ছবি: সংগৃহীত।
রাজ্যে করোনার সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়া আটকানোর লক্ষ্যে আংশিক লক-ডাউনের ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার। মানুষের জীবন রক্ষার্থে এই বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থার বিরোধিতা করছে না কোনও রাজনৈতিক দলই। তবে বিপন্ন সাধারণ মানুষ ও অসংগঠিত শ্রমিকদের স্বার্থে কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি আজ, সোমবার সর্বদল বৈঠকে তুলতে চায় তারা। রাজ্য সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার সুর বজায় রাখার পাশাপাশিই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন প্রশ্ন তুলছে করোনা পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা নিয়ে।
নবান্নে আজ বিকালে করোনা-প্রশ্নে সর্বদল বৈঠক ডেকেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সময়ে কলকাতা-সহ কয়েকটি জেলায় এবং বিভিন্ন পুর-এলাকায় লক-ডাউন চালু হবে। পরিস্থিতির প্রয়োজনেই যে লক-ডাউনের পথে সরকারকে যেতে হচ্ছে, তা নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই বিরোধী বাম, কংগ্রেস ও বিজেপি নেতৃত্বের। তবে বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্বের দাবি, এর ফলে যে অংশের মানুষ কাজে যেতে না পেরে উপার্জনহীন হয়ে পড়বেন, তাঁদের জন্য আর্থিক প্যাকেজের দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে। তাঁদের বক্তব্য, এই বিষয়ে কেন্দ্রের ভূমিকা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অথচ এখনও পর্যন্ত ট্রেন বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা ছাড়া কেন্দ্রের তরফে তেমন কোনও নির্দিষ্ট পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না!
শাসক দল তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সী ও মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র ও বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী, কংগ্রেসের তরফে বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান ও সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য, বিজেপির তরফে জয়প্রকাশ মজুমদার ও সায়ন্তন বসুর আজ সর্বদল বৈঠকে যাওয়ার কথা। পার্থবাবু রবিবার বলেন, ‘‘পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজ্য সরকার পদক্ষেপ করছে। সর্বদল বৈঠকে বিরোধীরা তাঁদের বক্তব্য জানাবেন। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন, সকলের বক্তব্য শুনে তিনি নিশ্চয়ই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন।’’ বৈঠকের আগে সিপিএমের তরফে বিবৃতি দিয়ে রাজ্য সম্পাদক সূর্যবাবুও রোগের সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক মেলামেশা এড়িয়ে সরকার ও চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। যে কোনও প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য কলকাতা সিপিএমের তরফে কিছু ফোন নম্বরও দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: অতিসক্রিয়! রয়েছেন আবু ধাবিতে, মহিলাকে খুঁজতে ফ্ল্যাটে হানা পুর স্বাস্থ্য কর্মীদের
লক-ডাউনের প্রয়োজনীয়তা মেনে নিয়েই বাম পরিষদীয় নেতা সুজনবাবুর বক্তব্য, ‘‘এর সঙ্গে সঙ্গেই ঠিকমতো নজরদারি, খাদ্য ও জরুরি পণ্য প্রয়োজনে প্যাকেটে সরবরাহ, দৈনিক উপার্জনকারী ও অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত অংশের জন্য আর্থিক প্যাকেজের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী চাইলে কেরলের থেকে শিখতে পারেন!’’ কংগ্রেসের প্রদীপবাবুও বলছেন, ‘‘লক-ডাউনের মধ্যেও অন্তত কিছু সময় উপার্জনের সুযোগ খেটে খাওয়া মানুষকে দিতে হবে। সেটা একান্তই অসম্ভব হলে তাঁদের জন্য আর্থিক সাহায্যের ব্যবস্থা করতে মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করব।’’ তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলও বলেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর শুধু ভাষণ দিলে হবে না, রেশনের ব্যবস্থাও করতে হবে!’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, ‘‘মানুষের প্রাণ বাঁচাতে লক-ডাউন করতে হলে হবে।’’
আরএসপি-র মনোজ ভট্টাচার্য, ইউটিইউসি-র অশোক ঘোষ, এআইইউটিইউসি-র অশোক দাসেরাও দাবি করেছেন, গরিব মানুষ ও অসংগঠিত শ্রমিকের জন্য স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং আর্থিক সহায়তা চাই। এই বিষয়ে কেন্দ্রের কাছেও নির্দিষ্ট আশ্বাস চান তাঁরা। আরওয়াইএফের রাজ্য সম্পাদক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিনই প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি পাঠিয়ে দাবি করেছেন, এই পরিস্থিতিতে কর্মী সঙ্কোচন যাতে কোথাও না হয়, তা নিশ্চিত করে ছোট ও মাঝারি সংস্থাগুলিকে সহায়তা দিক কেন্দ্র।