Cooperative Election

সিঙ্গুরে সিপিএমকে শূন্যে পৌঁছে দিল তৃণমূল, তবে নন্দীগ্রামে বিজেপির হাতে ভরাডুবি হল শাসকদলের

রাজ্য-রাজনীতিতে আবার নজরে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম! দু’টি সমবায় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রবিবার দিনভর চাপানউতর চলল এই দু’জায়গাতেই। দু’জায়গার ফলও ভিন্ন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০২৪ ২৩:২৪
Share:

—ফাইল চিত্র

রাজ্য-রাজনীতিতে আবার নজরে সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম! দু’টি সমবায় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দিনভর চাপানউতর চলল এই দু’জায়গাতেই। দু’জায়গার ফলও ভিন্ন। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামই রাজ্যে বাম জমানার পতন ঘটিয়েছিল। ক্ষমতায় এনেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূলকে। তার পর রাজনীতির জল অনেক দূর গড়িয়েছে। এখন যা পরিস্থিতি, তাতে সিঙ্গুর এখনও তৃণমূলের সঙ্গে থাকলেও, ভিন্ন পথ ধরেছে নন্দীগ্রাম! লোকসভা ভোটের ফলাফলের পর সমবায় ভোটেও তা স্পষ্ট হল। সিঙ্গুরের সমবায়ে বামেদের শূন্য পৌঁছে দিলেও, নন্দীগ্রামে বিজেপির হাতে ভরাডুবি হল শাসকদলের। যদিও ভোট-পর্যবেক্ষকদের মত, স্থানীয় স্তরের নির্বাচন কোনও নির্দেশক হতে পারে না!

Advertisement

সিঙ্গুরে ৩৫ বছর ধরে বামেদের দখলে থাকা সমবায় ছিনিয়ে নিয়েছে শাসকদল তৃণমূল। গোবিন্দপুর সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি লিমিটেডের নির্বাচনে সব ক’টি, অর্থাৎ ৪৫টি আসনেই জেতে তারা। একটিও আসন পেল না বামেরা। গোবিন্দপুর সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি ১৯৮৯ সাল থেকে বামেদের দখলে। এই সমবায়ে মোট ভোটার ২২৬৫ জন। তৃণমূল ও বামেরা সব আসনেই প্রার্থী দিয়েছিল। বিজেপি প্রার্থী দিয়েছিল ১২টি আসনে। রবিবার কড়া নিরাপত্তায় ভোটগ্রহণ হয়। বিকেলে ফল প্রকাশের পর দেখা যায়, সব ক’টি আসনেই জিতেছেন তৃণমূল সমর্থিত প্রার্থীরা। জয়ের পরে সিঙ্গুরের তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী বেচারাম মান্না বলেন, ‘‘৩৫ বছর পর বামেদের হাত থেকে সমবায় ছিনিয়ে নিলাম। বাম-বিজেপি রামধনু জোট করেও কিছু করতে পারেনি।’’

বামেদের দাবি, তৃণমূল ভোট লুট করেছে। পুলিশের সামনেই ছাপ্পা ভোট হয়েছে। তাতে বাধা দিতে গেলে দলীয় প্রার্থী দেবাশিস মুখোপাধ্যায়কে মারধরও করা হয়। তিনি সিঙ্গুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দেবাশিস বলেন, ‘‘তৃণমূল বহিরাগতদের দিয়ে যে ভাবে ছাপ্পা দিয়ে গেল, যে ভাবে আমাকে মারধর করল, তা ন্যক্কারজনক।’’ তৃণমূল নেতা গোবিন্দ ধাড়া অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘এমন কিছুই হয়নি। ওরা ভোট কম পেয়েছে বলে এ সব বলছে। আমিও তো আধ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিলাম।’’

Advertisement

অন্য দিকে, নন্দীগ্রাম ১ ব্লকের হরিপুরের প্রিয়ানগরী সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি লিমিটেডের পরিচালন সমিতির নির্বাচনে ১২টি আসনের মধ্যে ১১টিতেই জিতল বিজেপি। ১৯৬৩ সালে তৈরি হয় এই সমবায়টি। এত দিন সেখানে পরিচালন সমিতির সদস্যদের মনোনীত করা হত। এই প্রথম বার এই সমবায়ে নির্বাচন হল। সমবায়ে মোট ভোটার ৬৬০। বিজেপি ১২টি আসনেই প্রার্থী দিয়েছিল বিজেপি। তৃণমূল ১০ ও বামেরা তিনটি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। রবিবার কড়া নিরাপত্তায় ভোটগ্রহণ হয়। বিকেলে ফলাফল প্রকাশের পর দেখা যায়, একটি বাদে সব ক’টি আসনেই জিতেছে বিজেপি। প্রসঙ্গত, গত লোকসভা ভোটে তমলুক কেন্দ্রের অন্তর্গত নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের থেকে এগিয়ে ছিল বিজেপি। ভোটের ব্যবধান ছিল প্রায় ন’হাজার।

এর পরেই বিজয় উৎসবে মেতে ওঠেন পদ্মশিবিরের কর্মী-সমর্থকেরা। অভিযোগ, সেই সময় দুই বিজেপি কর্মীকে পাকড়াও করে পুলিশ। তা নিয়ে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি বাধে। বিজেপির দাবি, কী কারণে দলীয় কর্মীদের গ্রেফতার করা হল, তা স্পষ্ট ভাবে জানায়নি পুলিশ। বিজেপি নেতা মেঘনাদ পাল বলেন, ‘‘আজ একেবারে উৎসবের মেজাজে ভোট হয়েছে। হলদিয়ার মহকুমাশাসক সকাল থেকেই এখানে উপস্থিত ছিলেন। ভোটেরফল ঘোষণার পরেই দুই বিজেপি কর্মীকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। কেন এই গ্রেফতার, তা জানানো হয়নি। তৃণমূল ভোটে হেরে যাওয়াতেই অতি সক্রিয় হয়ে উঠেছে পুলিশ। তাঁদের এই ঔদ্ধত্যের বিরুদ্ধে আমরা রাজনৈতিক লড়াইয়ের পাশাপাশি আইনি লড়াই চালিয়ে যাব।’’

যদিও এই নির্বাচনে হারকে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলেই দেখছে তৃণমূল। নন্দীগ্রাম ১ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি বাপ্পাদিত্য গর্গ বলেন, ‘‘এটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক নির্বাচন। প্রান্তিক মানুষেরা এখানে টাকার লেনদেন করেন। তাঁরা নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচন করেছেন এই ভোটের মাধ্যমে। কিন্তু এই নির্বাচনকে সামনে রেখে রণং দেহি মেজাজে ছিল বিজেপি। বহিরাগত বাইক বাহিনীকে এলাকায় জড়ো করে ভোট করিয়েছে তারা। লোকসভা ভোটে নন্দীগ্রামে শুভেন্দু অধিকারী কাঙ্ক্ষিত ফল পায়নি। তাই এই সমবায়ের নির্বাচনে মেঘনাদ পালের নেতৃত্বে বিজেপির লোকেরা অতিসক্রিয় হয়ে এলাকার দখল নিয়ে এই ভোটে জয়লাভ করেছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement