বীরভূমের অনুব্রত মণ্ডলের কুকথা নিয়ে বারবারই বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে শাসকদলকে। মুখে লাগাম টানতে এমনকী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যাকেও তাঁর স্নেহের ‘কেষ্টকে’ প্রকাশ্যে ধমক দিতে হয়েছে। কিন্তু, তৃণমূলের অস্বস্তি বাড়িয়ে পঞ্চায়েত ভোটের আগে কুকথার ডালি সাজিয়ে হাজির হচ্ছেন দলের আরও কিছু নেতা। তাঁদেরই এক জন বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী।
শনিবার বিকেলে বাঁকুড়ার ওন্দা ব্লকের রামসাগরে তৃণমূলের সভামঞ্চ থেকেই সভাধিপতি বলেন, ‘‘পুলিশ অফিসারদের বলছি, তৃণমূলকে কিন্তু গ্রেফতার করা চলবে না। বিজেপি মার খাবে। জিভ কেটে নেবেন! হাত পা ভেঙে দেবেন! আর কোনও রেয়াত নেই। আমরা বুঝে নেব।’’ এখানেই শেষ নয়, কার্যত দলনেত্রীর বিরুদ্ধ লাইনে গিয়ে অরূপবাবু বলেন, ‘‘দলনেত্রী বলেছিলেন, বদলা নয়, বদল চাই। আমরা ভুল করেছিলাম বন্ধু। আর বদল নয়, বদলাই হবে! আমরাও দেখে নিতে চাই বিজেপি-র বুকের পাটা কত বড়।’’
এই মন্তব্য ঘিরে হইচই শুরু হতেই তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অরূপ যদি এ কথা বলে থাকেন, দল একেবারেই তা অনুমোদন করে না। দলনেত্রীর ঘোষিত পথেই তৃণমূল চলবে। তাঁর কথা অমান্য করে অন্যান্যদের প্রতি কোনও হুমকি বা হিংসা বরদাস্ত করা হবে না।’’
বিরোধীদের যদিও অভিযোগ, লোক দেখাতে তৃণমূল নেত্রী এক-আধবার অনুব্রতর মতো নেতাকে ধমকাচ্ছেন। কিন্তু, আসলে পুরোটাই গট-আপ। পঞ্চায়েত ভোট যত এগিয়ে আসবে, ততই বিরোধীদের ভয় দেখাতে নানা হুমকি শোনা যাবে অনুব্রত মণ্ডল, অরূপ চক্রবর্তীদের মতো নেতাদের মুখে। জেলায় জেলায় বাড়বে হিংসাও।
বস্তুত, শনিবার অরূপবাবুর ওই উত্তেজক বক্তৃতার মিনিট দশেক পরেই মঞ্চ থেকে একশো মিটার দূরে বিজেপি-র পার্টি অফিসে হামলার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। মঞ্চে তখনও বক্তৃতা দিচ্ছেন রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু। শুক্রবার এই রামসাগরেই সভা করেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তারই পাল্টা সভা ছিল তৃণমূলের। রবিবার সন্ধ্যায় ভাঙচুর হওয়া পার্টি অফিসে যান দিলীপবাবু। কার্যালয় লাগোয়া কয়েকটি দুঃস্থ পরিবারের বাড়িতেও ভাঙচুর চালানো হয় বলে তাঁর কাছে স্থানীয় কিছু মহিলা অভিযোগ করেন। দিলীপবাবু বলেন, ‘‘আমাদের বিরাট সমাবেশ দেখে তৃণমূল ভয় পেয়েছে। ভাবছে পঞ্চায়েতে সব পাল্টে যাবে, পরিবর্তন হয়ে যাবে। তাই ওরা ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। যত দিন যাচ্ছে, মানুষ তত ওদের বিপক্ষে চলে যাচ্ছে। পঞ্চায়েত ভোট যত এগোচ্ছে ওরা বেপরোয়া হয়ে হিংসার কথা বলছে। এ ভাবে কেউ ক্ষমতায় থাকতে পারেনি, পারবেও না।’’