ডিজিটাল লাইভ-এ সূর্যকান্ত মিশ্র।—নিজস্ব চিত্র।
রাজ্য সরকারের সুরেই করোনা মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় সরকারের মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন তুলল বিরোধী সিপিএম। রাজ্যে যেখানে সেখানে বিপুল ভাবে লকডাউন ভাঙা হচ্ছে, কেন্দ্রের দিক থেকে এই বক্তব্যেরও বিরোধিতা করল তারা। তবে একই সঙ্গে তাদের দাবি, এই রাজ্যে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা আরও বাড়ানো হোক এবং মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে ‘বিভ্রান্তি’ তৈরির চেষ্টা বন্ধ হোক।
করোনা-যুদ্ধে সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে তাঁদের বক্তব্য জানাতে রবিবার দলের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম থেকে লাইভ ভিডিয়ো কনফারেন্সে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র অভিযোগ করেছেন, এই সঙ্কটের সময়ে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো মেনে রাজ্যগুলিকে পর্যাপ্ত সাহায্য করছে না নরেন্দ্র মোদীর সরকার। এমনকি, লকডাউন ভাঙা নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক যে বয়ানে রাজ্য সরকারকে চিঠি দিয়েছে, তাতে আপত্তি তুলে ওই ঘটনাকে রাজ্যের এক্তিয়ারে ‘নাক গলানো’ বলেই অভিহিত করেছেন সূর্যবাবু। কেন্দ্রীয় সরকার তথা বিজেপি নেতাদের একাংশের ভূমিকা নিয়ে শনিবারই প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সে প্রশ্ন তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সূর্যবাবুর এ দিন বলেছেন, ‘‘রাজ্যগুলো দাবি জানাচ্ছে, প্রস্তাব দিচ্ছে। তাদের টাকা দিন, মেডিক্যাল সরঞ্জাম দিন। জরুরি কাজ ছেড়ে কেন্দ্র এখন নিজামুদ্দিনের ঘটনার জের টেনে সাম্প্রদায়িক কুৎসার দিকে চলে যাচ্ছে। দলমত নির্বিশেষে এখন সকলকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে লড়াই করতে হবে।’’
দিল্লিতে তবলিগি জামাতের অনুষ্ঠানে কিছু বিদেশি নাগরিকও ছিলেন। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকের প্রশ্ন, ভিসা দিয়ে বাইরের লোকের আসা এবং যাওয়ার অনুমতি দেওয়া কেন্দ্রেরই কাজ। এখন রাজ্যগুলোর উপরে সব দোষ চাপিয়ে কী হবে? পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তার দাবির পাশাপাশিই সূর্যবাবুর আরও বক্তব্য, ‘‘চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পিপিই, মাস্ক-সহ নানা সরঞ্জাম অপ্রতুল। কেন্দ্রের নির্দেশিকা পড়ে মনে হচ্ছে, রাজ্যগুলো তাদের কাছে সরঞ্জাম না চাইলেই ভাল হয়! তা হলে সব ব্যবস্থা রাজ্যকেই করতে হবে!’’
রাজ্যে যত্রতত্র যেমন খুশি লকডাউন ভাঙা হচ্ছে, এই রকম প্রচার ঠিক নয় বলেই সূর্যবাবুর মত। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পাঠানো চিঠি প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘এই ভাবে কেন্দ্রের নাক গলানো উচিত নয়। নিজামুদ্দিনের যোগ এবং সাম্প্রদায়িক রং নিয়ে এসে বিপজ্জনক খেলা খেলবেন না! কিছু জায়গায় অন্যায় হয়তো হচ্ছে। কিন্তু সেটা সার্বিক নয়। প্রয়োজন ছাড়াই সবাই বাইরে বেরিয়ে পড়েছেন, এই কথাও ঠিক নয়।’’
মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে চিকিৎসক-নেতা সূর্যবাবুর প্রস্তাব, যে সব হাসপাতাল বা নার্সিং হোমে করোনা চিকিৎসা হচ্ছে, সেখানে অন্য রোগের চিকিৎসা একেবারেই বন্ধ করে বিকল্প ব্যবস্থা করা হোক। নইলে রোগী এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের কোয়রান্টিন বা সংক্রমণ থেকে বাঁচানো যাবে না। তাঁর বক্তব্য, ‘‘হু এবং আইসিএমআর-এর পরামর্শ মতো আরও আরও পরীক্ষা দরকার। এলাকা চিহ্নিত করে সেটা হলে জানা যাবে, বিপদটা কোথায় আছে। করোনা আক্রান্তদের ক্ষেত্রে সুগার, কিডনির সমস্যা বা নিউমোনিয়া ‘কো-মরবিডিটি’। করোনা আক্রান্তের মৃত্যু হলে নিউমোনিয়ায় মারা গিয়েছেন তো বলা যায় না। মৃত ৫ না ১৫, এই বিতর্ক অযথা।’’ রেশন বিলি ঘিরে অভিযোগে নজর দিতেও মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি আবেদন জানিয়েছেন তিনি।