স্বাস্থ্য দফতর। —ফাইল চিত্র।
চলতি মাসের শেষে রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার মেয়াদ ফুরোচ্ছে। সেই পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু প্রার্থীদের আবেদন করার জন্য সেখানে অপরিহার্য (এসেনশিয়াল) এবং কাঙ্ক্ষিত (ডিজ়ায়রেবল) শিক্ষাগত যোগ্যতার মানদণ্ড উল্লেখ করা হয়নি বলে অভিযোগ চিকিৎসক সংগঠন থেকে অধিকাংশ সিনিয়র চিকিৎসকের।
তাঁদের প্রশ্ন, ‘‘প্রতিটি নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিতেই এই দু’টি বিষয়ের উল্লেখ থাকে। এমন ফাঁক রেখে কাউকে বিশেষ সুযোগ পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে না তো?’’ সিনিয়র চিকিৎসকেরা এ-ও বলছেন, ‘‘রাজ্যপাল যখন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ করছিলেন, তখন রাজ্য সরকার তাঁদের অভিজ্ঞতার মাপকাঠি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। তবে এখন স্বাস্থ্য ব্যবস্থার শীর্ষ একটি পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিতে কেন সেই অভিজ্ঞতা গুরুত্ব পায়নি?’’
গত ৮ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য দফতরের ওএসডি এবং বিশেষ সচিব এই বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন। সেটি সমস্ত মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ এবং স্কুল অব ট্র্যপিক্যাল মেডিসিন ও এসএসকেএমের অধিকর্তার কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ৬৪ বছরের কম বয়সি, ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল এডুকেশন সার্ভিসের প্রফেসর, রাজ্যের যে কোনও সরকারি মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ, ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল এডুকেশন সার্ভিসের অধীনে বিশেষ সচিব, শিক্ষক-চিকিৎসক স্তরে যুগ্ম-অধিকর্তা, যুগ্মসচিব এবং স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন, আইপিজিএমইআর বা এসএসকেএমের অধিকর্তারা আবেদন করতে পারবেন। ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেলের মধ্যে সেই আবেদন জমা দিতে হবে।
তবে কত বছর প্রফেসর বা অধ্যক্ষ পদে থাকতে হবে কিংবা প্রশাসনিক কাজে কত বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে অথবা বাড়তি যোগ্যতা হিসেবে কোনটা বিবেচিত হবে, বিজ্ঞপ্তিতে তার উল্লেখ নেই। যদিও স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমের দাবি, ‘‘নির্দিষ্ট নিয়ম মেনেই স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা পদে নিয়োগ করা হবে।’’ কিন্তু সিনিয়র চিকিৎসকদের অধিকাংশেরই বক্তব্য, ‘এসেনশিয়াল’ এবং ‘ডিজ়ায়রেবল’ মানদণ্ডের (ক্রাইটেরিয়া) উল্লেখ করা উচিত ছিল। কারণ, অভিজ্ঞতার নির্দিষ্ট সময় উল্লেখ না করায়, সবেমাত্র বা কয়েক বছর হল প্রফেসর কিংবা অধ্যক্ষ হয়েছেন, এমন প্রার্থীরও আবেদন করতে বাধা থাকছে না।
রাজ্যের প্রাক্তন স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র বলছেন, ‘‘অভিজ্ঞতার মেয়াদ কত থাকতে হবে, সেটি সব সময়েই উল্লেখ করা থাকে। এ বার সেটি দিতে ভুল হয়েছে, না কি ইচ্ছাকৃত ভাবে দেওয়া হল না, তা দেখতে হবে।’’ ‘জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টর্স’-এর যুগ্ম আহ্বায়ক পুণ্যব্রত গুণ এবং ‘সার্ভিস ডক্টর্স ফোরাম’-এর সাধারণ সম্পাদক সজল বিশ্বাসের অভিযোগ, এ হেন ব্যবস্থায় শাসকদল তাদের অনুগত কাউকে পদটি পাইয়ে দিতে চাইছে।
সিনিয়র চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা পদে আবেদন করতে ন্যূনতম দশ বছর প্রফেসর থাকা প্রয়োজন। সেটিই এত দিন মানা হয়েছে। ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স’-এর সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা আবার বলছেন, ‘‘সাম্প্রতিক অতীতে স্বাস্থ্য-শিক্ষার সর্বোচ্চ প্রশাসনিক পদে নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেখিনি। সরকার পছন্দ মতো কাউকে মনোনীত করে থাকেন। তাই এমন বিজ্ঞাপনে আশ্চর্য হয়েছি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘যে কোনও নিয়োগে প্রার্থীদের অপরিহার্য এবং কাঙ্ক্ষিত নির্ণায়ক থাকে। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশনেরও কিছু সুপারিশ আছে। কিন্তু এটায় সে রকম নেই। আমাদের আশঙ্কা, পছন্দের ব্যক্তিকে ওই চেয়ারে বসাতেই এই ব্যবস্থাপনা।’’
সিনিয়র চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, দীর্ঘ দিন ধরে শিক্ষক-চিকিৎসক রয়েছেন, সুপার বা অধ্যক্ষের দায়িত্ব সামলেছেন বহু দিন, এমন লোককেই স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার পদে বসানো হত। এই মুহূর্তে ছ’জন অধ্যক্ষ বা অধিকর্তা রয়েছেন, যাঁরা দশ বছরের বেশি প্রফেসর পদে আছেন। অভিজ্ঞতার নিরিখে তাঁদেরই এগিয়ে থাকার কথা। কিন্তু বিজ্ঞপ্তিতে কিছু উল্লেখ না থাকায় অশনিসঙ্কেত দেখছেন চিকিৎসকদের একাংশ।