সেই কিট।
ভাইরাসের মিউটেশন বা ভোলবদল নতুন নয়। কিন্তু নোভেল করোনাভাইরাস নিজেকে বদলে ফেলেও যাতে ফাঁকি দিতে না-পারে, তেমনই এক ‘কিট’ তৈরি করেছেন এক দল বাঙালি বিজ্ঞানী। সম্পূর্ণ দেশীয় সরঞ্জাম দিয়ে তৈরি জোড়া ‘প্রাইমার’ বা ছাঁকনির সেই কিট করোনা পরীক্ষার জন্য ইন্ডিয়ান কাউন্সির ফর মেডিক্যাল রিসার্চ বা আইসিএমআরের ছাড়পত্র পেয়েছে। দ্রুত পরীক্ষায় সক্ষম ওই কিটের দাম মাত্র ৫০০ টাকা।
রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রাথমিক ভাবে ‘ফোর প্রাইমার’ বা চার ছাঁকনি-যুক্ত কিট তৈরি করেছিলেন ওই বিজ্ঞানীরা। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এবং আইসিএমআর করোনা পরীক্ষার জন্য এখনই সেটিকে স্বীকৃতি দিচ্ছে না। তাই ছাঁকনির সংখ্যা দুইয়ে নামিয়ে করোনা পরীক্ষার কিট তৈরি করেছেন ওই বিজ্ঞানীরা। করোনা নির্ণয়ে সেটিই আইসিএমআরের সবুজ সঙ্কেত পেয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, করোনা মোকাবিলায় ওই কিট দু’দিক থেকে উপযোগী হবে। প্রথমত, বিশ্ব জুড়ে নিধনলীলা চালালেও করোনা এখনও নিজেকে রহস্যের কুয়াশায় ঢেকে রেখেছে। তার ভোলবদলেও তাই গভীরতর রহস্যের ইঙ্গিত থাকছে। কিন্তু সে মেঘের আড়াল থেকে যতই আঘাত হানুক, এই কিট তার জারিজুরি ভেদ করতে পারবে। দ্বিতীয়ত, করোনা পরীক্ষার কিট নিয়ে লাগাতার যে-টানাপড়েন চলছে, এই কিট তারও সুরাহা করতে পারবে।
কিটটি তৈরি করেছেন রাজ্যের একটি বেসরকারি সংস্থার বিজ্ঞানীরা। তবে তাতে যুক্ত ছিলে কেন্দ্রীয় সরকারের কাউন্সিল ফর সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চের বিশিষ্ট বিজ্ঞানী সমিত আঢ্য এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি বিভাগের প্রধান কৌস্তুভ পণ্ডাও। কৌস্তুভবাবু জানান, চার প্রাইমার-যুক্ত কিটটি বর্তমানে রোগ নির্ণয়ের কাজে না-লাগলেও সেটি ভাইরাসের চরিত্র বুঝতে গবেষণাগারে ব্যবহার করা যেতে পারে। করোনাভাইরাস যে-হেতু মিউটেট করবে বা রূপ বদলাবে, তাই গবেষণায় এই কিট উপযোগী হবে।
আরও পড়ুন: হাজার ছাড়াল বঙ্গের সক্রিয় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা, মৃত ৭২
সমিতবাবু বলেন, ‘‘চার প্রাইমারের কিটে পরীক্ষা হত দু’ধাপে। সময়ও বেশি লাগত। কিন্তু এই ভাইরাসের মিউটেশনের থেকে দ্রুত রোগ নির্ণয় করাটাই এখন মূল কথা। দুই ছাঁকনির কিটটি দ্রুত এবং এক ধাপেই পরীক্ষা সেরে ফেলতে পারে। তাই করোনা মোকাবিলায় সেটি অনেক বেশি উপযোগী।’’ জোড়া ছাঁকনির কিটটি করোনা পরীক্ষার নিয়মবিধির সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে জানান সমিতবাবু।
ওই বেসরকারি সংস্থা জানিয়েছে, আইসিএমআর স্বীকৃত কিটটির দাম ৫০০ টাকা। এত সস্তায় দেশে আর কোথাও কিট মিলছে না। এতে পরীক্ষার খরচ অনেক কমবে। স্বীকৃতি পাওয়ার পরে বিভিন্ন রাজ্য সেই কিট কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সংস্থার বিজ্ঞানী জয়দীপ মিত্রের দাবি, ‘‘এই কিটের মাধ্যমে মাত্র ৯০ মিনিটে পরীক্ষার ফল জানা যায়। সদ্য সংক্রমিত ব্যক্তির শরীরেও ভাইরাসের উপস্থিতি নির্ধারণ করা সম্ভব।’’
আরও পড়ুন: দীর্ঘ নিভৃতবাস শেষে জুটল থালাভরা ভাত
কৌস্তুভবাবু জানাচ্ছেন, দেশের অন্যান্য সংস্থা বিদেশ থেকে আমদানি করা সরঞ্জাম দিয়ে কিট তৈরি করেছে। তাতে দাম যেমন বেশি পড়ছে, তেমনই কিটের উৎপাদন নির্ভর করছে আমদানির পরিমাণের উপরে। কিন্তু দেশীয় সরঞ্জামে তৈরি হওয়ায় এই কিটের দাম কম, উৎপাদনও পরনির্ভর নয়। এই কিট তৈরির জন্য তিনি কৃতিত্ব দিচ্ছেন জয়দীপ মিত্র, গৈরিক মুখোপাধ্যায়, পিনাকী চট্টোপাধ্যায়, অভিজিৎ ঘোষ, মহম্মদ নাজিম খানের মতো ওই সংস্থার বিজ্ঞানীদের। যাঁরা সংস্থার ক্যাম্পাসে থেকে দিনরাত পরিশ্রম করে এই কিট তৈরি করেছেন। আদ্যন্ত বাঙালি-নির্ভর এই সংস্থার সূচনা রাজ্য সরকারের বায়োটেকনোলজি পার্ক থেকে। অঙ্কুর অবস্থা থেকে বড় হয়ে বাকরাহাটে নিজস্ব ক্যাম্পাস তৈরি করেছে তারা।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)