আরজি করে তদন্তে সিবিআই আধিকারিকরা। ছবি: পিটিআই।
আর জি কর হাসপাতালের ধর্ষণ ও খুনের তদন্তে সময়সীমা বেঁধে দিয়ে আগেই সিবিআইয়ের উপরে চাপ বাড়ানোর কৌশল নিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। এ বার কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলে আক্রমণে নেমে পড়ল তারা। রাজনৈতিক শিবিরের ধারণা, আর জি কর হাসপাতালের ঘটনা নিয়ে চারপাশের চাপে কোণঠাসা শাসক দল এখন সব দায়িত্ব সিবিআইয়ের দিকে ঠেলে পরিস্থিতি সামাল দিতে চাইছে।
নাগরিক সমাজ, বিরোধী রাজনৈতিক দল তো আছেই, চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় তৃণমূলের ভিতর থেকেও প্রশ্নের মুখে পড়েছে রাজ্য প্রশাসন। এই অবস্থায় আলোচনার মুখ ঘুরিয়ে দিতে সিবিআইয়ের তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের নেতা কুণাল ঘোষ শুক্রবার বলেছেন, “তদন্তে সিবিআই কত দূর এগিয়েছে, তারা তা আদালতকে জানাক। তা না করে ইচ্ছাকৃত বিলম্বে তারা রাজনীতির সুযোগ করে দিচ্ছে। এই সুযোগে কুৎসা চলছে।” সেই সঙ্গেই তাঁর কটাক্ষ, “কলকাতা পুলিশ এক জনকে গ্রেফতার করেছিল। সিবিআই তাকে নিয়েই ঘুরছে!” আদালতে সিবিআই কেন ধৃতের জেল হেফাজত চেয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। তাঁর কথায়, “তা হলে কী ধৃতের কাছ থেকে আর কোনও তথ্য পাওয়ার নেই?”
সমালোচনার মুখে সিবিআইয়ের তদন্তকে ‘ঢাল’ করলেও আর জি কর হাসপাতালের ঘটনা নিয়ে তৃণমূলের অন্দরেও আলোড়ন চলছে। প্রকাশ্যেই মুখ খুলেছেন দলের দুই সাংসদ। শুধু তা-ই নয়, পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসনের ‘ব্যর্থতা’ নিয়ে ঘনিষ্ঠ মহলে অসন্তোষ জানিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সেই সঙ্গেই রাজ্য সরকারের করণীয় নিয়েও নিজের মত জানিয়েছেন অভিষেক। প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত ‘অভিষেকের নিশানায় মমতা প্রশাসন’ শীর্ষক সংবাদে একটি অংশ তাঁর এক্স হ্যান্ডল থেকে নেওয়া হয়েছিল। সেখানে গোটা দেশে এই অপরাধের তথ্য দিয়ে কঠোর আইন ও দ্রুত বিচার চেয়েছিলেন। তবে ওই খবরে অভিষেকের বক্তব্য হিসেবে প্রকাশিত, ‘দল ও প্রশাসন ক্ষোভের আঁচে পড়া সত্ত্বেও পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজ্য সরকার পুরনো ব্যবস্থার শেকলেই বাঁধা পড়ে আছে। ফলে, লক্ষ্য অপূর্ণ থেকে যাচ্ছে’— এই অংশটুকু অভিষেকের মত হিসেবে তাঁরই ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানা গিয়েছিল। প্রকাশিত খবরে তা আলাদা করে উল্লেখ করা ছিল না।
বিরোধীরা অবশ্য শাসক দলের অন্দরে ভিন্ন সুরকে হাতিয়ার করতে ছাড়ছে না। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর দাবি, “অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক, সাংসদ এবং অবৈধ ভাবে হলেও গুরুত্বে মুখ্যমন্ত্রীর প্রায় সমান। সরকার যে ভাবে চলছে, তাতে তাঁর উষ্মাও গোপন থাকছে না! মানুষ তো বটেই, অভিষেকও এখন বুঝতে পারছেন রাজ্য সরকার ঠিক ভাবে চলছে না।” প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায়ের মন্তব্য, “অভিষেকবাবু, আপনি যতই গা বাঁচিয়ে সরকারের থেকে আলাদা থাকার চেষ্টা করুন, এই কুশাসনের ভাগীদার আপনিও!”