বলয়গ্রাস। দেহরাদূন থেকে এএফপি-র ছবি।
সূর্য বা চন্দ্রের গ্রহণকালে খাদ্যগ্রহণ নিষেধ, এই সংস্কার দীর্ঘকালের। বিজ্ঞান জানিয়েছে, সেটা আসলে কুসংস্কার। সেই কুসংস্কার কাটিয়ে রবিবার বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণের দুপুরে কমিউনিটি কিচেনে রান্না এবং খাওয়া সারলেন গ্রামবাসীরা। হাসনাবাদ থানা এলাকার আমপান-বিধ্বস্ত বেড়েরচক এলাকার বাসিন্দারা জানান, গ্রামে যাতে কুসংস্কার থাবা গেড়ে বসতে না-পারে, তাই এই উদ্যোগ। ওই গ্রামে কুসংস্কার দূর করতে উদ্যোগী হয়েছে দমদম ক্যান্টনমেন্টের একটি সামাজিক সংগঠন। মূলত তাদের সাহায্যেই কমিউনিটি কিচেন চলছে ওই গ্রামে।
ওই সংগঠনের সদস্য বিপুলন গাইন বলেন, ‘‘সকালে গ্রামেরই এক যুবক ফোন করে জানান, কিছু লোক গ্রহণ চলাকালীন কমিউনিটি কিচেনে রান্না-খাওয়ার ব্যাপারে আপত্তি তুলছেন। আমরা ভিডিয়ো কলে গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলি এবং গ্রহণের বিজ্ঞানসম্মত দিকটি ব্যাখ্যা করি। বিস্তর আলোচনার পরে ভুল বুঝতে পেরে গ্রামবাসীরা গ্রহণকালে রান্না করতে এবং খেতে সম্মত হন।’’
বেড়েরচকের বাসিন্দাদের সচেতনতার প্রশংসা করে পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের সহ-সম্পাদক মিলন গাইন জানান, গ্রামে আরও বেশি করে বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষার আলো পৌঁছে দেওয়া দরকার। শুধু গ্রাম কেন, শহরে বিজ্ঞান শিক্ষার চল থাকলেও অনেকে বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে উঠতে পারেন না।
একবিংশ শতকেও শুধু গ্রাম নয়, শহরেরও অনেক মানুষের মধ্যে গ্রহণ নিয়ে কুসংস্কার রয়েছে। গ্রহণের বিকৃত ব্যাখ্যা করে এক শ্রেণির জ্যোতিষী ও ভণ্ডেরা গুজব ছড়ান। করোনা আবহে সেই সব কুসংস্কার নতুন মাত্রা পেয়েছে। যদিও সোমক রায়চৌধুরীর মতো বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানীরা বলছেন, গ্রহণ ও করোনাভাইরাসের মধ্যে অতি দূরদূরান্তেরও সম্পর্ক নেই।
তবু এ দিন গ্রহণ শুরুর আগেই মালদহ, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, শিলিগুড়ির রাস্তাঘাট কার্যত সুনসান হয়ে যায়। ছড়ায় গুজব। গ্রহণ শুরুর আগেই অনেকে পেট পুরে খেয়ে নেন। কেউ তালা ঝুলিয়ে দেন রান্নাঘরে। ঝাড়গ্রামের জনজাতি এলাকায় অবশ্য সচেতনতার ছবি উজ্জ্বল। বিজ্ঞানের শিক্ষক প্রসেনজিৎ প্রধান একটি বিজ্ঞান সংস্থা চালান। তিনি বলেন, ‘‘ডিসেম্বরের সূর্যগ্রহণে সচেতনতার প্রচার করেছিলাম। সে-বার যাঁরা গ্রহণে অরন্ধন করেছিলেন, এ বারের গ্রহণে তাঁরাই রান্না করেছেন।’’
আরও পড়ুন: আমপানে ভুয়ো ক্ষতিগ্রস্ত! শুরু হল টাকা ফেরানো