নবান্নে সংবাদিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই
রাজ্যের সঙ্গে পরিকল্পনা ছাড়াই ভিন্ রাজ্য থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে ট্রেন এলে বাংলার করোনা-পরিস্থিতি বিগড়ে যেতে পারে।এমনটাই আশঙ্কা প্রকাশ করে বুধবার নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘূর্ণিঝড় আমপান (প্রকৃত উচ্চারণে উম পুন)-এর তাণ্ডবের পর রাজ্যের দুর্যোগ-পরবর্তী পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ঝুঝছে মমতা সরকার। এর মধ্যে পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরানো নিয়ে রেল মন্ত্রক তথা কেন্দ্রীয় সরকারের দূরদর্শিতারঅভাব রয়েছে বলেও সরব হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।রেলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের হস্তক্ষেপও দাবি করেছেন তিনি। মমতার প্রশ্ন, রাজ্যের করোনা-পরিস্থিতি বিগড়োলে তার দায় কে নেবে?
বুধবার নবান্নে জেলাশাসকদের নিয়ে ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকের ফাঁকে সাংবাদিকদের মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে রাজ্যে আরও ৩৬টি শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন আসছে।তাঁর কথায়, ‘‘রাজ্য সরকার কোভিড-১৯ অতিমারির পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড় আমপানের তাণ্ডবের সঙ্গে লড়ছে। এর মধ্যে রেল নিজেদের ইচ্ছেমতো রাজ্যে শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন পাঠাচ্ছে। আমাদের জানানোর প্রয়োজন মনে করছে না।’’মমতার কথায়, ‘‘ভিন্রাজ্য থেকে যাঁরাই আসছেন, তাঁদের অধিকাংশই করোনা-সংক্রমিত।’’ আমপানের মোকাবিলায় লড়াইয়ের মাঝেই লক্ষ লক্ষ শ্রমিক একসঙ্গে এ রাজ্যে এলে কী ভাবে এত কোভিড টেস্ট করা সম্ভব, তা নিয়েও চিন্তার কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। গোটা পরিস্থিতিতে রেলের ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ ভূমিকাকে কাঠগড়ায় তুলেছেন মমতা। তাঁর দাবি, ‘‘এ রাজ্যে এক সময় নিয়ন্ত্রণে এসেছিল করোনা। তবে এত লক্ষ লোককে কী ভাবে পরীক্ষা করব? আমাদের সঙ্গে পরিকল্পনা করতে পারত কেন্দ্র।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘(করোনা) সংক্রমণ ঠেকাতে রেল মন্ত্রকের কোনও দায়িত্ব নেই?’’সেই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলব, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে হস্তক্ষেপ করতে।’’ মমতার সমালোচনার পর মুখ খুলেছেন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন,পরিযায়ীদের ফেরাতে বিভিন্ন রাজ্যের অনুরোধেই শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন চালানো হয়েছে।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা ৪ হাজার ৯ জন। সংক্রমণের জেরে এ রাজ্যে ২৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রক। যদিও রাজ্য সরকারের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২১৭। এবং কো-মর্বিডিটিতে আরও ৭২ জন করোনা আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে।এ দিন মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন,ভিন্ রাজ্য থেকে এ রাজ্যে ইতিমধ্যেই ৫ লক্ষ লোক এসেছে। এই আবহে মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাতের মতো রাজ্য অথবা মুম্বই-দিল্লির মতো শহর থেকে পরিযায়ীরা এ রাজ্যে এলে করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়বে। ওই জায়গা থেকে পরিযায়ীরা এলে তাঁদের প্রত্যেককেই বাধ্যতামূলক ভাবে কোয়রান্টিনে থাকতে হবে বলেও নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে গোটা বিষয়টি নিয়ে যে রাজনীতি করা হচ্ছে, সেই অভিযোগ করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আমার সঙ্গে রাজনীতি করতে বাংলার ক্ষতি করা কেন?’’
আরও পডু়ন: ডাঙা ডুবেই, জোয়ারে এখনও এক মানুষ জল কোথাও কোথাও
আরও পড়ুন: ‘বিদ্যুৎ নেই, সাত দিন ধরে খুঁটি উপড়ে রয়েছে, সিইএসসি বলল এখন পারবে না!’