—প্রতীকী ছবি।
আন্তর্জাতিক বইমেলার মাঠে কি প্যালেস্টাইনে গণহত্যা বা দেশে রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির দাবি নিয়ে আওয়াজ উঠতে পারে? বইমেলার মাঠে মঙ্গলবার দিনভর প্রশ্নটা ঘুরপাক খেল।
রবিবার সন্ধ্যায় প্রধানত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের কয়েকটি গণসংগঠনের কর্মীরা মিলে বাচ্চাদের লেখা, আঁকা পত্রিকা বিলির সময়েই পুলিশি হস্তক্ষেপ ঘটে বলে অভিযোগ। শহরের পিছিয়ে থাকা শ্রেণির বাচ্চাদের তৈরি পত্রিকায় গাজ়ার শিশুদের প্রতি সহমর্মিতার কথা ছিল। এই কর্মসূচিতে পুলিশি বাধার প্রতিবাদে সোমবার বইমেলার আয়োজক গিল্ডের দফতরের সামনে জড়ো হয় বিভিন্ন গণসংগঠন। মাঠে উত্তেজনা ছড়ায়। তখন শঙ্খদীপ দাস এবং অভিনব দাস নামে দু’জন রাজনৈতিক কর্মীকে পুলিশকে ‘আক্রমণের’ অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। তবে একই সময়ে লিটল ম্যাগাজিন প্যাভিলিয়নের অন্যতম সংগঠক গণ সংগঠন কর্মী আর এক জন পঞ্চাশোর্ধ্ব মহিলা চন্দনা মুখোপাধ্যায়ও পুলিশের হাতে নিগৃহীত হন। জনৈক পুরুষ পুলিশকর্মী তাঁর হাতে কামড়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। বিধাননগর সরকারি হাসপাতালে কামড়ের বিষয়টি স্বীকার করা হলেও পুলিশ মানছে না।
মঙ্গলবার ধৃত দুই তরুণকে বিধাননগর অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় আদালতে তোলা হলে জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। বৃহস্পতিবারের মধ্যে পুলিশকে জখম হওয়ার প্রমাণ হিসেবে ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্টও দিতে হবে। শঙ্খদীপ যাদবপুরের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রাক্তনী। অভিনব স্কটিশ চার্চ কলেজে পড়ছেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির (জুটা) সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় এ দিন বলেন, “এক দিকে যাঁরা কেন্দ্রীয় সরকারের আধিকারিকদের মাথা ফাটিয়ে দিচ্ছে, তাঁদের পুলিশ খুঁজেই পাচ্ছে না! অন্য দিকে ছাত্ররা একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা নিয়ে ডেমনস্ট্রেশন প্রোগ্রাম করলে জামিন অযোগ্য ধারায় কেস দিয়ে জেলে ভরে রাখছে, এর থেকে দুঃখের আর কিছু হতে পারে না।”
পুলিশের হাতে ‘নিগৃহীতা’ চন্দনাও বলছেন, “পুলিশ কেন আমার অভিযোগ লিখবে না? আমরা শান্তিপূর্ণ ভাবে বন্দিমুক্তির অভিযোগ কেন তুলতে পারব না?” যাদবপুরের প্রাক্তনী কয়েক জন প্রতিবাদীর অভিযোগ, রবিবারের ঘটনার পিছনে বইমেলার মাঠে গেরুয়া-শিবিরের কয়েকটি স্টলের প্রতিনিধিদের উস্কানি রয়েছে। তাদের কথা শুনে পুলিশ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেয়।
বইমেলার আয়োজক প্রকাশক ও বই বিক্রেতা গিল্ডের কর্তা ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায় এ দিন বলেন, “বইমেলায় মিটিং মিছিল করার কথা নয়। বইমেলার প্রতিবাদ বইয়ে ছাপার অক্ষরে হওয়াই কাম্য।” তা হলে পত্রিকা বিলিতে পুলিশ কেন বাধা দিল? সদুত্তর মেলেনি। ২০১৯-এও প্রতিবাদীদের উপরে পুলিশি হামলার অভিযোগে উত্তাল হয় বইমেলা। তারও আগে একটি নারী অধিকার সংক্রান্ত পত্রিকায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সমালোচনা থাকার দরুণ পত্রিকাটির প্রকাশ অনুষ্ঠান বন্ধ করার ঘটনাও ঘটেছিল।