ভাতারের পথসভায় বনমালী হাজরা। শনিবার। — নিজস্ব চিত্র।
মুখ্যমন্ত্রী যতই দাবি করুন, শাসকদলের কেউ ধর্মঘট তোলার জন্য রাস্তায় নেমে বিরোধীদের মারধর করেনি, সম্পূর্ণ উল্টো ছবি ধরা পড়েছিল সংবাদমাধ্যমে।
এ বার, বন্ধ সমর্থকদের শিক্ষা দিতে প্রকাশ্যেই ‘প্রহার’ করার দাওয়াই বাতলালেন শাসকদলের এক বিধায়ক। পথসভায় দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে বর্ধমানের ভাতারের বিধায়ক বনমালী হাজরা বললেন, ‘‘আপনারা তো জানেন, প্রহারই শেষ কথা। এমন শিক্ষা দিতে হবে, দ্বিতীয় বার ওরা যেন বন্ধের কোনও সুযোগ না পায়। যদি প্রয়োজন হয় প্রহারেণ ধনঞ্জয়।”
কেন এমন নির্দেশ? বনমালীবাবুর ব্যাখ্যা, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেই কর্মনাশা বন্ধের বিরুদ্ধে ডাক দিয়েছিলেন। সে কথা কেউ না শুনলে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে মোকাবিলা করা হবে। হাত জোড় করে বারণ করা হবে। তার পরেও না শুনলে প্রয়োজনে প্রহারেণ ধনঞ্জয়ের পথেই যেতে হবে।’’
প্রত্যাশিত ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, তৃণমূল সরকার যে ক্ষমতায় আসা ইস্তক পুজো-পার্বণ নানা অছিলায় নতুন-নতুন ছুটির দিন ঘোষণা করে চলেছে, তাতে কাজের ক্ষতি হচ্ছে না? যিনি এই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, তাঁর ক্ষেত্রেও কি নিদান হবে ‘প্রহারেণ ধনঞ্জয়’? বনমালীবাবুর জবাব, ‘‘এর সঙ্গে ধর্মঘটের তুলনা চলে না। বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। এ রাজ্যে নানা ধর্মের মানুষ বাস করেন। রাজ্য সরকারের উচিত তাঁদের ধর্মাচরণ পালনের সুযোগ দেওয়া। আমাদের সরকার সেটাই করছে।’’
বনমালীবাবুর মন্তব্য নিয়ে তৃণমূল নেতৃত্ব যে কিছুটা হলেও বিব্রত, তা কার্যত পরিষ্কার। বিষয়টি শুনেই পরে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমি বনমালীবাবুর সঙ্গে কথা বলব।’’ যদিও ‘কর্মনাশা বন্ধ’ ও সরকারি ছুটি প্রসঙ্গে তিনি কার্যত একই সুরে কথা বলেছেন। পার্থবাবুর দাবি, ‘‘আমাদের সরকার বিনা কারণে কোনও ছুটি দেয় না। ছট পুজো বা কোনও বিশেষ সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠান উপলক্ষে সরকার ছুটি দিলে তা দেওয়া হয় একটা অংশের জন্য। কিন্তু একটা বন্ধ করা মানে সমগ্র রাজ্যটা অচল করে দেওয়া। এটা আমাদের সরকার মানবে না।’’
ধর্মঘট পালনের নামে রাস্তায় নেমে সিপিএম তাণ্ডব করেছে, বুধবারই দাবি করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর প্রতিবাদে দলের তরফে রাজ্য জুড়ে মিছিল করা হবে বলেও ঘোষণা করেন তৃণমূল নেতৃত্ব। শুক্রবার তেমনই এক মিছিলের শেষে ভাতার বাজারে কামারপাড়া মোড়ে পথসভা করে তৃণমূল। সেখানে বনমালীবাবু বারবার বন্ধের জেরে জনজীবনে বিঘ্ন ঘটা, ব্যবসা-বাণিজ্যে ক্ষতির অভিযোগ তুলে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “বামফ্রন্ট আমলে বন্ধ দৈনন্দিন ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ঘটা করে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বন্ধ ডাকা হত। আমরা কিন্তু সেই সুযোগ দেব না। পরিষ্কার একটাই কথা, প্রহারেন ধনঞ্জয়।” নবান্ন ঘেরাওয়ের নামে বামেরা নোংরামি করেছে বলেও দাবি তাঁর।
শনিবার বনমালীবাবুকে তাঁর এ ভাবে হুমকি দেওয়ার কারণ নিয়ে জানতে চাওয়া হলে প্রথমে তিনি বলেন, ‘‘কথার তোড়ে এ সব বলেছি।’’ পরে অবশ্য সামলে নিয়ে ‘কর্মনাশা বন্ধ’ রোখার যুক্তি দেন তিনি। সিপিএমের বর্ধমান জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিক পাল্টা বলেন, “ওরা কি আমাদের আগে পেটায়নি? এই ধর্মঘটের পরে ওরা আতঙ্কিত। তাই এরকম হুঁশিয়ারি দিচ্ছে। পেটাতে এলে মানুষ তার জবাব দেবে।” এআইসিসি সদস্য সেলিম মোল্লার অভিযোগ, “জমিদারি মনোভাবে সরকার চলছে। তার প্রভাব থেকেই শাসকদলের বিধায়কেরা এমন হুমকি দিচ্ছেন। আসলে গণতন্ত্রকে শেষ করার চক্রান্ত চলছে।’’