Coronavirus

আপাতত শুধু আশ্বাসই ভরসা পণ্য জোগানে

সোমবার বিকেল পাঁচটা থেকে প্রায় সমগ্র রাজ্য জুড়ে ‘লকডাউন’ হয়ে গেল।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২০ ০৫:৩৬
Share:

ছবি: এএফপি।

সকাল থেকেই মেদিনীপুরের বিভিন্ন দোকান-বাজারে উপচে পড়ছিল ভিড়। দোকানে দোকানে ভিড় করে থাকা ক্রেতাদের ভুরু কুঁচকে গিয়েছে নিত্যপণ্যের দাম দেখে। অনেকেই বেরিয়ে এসে বলেছেন, ‘‘লকডাউন হল না, এর মধ্যেই দাম বাড়তে শুরু করেছে!’’ এই ছবি শুধু দক্ষিণের মেদিনীপুরের নয়, কয়েক শো কিলোমিটার দূরের মুর্শিদাবাদ বা উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি, কোচবিহার শহরেও দৃশ্য আলাদা কিছু নয়। এক দিকে যেমন বাজারে ভিড় করে লোকজন নিজেদের ভাঁড়ারে বাড়তি পণ্য মজুত করেছেন, পাশাপাশি প্রায় সকলেই প্রশ্ন তুলেছেন, লকডাউনের ফলে পণ্যের জোগান পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে না তো?

Advertisement

সোমবার বিকেল পাঁচটা থেকে প্রায় সমগ্র রাজ্য জুড়ে ‘লকডাউন’ হয়ে গেল। তার পরে এই প্রশ্ন স্বাভাবিক ভাবেই ঘুরছে জেলার ক্রেতা থেকে ব্যবসায়ী, সব মহলেই। অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, পণ্যের জোগান পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে জেলার স্থানীয় দোকানে মজুত পণ্যের দাম এক দিকে আকাশ ছোঁবে। আর সেই পণ্য শেষও হয়ে যাবে দ্রুত। তা হলে? জেলায় জেলায় প্রশাসনের কর্তারা আশ্বস্ত করেছেন এই বলে যে, ঘাবড়ানোর কিছু নেই। নিত্য পণ্যের সঙ্কট হবে না। যেমন, পশ্চিম বর্ধমান জেলা প্রশাসন সূত্রে বলা হয়েছে, ঝাড়খণ্ড সীমানার ডুবুরডিহি চেকপোস্টে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু খাদ্য-সহ অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রীর গাড়ি আটকানো হচ্ছে না। উত্তরবঙ্গে সব জেলা থেকেই জানানো হয়েছে, অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের গাড়ির ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বিহার বা ঝাড়খণ্ড থেকে গাড়ি ঢুকতেও যাতে সমস্যা না হয়, সে দিকে নজর রাখা হচ্ছে। আনাজ তো বটেই, মাছের গাড়িও আনার ব্যবস্থা হচ্ছে বলে জানান কোচবিহার থেকে দক্ষিণ দিনাজপুর, সব জেলা প্রশাসনিক কর্তাই।

এত আশ্বাসের মধ্যেও ব্যবসায়ী থেকে সাধারণ মানুষ নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না। কারণ অভিযোগ, বিভিন্ন জেলায় এর মধ্যেই নিত্যপণ্যের কালোবাজারি শুরু করেছে ব্যবসায়ীদের একটি অংশ। শিলিগুড়ি এবং কলকাতা থেকে আনাজ আসে মুর্শিদাবাদের সদর শহর বহরমপুরে। সেখানকার লোকজনের আশঙ্কা, এই গাড়ি ঠিকমতো আসবে তো? প্রশাসনেরই একটি অংশের অভিযোগ, মালগাড়ি বা ট্রাকে যে পণ্য সরবরাহ করার শুরু হয়েছে, তা সাধারণ সময়ের থেকে কম। ফলে জোগান কমছে। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে আতঙ্কে কেনাকাটা। ব্যবসায়ীদের একটি অংশের বক্তব্য, যিনি সাধারণত চার কেজি চাল কেনেন, তিনি কিনছেন দশ কেজি। একই ছবি আনাজপাতির ক্ষেত্রেও। ফলে দোকানের জোগানেও টান। এই পরিস্থিতিতে দামও বেড়েছে। এখন যদি বাইরে থেকে জোগান কম হয়, তা হলে অবস্থা আরও খারাপ হবে।

Advertisement

আরও পড়ুন: পুলিশি শাসনে ভরসন্ধ্যাতেই শহর সুনসান

বিষয়টি নিয়ে কয়েকটি জেলায় বৈঠক হয়েছে। যেমন, পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় এ দিন এসপি, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, মহকুমাশাসক, বিডিওদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। পরে জেলাশাসক পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, পণ্য পরিবহণের গাড়ি আটকানো যাবে না।’’ একই কথা বলেছেন কোচবিহারের জেলাশাসক পবন কাদিয়ান, পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক রাহুল মজুমদারও। অন্য পথ খুঁজতে বেসরকারি সংস্থাগুলির সঙ্গে আলোচনা করেছেন জলপাইগুড়ির জেলাশাসক অভিষেক তিওয়ারি। মূল লক্ষ্য সেই পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল এবং নিত্যপণ্য সরবরাহ ঠিক রাখা। নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রিজ়ের যুগ্ম সম্পাদকের অন্যতম তবে দক্ষিণবঙ্গে হুগলি, পূর্ব বর্ধমানে ছবিটা কিছু আলাদা। এই দুই জেলা আনাজের ক্ষেত্রে স্বনির্ভর। বরং এই দুই জেলা থেকে অন্যত্র আনাজ পাঠানো হয়। দুই জেলা প্রশাসনেরই বক্তব্য, নিজেদের নিয়ে চিন্তা নেই। অন্যত্র সরবরাহ যাতে বিঘ্নিত না হয়, সে দিকে নজর রাখা হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement