সতর্কতা: বেলেঘাটা আইডি-র পাশ দিয়ে বাচ্চা কোলে যাচ্ছেন স্থানীয় এক মহিলা। রবিবার। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
অভিভাবকদের হাতে স্কুল থেকে মিড-ডে মিলের দু’কেজি চাল এবং দু’কেলো আলু তুলে দেওয়ার কাজ শেষ করতে হবে আজ, সোমবার বেলা ৩টের মধ্যে। স্কুলগুলিকে রবিবার এমনই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর। ওই দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘সোমবার ৫টায় ‘লকডাউন’ বা তালাবন্দিদশা শুরু হওয়ার আগেই এই চাল-আলু বণ্টনের কাজ করতে হবে। অভিভাবকদের স্কুলে গিয়ে চাল ও আলু নিয়ে যেতে বলা হচ্ছে।’’
করোনা পরিস্থিতির মধ্যে মিড-ডে মিলের চাল-আলু বিলির নির্দেশ নিয়ে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছিল শিক্ষকদের একাংশের মধ্যে। অনেকের অভিযোগ ছিল, রবিবার জনতা কার্ফুর মধ্যে স্কুল খোলা রেখে কী ভাবে আলু-চাল বিলি করা সম্ভব? যানবাহনই তো নেই। শিক্ষক-শিক্ষিকারা আসবেন কী করে?
শিক্ষকদের আশঙ্কা যে মিথ্যা নয়, কলকাতার কয়েকটি স্কুলে ঘুরেই সেটা বোঝা গেল। হিন্দু স্কুলে বেলা ২টোর পরে অভিভাবকদের মধ্যে চাল-আলু বিলির ব্যবস্থা করেছেন প্রধান শিক্ষক শুভ্রজিৎ দত্ত। কিন্তু অন্য কয়েকটি স্কুল ঘুরে দেখা গেল, গেটে তালা দেওয়া। ওই সব স্কুলের প্রধান শিক্ষকেরা জানান, রবিবারের জনতা কার্ফুর মধ্যে কেউ আসতে পারেননি। তবে তাঁরা সমস্ত ব্যবস্থা করে রেখেছেন। শনিবার কিছু বিলি হয়েছে। সোমবার সকাল থেকে আবার বিলি করা হবে।
আরও পড়ুন: এনআরএসে গড়া হচ্ছে ৩০০ জনের চিকিৎসার পরিকাঠামো
রবিবার দুপুরে ফের সরকার থেকে নতুন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানানো হয়, সোমবার বিকেল ৫টার পর থেকে রাজ্য তালাবন্দি হয়ে যাবে। তার পরে শিক্ষকদের একাংশ ফের প্রশ্ন তোলেন, লকডাউন হয়ে গেলে সোমবার শিক্ষকেরা কী ভাবে স্কুলে যাবেন? অনেক শিক্ষক দূরে থাকেন। বেলা ৩টে পর্যন্ত স্কুলে চাল-আলু বিতরণ করে গাড়ি না-পেলে তাঁদের বাড়ি ফিরতে সমস্যা হতে পারে। যাঁরা ট্রেনে করে স্কুলে আসেন, তাঁরা ট্রেন পাবেন না। কারণ রবিবার রাত ১২টার পর থেকেই সব ধরনের ট্রেন পরিষেবা বন্ধ। এই সব কথা বিবেচনা করে মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি, বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি-সহ বেশ কয়েকটি শিক্ষক সংগঠন সোমবার থেকে চাল-আলু বিতরণ বন্ধ রাখার আবেদন জানিয়েছে।
অনেক স্কুল বস্তা বস্তা চাল-আলু কিনে রেখেছে। বিলিবণ্টন বন্ধ হয়ে গেলে আলু পচে যেতে পারে। তবে শিক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, আলু পচে যাচ্ছে কি না, এই আশঙ্কায় না-ভুগে করোনা-পরিস্থিতির কথা ভেবে স্কুল থেকে চাল-আলু বণ্টন বন্ধ করে দেওয়াই শ্রেয়। যদিও স্কুলশিক্ষা দফতরের সূত্রের খবর, সোমবারের মধ্যে সব চাল-আলু বিলি না-হলেও কয়েক দিন পরে, লকডাউন উঠে গেলে তা বণ্টন করা যেতে পারে। সুতরাং আলু পচে যাওয়ার প্রশ্ন নেই।
বেশির ভাগ জেলাতেই এ দিন স্কুল থেকে চালু-আলু বিলি করা যায়নি। প্রায় কোনও স্কুলেই চাল-আলু বিলি হয়নি পশ্চিম মেদিনীপুরে। ঝাড়গ্রামেও নয়। ঝাড়গ্রামের জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক শুভাশিস মিত্র জানান, শনিবার জেলার কিছু স্কুলে অভিভাবকদের চাল-আলু দেওয়া হয়েছে। সোমবার বাকি সব স্কুলে তা বিলি করা হবে। মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন স্কুলে অবশ্য জনতা কার্ফুর মধ্যেই চাল-আলু নিতে সকাল থেকেই ভিড় করেন অভিভাবকেরা। তবে অধিকাংশ স্কুলে আলু না-পৌঁছনোয় তা বিলি করা যায়নি। কোথাও অভিভাবকদের ফোন করে, কোথাও মাইকে ঘোষণা করে তা জানানো হয়।
পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়া, বীরভূমের বেশ কিছু স্কুলে অবশ্য এ দিন চাল-আলু বিলি হয়েছে। দুর্গাপুর উত্তর চক্রের বাঙ্গুরি অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অভিভাবকদের বদলে পড়ুয়াদের হাতে সামগ্রী দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। স্কুল পরিদর্শক (দুর্গাপুর উত্তর চক্র) সুধাংশুশেখর চক্রবর্তী জানান, অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সোমবার বেলা ৩টের মধ্যে সব চাল-আলু বিতরণ নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। হাওড়ার জেলা স্কুল পরিদর্শক শান্তনু সিংহ বলেন, ‘‘সোমবার থেকে লকডাউনের সিদ্ধান্ত হওয়ায় আমরা বিপাকে পড়েছি। কী করণীয়, তা শিক্ষা দফতরের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে।’’ ভিড় এড়িয়ে কী ভাবে এই নির্দেশ পালন হবে, উঠছে সেই প্রশ্নও। এবিটিএ-র বাঁকুড়া জেলা সহ-সম্পাদক আশিস পান্ডে বলেন, ‘‘চাল-আলু বিলি করতে ভিড়ের সম্মুখীন হতে হবে। কী ভাবে তা এড়াব?’’ পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি গৌতম দাস বলেন, ‘‘জরুরি পরিষেবা বন্ধ করা যায় না। সতর্কতা নিয়েই বিলি করতে হবে।’’