প্রতীকী ছবি।
পরিস্থিতির বিবরণ, পথনির্দেশ— সবই সীমাবদ্ধ থাকার কথা এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) এবং বিভিন্ন বিমানের পাইলটদের মধ্যে। দিল্লি ও লখনউ বিমানবন্দরের এটিসি-র সঙ্গে উড়ন্ত বিমানের পাইলটদের কথাবার্তা কিন্তু চলে আসছে জনসমক্ষে!
আকাশ থেকে পাইলট এটিসি অফিসারদের কী বলছেন, এটিসি থেকে পাইলটের কাছে কী নির্দেশ যাচ্ছে— তার অডিয়ো ক্লিপ ঘুরছে বিভিন্ন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ এবং ফেসবুকে। এর ফলে বিমানযাত্রীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে ভিআইপি বিমানের নিরাপত্তাও। হ্যাম রেডিয়ো অপারেটরেরা বিষয়টি কলকাতার এটিসি-র নজরে এনেছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সব জানানো হয়েছে।
পাইলটদের সঙ্গে কথা বলার জন্য এটিসি অফিসারেরা অন্তত ছ’ধরনের রেডিয়ো কম্পাঙ্ক ব্যবহার করেন। বিমান মাটিতে থাকলে এক ধরনের কম্পাঙ্ক, উড়লে অন্য ধরনের। পাইলট কত উচ্চতায় উড়বেন, তাঁর বিমানের কাছাকাছি অন্য বিমান আছে কি না— এটিসি সবই জানায় পাইলটকে। এটিসি অফিসারদের কথায়, ‘‘এ-সবই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।’’ কোনও ত্রুটি হলে বা দুর্ঘটনা ঘটলে পাইলটের সঙ্গে মূল তথ্যপ্রমাণ হিসেবে এটিসি অফিসারদের সেই অডিয়ো টেপই তুলে দেওয়া হয় তদন্তকারীদের হাতে।
বিমান পরিবহণের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল এভিয়েশনের (ডিজিসিএ) এক কর্তা বলেন, ‘‘এটিসি অফিসারেরা মনিটরে বিমানের গতিবিধির ছবি দেখতে পান। সেই ছবি দেখে নির্দেশ পাঠানো হয়। সাধারণ মানুষের কাছে সেই ছবি নেই। শুধু অডিয়ো ক্লিপ শুনে তাঁদের মনে বিমান পরিবহণ সম্পর্কে ভুল বার্তা যেতে পারে। অনেকে আতঙ্কিত হয়ে পড়তে পারেন। এটা কাম্য নয়।’’
এটিসি-পাইলট কথোপকথন যাতে বিঘ্নিত না-হয়, সেই জন্য বিমানের ভিতরে সাধারণ মোবাইলে কথা বলতে দেওয়া হয় না। এখন বাইরে থেকে যাঁরা এই কথোপকথন রেকর্ড করছেন, তাঁরা অবশ্যই সেই রেডিয়ো কম্পাঙ্কে ঢুকে পড়ছেন। তার ফলে পাইলট-এটিসি কথোপকথন বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সিনিয়র এক এটিসি অফিসার বলেন, ‘‘আমরা যে-রেডিয়ো কম্পাঙ্ক ব্যবহার করি, তার জন্য ভারত সরকারের লাইসেন্স নিতে হয়। যাঁরা সেই কম্পাঙ্কে ঢুকছেন, তাঁদের নিশ্চিত ভাবে সেই লাইসেন্স নেই। ফলে তা বেআইনি।’’
শখের রেডিয়ো অপারেটরদের দু’টি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এবং ফেসবুকে সেই রেকর্ড করা কথোপকথন লাগাতার শেয়ার করার অভিযোগ উঠেছে নির্দিষ্ট এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। যে-নম্বর থেকে সেগুলি শেয়ার করা হচ্ছে, তা সংযুক্ত আরব আমিরশাহির। নাবিল হাশমি নামে ওই ব্যক্তিকে সাবধান করে দেন একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের অ্যাডমিন, ঝাড়খণ্ডের দুমকার বাসিন্দা সুমন সৌরভ। সতর্কবাণীতে কান না-দেওয়ায় তাঁকে ওই গ্রুপ থেকে বার করে দেওয়া হয়। অভিযোগ, অন্য গ্রুপে একই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন নাবিল। ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস রবিবার বিষয়টি এটিসি-র নজরে এনেছেন। এটিসি-কর্তৃপক্ষ জানান, এ ক্ষেত্রে কী করণীয়, তা জানতে তাঁরা বিষয়টি লিগ্যাল সেলে পাঠাচ্ছেন।