বিদ্যাসাগরের মূর্তিতে মাল্যদান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।—ফাইল চিত্র।
ক্যাথিড্রাল রোডে রবীন্দ্র জয়ন্তীর পর এ বার বীরসিংহ গ্রামে বিদ্যাসাগরের দু’শো বছরের জন্মদিনের অনুষ্ঠান মঞ্চ। ফের এক বার ইতিহাস গুলিয়ে গেল অতিথিদের।
মঙ্গলবার ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মভূমি বীরসিংহ গ্রামে তাঁর দ্বিশততম জন্মবার্ষিকী পালন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানকার অনুষ্ঠানে তিনি জানান, রাস্তার ফলক দেখে বিদ্যাসাগর মাইল আবিষ্কার করেছিলেন। এখানেই থেমে না থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বিদ্যাসাগর জ্যোতির্বিজ্ঞানেও পারদর্শী ছিলেন।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিদ্যাসাগরকে মাইল আবিষ্কারের কৃতিত্ব দিলেও, ইতিহাস কিছুটা ভিন্ন দাবি করছে। ‘মাইল’-এর ইতিহাস বলে, প্রাচীন রোমান যুগেও তার অস্তিত্ব ছিল। মাইল শব্দের উৎস কোথা থেকে তা নিয়ে মতপার্থক্য থাকলেও, প্রাচীন ইংরেজি বা লাতিন— সর্বত্রই দূরত্বের সূচক হিসাবে মাইলের উল্লেখ পাওয়া যায়। এমনকি, প্রাচীন রোমেও দূরত্বের সূচক হিসাবে মাইলের উল্লেখ পাওয়া যায়। মাইলের পরিমাপ বলা হয় এক হাজার পেস। অর্থাৎ রোমান সেনা কুচকাওয়াজ করার সময় প্রতি পদক্ষেপে যে দূরত্ব পেরোত তাকেই বলা হত এক পেস। সে রকম ১ হাজার পেসের সমান এক মাইল। বিদ্যাসাগরের জীবন নিয়ে দীর্ঘদিন চর্চা করা মেদিনীপুরের শিক্ষাবিদ অনুত্তম ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বাবার সঙ্গে যাওয়ার সময় মাইল ফলক গুনে গুনে যেতেন বিদ্যাসাগর। সেখান থেকেই তিনি সংখ্যা চিনেছিলেন। ফলক দেখে মাইল আবিষ্কার করেননি।”
আরও পড়ুন: উরির কায়দায় আত্মঘাতী হামলা চালাতে পারে জইশ, সতর্কতা জারি হল বায়ুসেনা ঘাঁটিগুলিতে
অনুত্তমবাবুর বক্তব্যেরই সমর্থন মেলে খোদ বিদ্যাসাগরের আত্মজীবনীতে। বিদ্যাসাগর চরিতের দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে ঈশ্বরচন্দ্র নিজেই উল্লেখ করেছেন মাইল ফলকের প্রসঙ্গ। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘‘প্রথমবার কলিকাতায় আসিবার সময়, সিয়াখালায় সালিখার বাঁধারাস্তায় উঠিয়া, বাটনাবাটা শিলের মত একখানি প্রস্তর রাস্তার ধারে পোতা দেখিতে পাইলাম। কৌতূহলাবিষ্ট হইয়া, পিতৃদেবকে জিজ্ঞাসিলাম, বাবা, রাস্তার ধারে শিল পোতা আছে কেন। তিনি, আমার জিজ্ঞাসা শুনিয়া, হাস্যমুখে কহিলেন, ও শিল নয়, উহার নাম মাইল ষ্টোন।” ওই প্রসঙ্গেই বিদ্যাসাগর কী ভাবে বাবা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে পথ চলতে চলতে ইংরেজি সংখ্যা শিখেছিলেন, তা বর্ণনা করেছেন।
বিদ্যাসাগর চরিতে মাইলফলকের উল্লেখ। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
মুখ্যমন্ত্রীর মঙ্গলবারের বক্তব্য শুনে অতিথিদের মধ্যে তখনকার মতো মৃদু গুঞ্জন শুরু হলেও, যাঁরা নিয়মিত মুখ্যমন্ত্রীর সভায় উপস্থিত থাকেন তাঁরা চুপই থেকেছেন। ওই অতিথিদের অনেকেই গত বছর ক্যাথিড্রাল রোডে রাজ্য সরকার আয়োজিত রবীন্দ্রজয়ন্তী অনুষ্ঠানেও উপস্থিত ছিলেন। ওই দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘বেলেঘাটায় যখন মহাত্মা গাঁধী অনশন করছিলেন, রবীন্দ্রনাথ তখন তাঁর কাছে যান এবং ফলের রস খাইয়ে গাঁধীর অনশন ভঙ্গ করেন। এর পরেই কবি লিখেছিলেন, ‘জীবন যখন শুকায়ে যায়’ গানটি।” যদিও ইতিহাস বলে, গাঁধী বেলেঘাটায় অনশন করেছিলেন ১৯৪৭ সালে, সাম্প্রদায়িক হিংসার পর্বে। রবীন্দ্রনাথের জীবনাবসান হয়েছে ১৯৪১ সালে।
আরও পড়ুন: শুনানির আগেই আত্মসমর্পণ করতে বলেছিল হাইকোর্ট, আগাম জামিন কি পাবেন রাজীব?
এই তালিকায় যদিও সব চেয়ে বেশি মনে রাখার মতো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ডহর বাবু’। সাঁওতাল আন্দোলনের প্রথম সারির দুই নেতা সিধো এবং কানহোকে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে তিনি তাঁদের সিধুবাবু, কানহুবাবু বলে সম্মোধন করেন। সঙ্গে যোগ করেন ডহর বাবু। যদিও সাঁওতাল ভাষায় ডহরের অর্থ পথ বা রাস্তা।