বিক্ষোভকারীদের বোঝাচ্ছে পুলিশ। মঙ্গলবার হাসপাতালের সামনে। নিজস্ব চিত্র
সাত সকালে জাতীয় সড়ক অবরোধ করে চলছে বিক্ষোভ। আর তাঁদের বোঝানোর চেষ্টটা করছেন পিপিই কিট পরা কয়েকজন লোক!
দেশে করোনা সংক্রমণ ছড়ানো শুরুর সময়ে সরকার পরিচালিত কোয়রান্টিন সেন্টারগুলির পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভ দেখা গিয়েছিল জনতার। তার পরে কেটেছে বেশ কয়েক মাস। করোনার সঙ্গে লড়তে তৈরি হয়েছে একাধিক করোনা হাসপাতাল। এ বার সেই হাসপাতালের খাবার এবং চিকিৎসা পরিষবা নিয়ে ক্ষুদ্ধ করোনা আক্রান্তেরা। সেই ক্ষোভ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, মঙ্গলবার কাঁথিতে করোনা হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে রাস্তা অবরোধ করলেন রোগীরা। তাঁদের বোঝাতে নাজেহাল হতে হল স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশকে।
কাঁথিতে মেচেদা বাইপাস সংলগ্ন একটি নার্সিংহোমকে কোভিড হাসপাতাল করা হয়েছে। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে মঙ্গলবার পর্যন্ত সেখানে ৪৭ জন চিকিৎসাধীন। এ দিন সকালে ওই হাসপাতালের রোগীদের একাংশ ১১৬ বি জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন পরিজনেরা। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, হাসপাতালে অত্যন্ত নিম্নমানের খাবার দেওয়া হচ্ছে, গোটা হাসপাতাল অপরিচ্ছন্ন, যত্রতত্র পড়ে বর্জ্য। রোগীদের জন্য যে শৌচাগার রয়েছে, তা-ও কার্যত ব্যবহারের অযোগ্য। পাশাপাশি তাঁদের দাবি, চূড়ান্ত অস্বাস্থ্যকর ওই হাসপাতালে চিকিৎসার প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোও নেই।
বিক্ষোভের জেরে দিঘা-নন্দকুমার জাতীয় সড়কে যানজট হয়। প্রথমে অনেকেই বুঝতে পারেননি কে বা কারা কীসের দাবিতে অবরোধ করছে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে সব জানাজানি হলে অনেকেই ভয় পেয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। শেষে হাসপাতালের কর্মীদের একাংশ পিপিই কিট পরে এসে এবং কাঁথি থানার পুলিশ মিলিতভাবে রোগীদের বোঝান। তার পরেই হাসপাতালে ফেরেন রোগীরা। তবে অবিলম্বে অন্য হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
করোনা আক্রান্তরা এভাবে জাতীয় সড়কে নেমে অবরোধ করায় অস্বস্তিতে হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্তারা। হাসপাতালের সকলের নজর এড়িয়ে তাঁরা কীভাবে রাস্তায় চলে গেলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ নিয়ে জানতে ফোন করা হয়েছিল ওই করোনা হাসপাতালের কর্তৃপক্ষকে। তবে তাঁরা কেউ মুখ খুলতে রাজি হননি।
নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুব্রত কুমার রায় বলেন, ‘‘ওই নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একাধিক অনিয়মের অভিযোগ আগে থেকেই ছিল। বর্তমানে যে সব রোগী সেখানে চিকিৎসাধীন, তাঁদের অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হলে সরানো হবে। এ দিন রোগীরা যে সব অভিযোগ করেছেন, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’
এভাবে রাস্তায় নেমে রোগীরা বিক্ষোভ করায় এলাকায় সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা করছেন স্থানীয়েরা। এলাকায় জীবাণুনাশক স্প্রে করারও দাবি উঠেছে। এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘‘দ্রুত গোটা এলাকা জীবাণুমুক্ত করা এবং ওইসব রোগীর সংস্পর্শে আসা প্রত্যেকের লালারসের নমুনা পরীক্ষা দরকার।’’
কাঁথি পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের অন্যতম সদস্য সত্যেন্দ্রনাথ জানা বলেন, ‘‘ওই হাসপাতাল থেকে কয়েক জন রোগীকে চণ্ডীপুরে এবং বাকিদের কাঁথিতে আয়ুর্বেদ কলেজে স্থানান্তরিত করা হয়েছে বলে শুনেছি। হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকা জীবাণুমুক্ত করতে বলা হয়েছে। লালারসের নমুনা পরীক্ষার ব্যাপারে স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে কথাবার্তা বলা হচ্ছে।’’
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)