপ্রিল হাওড়ার ডুমুরজলা স্টেডিয়ামের কোয়রান্টিন সেন্টার, সঞ্জীবনী হাসপাতাল এবং সালকিয়া কন্টেনমেন্ট জ়োন দেখার অভিজ্ঞতার কথা জানানো হয়েছে। মুখ্যসচিবের লিখিত জবাব চেয়ে অপূর্ব জানিয়েছেন, কোনও চিঠির উত্তর রাজ্য সরকার এখনও দেয়নি। জবাব পেলে তাঁরা পরবর্তী পদক্ষেপ করবেন। তবে এ দিন রাত পর্যন্ত রাজ্য লিখিত জবাব দেয়নি।
শিলিগুড়িতে আর একটি দলের নেতা বিনীত জোশীও মুখ্যসচিবকে চিঠি দিয়ে দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি নিয়ে একগুচ্ছ তথ্য চেয়েছেন। স্বাস্থ্য দফতর তার জবাব তৈরি করছে বলে নবান্ন সূত্রের খবর।
একটি সরকারি সূত্রের দাবি, শুক্রবার মুখ্যসচিব কলকাতায় আসা কেন্দ্রীয় দলের নেতাকে ফোনে জানিয়েছিলেন, চাইলে যে কোনও জায়গায় যেতে পারেন তাঁরা। যদিও আর একটি সূত্রের দাবি, শনিবার সকালে কয়েকটি জায়গায় যাওয়ার ব্যাপারে মনস্থির করলেও, রাজ্যের ‘সহযোগিতা না-পেয়ে’ কলকাতার কেন্দ্রীয় দলটি আর বেরোয়নি। এর পরেই নিজেদের মতো রাজ্যে ঘুরলে তাঁদের নিরাপত্তার কী হবে, সেই প্রশ্ন তুলে চিঠি দিয়েছেন অপূর্ব। আজ, রবিবারও কলকাতার দলটি বাইরে বেরোবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে শিলিগুড়ির দলটি এ দিন বেশ কয়েকটি জায়গায় যায়।
আরও পড়ুন: লকডাউনেও কি পিকে সক্রিয় রাজ্যে
এ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক চাপানউতোরও অব্যাহত। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘কেন্দ্রীয় দল কি আলাদা করে কিছু করতে চাইছে? রাজ্যের রিপোর্ট, তথ্যের ভিত্তিতেই তো তাদের কাজ করতে হবে। রাজ্য প্রশাসনের সহযোগিতা ছাড়া কি তা সম্ভব? শুরু থেকেই সংঘাতের মনোভাব নিয়ে কেন্দ্র দল পাঠিয়েছে। তাতে মূল কাজে ব্যাঘাত ঘটছে।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, ‘‘রাজ্য আগেই ধরে নিয়েছে, কেন্দ্রীয় দল রাজনীতি করতে এসেছে। অন্য যে সব রাজ্যে কেন্দ্রীয় দল গিয়েছে, তারা তো এ সব বলছে না। রাজনীতি করছে নবান্ন। কেন্দ্রীয় দলকে তথ্য দিতে অনীহা কেন?’’
কেন্দ্রীয় দলের নেতা শনিবার চিঠিতে লিখেছেন— মুখ্যসচিব সাংবাদিকদের বার বার জানাচ্ছেন কেন্দ্রীয় দল চাইলে যে কোনও জায়গায় যেতে পারেন। করোনা মোকাবিলার সময়ে তাঁদের সঙ্গে গিয়ে কোনও সিনিয়র স্বাস্থ্যকর্তার নষ্ট করার মতো সময় নেই। যদিও তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশিকা অনুযায়ী, এমন বক্তব্য কেন্দ্রীয় নির্দেশ অমান্যের শামিল। কেন্দ্রীয় দলের পরিদর্শনের যাবতীয় বন্দোবস্ত করারদায়িত্ব রাজ্যের।
অপূর্ব চন্দ্র মুখ্যসচিবকে লিখেছেন, ‘পুলিশ এসকর্ট না-পেলে রাস্তাঘাটে কেন্দ্রীয় দলের সুরক্ষার দায়িত্ব রাজ্য নিচ্ছে তো? পরিদর্শনের সময়ে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হলে কেন্দ্রীয় দলের সঙ্গে থাকা বিএসএফ ব্যবস্থা নিতে পারবে তো? কেন্দ্রীয় দল বেরোলে পিপিই কি রাজ্য সরকার দিতে পারবে?’ তিনি চিঠিতে এ-ও জানতে চান, ২১ এপ্রিল সকালে কলকাতা পুলিশের কোনও ডিসিকে বিএসএফ অতিথিশালায় পাঠিয়ে কি বলানো হয়েছিল যে, কেন্দ্রীয় দল রাজ্যের অনুমতি ছাড়া বেরোতে পারবে না? শুধু বিমানবন্দরে যেতে চাইলে কলকাতা পুলিশ এসকর্ট করে দেবে? চিঠিতে এ-ও লেখা হয়েছে, ২৪ এপ্রিলের পরিদর্শনের সময় জুনিয়র অফিসারই তাঁদের সঙ্গে ছিলেন। তবে পর্যবেক্ষক দল কোথাও গেলে চিকিৎসক ও তথ্য দিতে পারবেন, এমন কেউ থাকা দরকার বলে উল্লেখ করেছেন অপূর্ব।
আরও পড়ুন: ‘প্রচেষ্টা’-চিঠি মুখ্যমন্ত্রীকে
বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তি এবং নিজামুদ্দিন ফেরতদেরও বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে কেন্দ্রীয় দল। সূত্রের খবর, শনিবার রাজারহাট হজ হাউস থেকে ১০৬ জন নিজামুদ্দিন ফেরত তবলিগ প্রতিনিধিকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। কারণ, তাঁদের ১৪ দিনের কোয়রান্টিনের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে।
কেন্দ্রীয় দলের অন্য চিঠিতে পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা জানিয়ে বলা হয়েছে, ডুমুরজলা স্টেডিয়ামে এখন আছেন ৮০ জন। সাত দিন থাকার পর অধিকাংশের লালারসের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে, আরও তিন দিন পর রিপোর্ট এসেছে। তবে স্টেডিয়ামে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা নিয়ে অসন্তোষ নেই বলে মুখ্যসচিবকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে। সঞ্জীবনী হাসপাতালে স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যার দিকে নজর দিতে বলেছে কেন্দ্রীয় দল। সালকিয়ায় লকডাউন কঠোর ভাবে পালিত হলেও ভিতরে নজরদারি কতটা চলছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে দল। অন্য দিকে, রেশনের খাদ্য সামগ্রী কী ভাবে পৌঁছচ্ছে, তা জানতে চেয়ে খাদ্য কর্তাদের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছেন।