২ পঞ্চায়েত সমিতি, ১১ পঞ্চায়েত

ত্রিশঙ্কু, বোর্ড গড়া নিয়ে শুরু জল্পনা

বৃহত্তম দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই, আবার পরস্পরবিরোধী বাকি দলগুলির এক হয়ে বোর্ড গড়ার সম্ভাবনাও আপাতদৃষ্টিতে সহজ নয়। তাই বোর্ড গড়বে কোন দল, তাদের সমর্থনই বা করবে কারা— এমনই নানা প্রশ্নের মুখে শিলিগুড়ি মহকুমার দু’টি পঞ্চায়েত সমিতি এবং ১১টি গ্রাম পঞ্চায়েত বোর্ডের ভবিষ্যত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৫ ০১:৪৬
Share:

আঠারোখাইতে দলের কর্মীদের সঙ্গে অশোক ভট্টাচার্য ও জীবেশ সরকার। —নিজস্ব চিত্র।

বৃহত্তম দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই, আবার পরস্পরবিরোধী বাকি দলগুলির এক হয়ে বোর্ড গড়ার সম্ভাবনাও আপাতদৃষ্টিতে সহজ নয়। তাই বোর্ড গড়বে কোন দল, তাদের সমর্থনই বা করবে কারা— এমনই নানা প্রশ্নের মুখে শিলিগুড়ি মহকুমার দু’টি পঞ্চায়েত সমিতি এবং ১১টি গ্রাম পঞ্চায়েত বোর্ডের ভবিষ্যত।

Advertisement

বুধবার প্রকাশিত শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের ফল প্রকাশের পরে জানা গিয়েছে, ফাঁসিদেওয়া এবং নকশালবাড়ি পঞ্চায়েত সমিতিতে বৃহত্তম দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। একই ভাবে ১১টি পঞ্চায়েতেও একই পরিস্থিতি হয়েছে। বিরোধী নেতাদের একাংশের দাবি, যে সব ক্ষেত্রে বামেরা বৃহত্তম দল সেক্ষেত্রে তৃণমূলকে ঠেকাতে কংগ্রেস তাদের সমর্থন করতে পারে, এবং যে ক্ষেত্রে কংগ্রেস বৃহত্তম দল সেখানে বামেদের সমর্থন মিলবে। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে বিভিন্ন আদিবাসী সংগঠনের প্রার্থীদের ‘নির্দল’ হিসেবে জয়লাভ। কোন গোষ্ঠীর জয়ী প্রার্থী, কাকে সমর্থন করবেন, বোর্ড গঠনের আগে তা নিয়েই চলছে জল্পনা।

মহকুমা প্রশাসনের কোনও আধিকারিক এ দিন ত্রিশঙ্কু ক্ষেত্রগুলিতে বোর্ড গঠনে কী পদক্ষেপ করা হবে, তা নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। তবে প্রশাসনের একটি সূত্রের খবর, যদি কোনও দল নিজে থেকে বোর্ড গঠনের দাবি না জানায়, তবে যেখানে যে দল বেশি আসন পেয়েছে (একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নয়) তাদেরই বোর্ড গঠন করতে ডাকা হবে।

Advertisement

ফাঁসিদেওয়া ব্লকের সাতটি গ্রাম পঞ্চায়েত। এর মধ্যে ত্রিশঙ্কু হয়ে আছে চারটি। একমাত্র পঞ্চায়েত সমিতিও ত্রিশঙ্কু। বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য, ‘‘ফলাফল এক নজরে দেখার পরে কে কার সঙ্গে গেলে বোর্ড গড়া সম্ভব, তা বোঝা যাচ্ছে। তবে আপাতত যে সব সম্ভাবনা রয়েছে, তার সবগুলো বাস্তব চেহারা না-ও নিতে পারে। দল বদল, ঘোড়া কেনাবেচা— কোনও আশঙ্কাই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।’’

জালাস-নিজামতারা পঞ্চায়েতের ২২টি আসনের মধ্যে তৃণমূল পেয়েছে ন’টি। কংগ্রেস সাত এবং সিপিএম ছয়। সেক্ষেত্রে কংগ্রেস বা সিপিএম এক সঙ্গে অথবা তৃণমূলকে কংগ্রেস সমর্থন করলে সংখ্যাগরিষ্ঠতায় (১২টি) পৌঁছনো সম্ভব।

আরও জটিল পরিস্থিতি হেটমুড়ি-সিঙ্গিঝোরা গ্রাম পঞ্চায়েতে। ২৪টি আসনের মধ্যে সিপিএম নয়, বিজেপি ছয়, তৃণমূল দুই, কংগ্রেস এক এবং নির্দলেরা ছ’টি আসন পেয়েছেন। বোর্ড গড়তে ১৩ জনকে লাগবে। সেখানে সিপিএম এগিয়ে থাকলেও, তাদেরও আরও চার জনের সমর্থন দরকার। তবে অন্য বিরোধীদের সঙ্গে সিপিএম জোট গড়লে অন্য কথা। এই পঞ্চায়েতে ছ’জন নির্দলের কদর বেড়ে গিয়েছে বহুগুণ।

ফাঁসিদেওয়া পঞ্চায়েতে বোর্ড গড়তে ১৬টি আসনের মধ্যে তৃণমূল সাতটিতে জিতে এগিয়ে থাকলেও বোর্ড গড়তে তাদের আরও দু’জনকে দরকার। আবার তৃণমূল-বিরোধীরা জোট করলে সংখ্যাটা দাঁড়ায় নয়। কারণ, কংগ্রেসের পাঁচ, সিপিএমের দুই, বিজেপি-র এক এবং এক জন নির্দল জিতেছেন। এই পঞ্চায়েতেও সদস্য-টানাটানির প্রবল সম্ভাবনা।

সবচেয়ে চোখ ধাঁধানো পরিস্থিতি ঘোষপুকুর পঞ্চায়েতে। ২২টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস, সিপিএম এবং তৃণমূল— তিন দলই সাতটি করে আসন পেয়েছে। এক জন নির্দল জিতেছেন। ১২টি ভোট নিয়ে বোর্ড গঠনের জন্য কে, কার দিকে যান, সে দিকে তাকিয়ে গোটা ফাঁসিদেওয়া।

ফাঁসিদেওয়া পঞ্চায়েত সমিতি নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ২১টি আসনের মধ্যে তৃণমূল আটটি, সিপিএম সাতটি, কংগ্রেস পাঁচটি এবং বিজেপি একটিতে জিতেছে। ১১ জনের সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য হয়, কংগ্রেস-সিপিএমকে এক সঙ্গে হাঁটতে হবে বা শাসক দলকে মুখাপেক্ষী হতে হবে অন্য দলের নির্বাচিতদের উপরে।

মাটিগাড়া ব্লকে আবার পঞ্চায়েত সমিতি নিয়ে কোনও সমস্যা না থাকলেও, পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে তিনটিই ত্রিশঙ্কু অবস্থায় রয়েছে। মাটিগাড়া-১ গ্রাম পঞ্চায়েতে মোট আসন ১৪টি। তার মধ্যে তৃণমূল সাত, সিপিএম চার, কংগ্রেস দুই এবং বিজেপি একটি আসনে জিতেছে। মাটিগাড়া-২ পঞ্চায়েতে ২৫টি আসনের মধ্যে তৃণমূল ১২টি, সিপিএম ১০টি এবং কংগ্রেস তিনটিতে জিতেছে। পাথরঘাটায় ২৮টি আসনের মধ্যে বামফ্রন্ট ১৪টি, তৃণমূল আটটি, বিজেপি তিনটি, কংগ্রেস একটি এবং নির্দল পেয়েছে দু’টি আসন।

খড়িবাড়ি ব্লকের রানিগঞ্জ-পানিশালি এবং বুড়াগঞ্জ পঞ্চায়েতও ত্রিশঙ্কু। রানিগঞ্জ-পানিশালিতে ২৭টি আসনের মধ্যে ১২টি জিতেছে তৃণমূল। সিপিএম সাত এবং সিপিআই একটি আসনে জিতেছে। ওই গ্রাম পঞ্চায়েতে চারটি আসনে নির্দল প্রার্থীরা জিতেছেন। বামেদের দাবি, ওই নির্দলেরা তাঁদের সঙ্গে থাকবেন। ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার প্রার্থী পুষ্পা ওঁরাও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছেন। বিজেপি জিতেছে দু’টি আসনে। ফলে, কারা সেখানে বোর্ড গড়তে পারবে তা এই মুহূর্তে অনিশ্চিত। বুড়াগঞ্জ পঞ্চায়েতের ২২টির মধ্যে ১০টি আসনে জিতেছে সিপিএম। তৃণমূল এবং কংগ্রেস জিতেছে যথাক্রমে পাঁচটি এবং তিনটি আসনে। একটিতে বিজেপি এবং তিনটিতে নির্দল প্রার্থীরা জিতেছেন।

ত্রিশঙ্কু অবস্থায় রয়েছে নকশালবাড়ি পঞ্চায়েত সমিতিও। সেখানে সিপিএমের দখলে রয়েছে আটটি আসন। তৃণমূলের রয়েছে সাতটি। তবে কংগ্রেসের এক জন এবং দুই নির্দলকে নিয়ে বামেরা বোর্ড গড়তে আশাবাদী। তৃণমূলও বোর্ড গড়ার প্রস্তুতি নেবে বলে দাবি করেছে। নকশালবাড়ি ব্লকের মনিরাম এবং হাতিঘিষা পঞ্চায়েতও ত্রিশঙ্কু অবস্থায়। ১৮ আসনের মনিরামে তৃণমূলের দখলে সাতটি আসন এবং ১৬ আসনের হাতিঘিষায় বামেদের দখলে আটটি আসন রয়েছে। আপার বাগডোগরা পঞ্চায়েতেও মোট ২১টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস সব চেয়ে বেশি (ন’টি) আসন পেলেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় পৌঁছতে পারেনি।

সব মিলিয়ে আগামী কয়েক দিনে নানা রাজনৈতিক সমীকরণ আর জল্পনার রসদ মজুত রয়েছে এই ত্রিশঙ্কু ফলাফলে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement