এক জন গৌরী সেনের সন্ধানে রয়েছে প্রদেশ কংগ্রেস। কিন্তু চাইলেই তো হল না! দিচ্ছে কে?
দলের কেন্দ্রীয় কমিটির ফরমান মেনে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা আপাতত সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে সিপিএম। অস্তিত্ব জানান দিতে গেলে কংগ্রেসকে তা হলে উপনির্বাচনে প্রার্থী দিতে হয়। কিন্তু একা হাতে ঠিকমতো লড়তে গেলে তহবিলের জোর দরকার ভালই। অথচ জয়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ, এমন আসনের পিছনে খরচা করতে রাজি নয় এআইসিসি। প্রদেশ কংগ্রেস তাই এখন উভয় সঙ্কটে! প্রার্থী না দিয়ে খরচ বাঁচানো হবে? নাকি গৌরী সেনকে খুঁজে বার করে প্রার্থী খাড়া করে অস্তিত্ব টের পাওয়ানো হবে?
কংগ্রেসের একাংশ চাইছে, টাকার অভাব এবং দুর্বল সংগঠনের কথা মাথায় রেখে বেসরকারি ভাবেই বামেদের সঙ্গে ‘সমঝোতা’ বজায় থাকুক। প্রার্থী না দিয়ে তৃণমূল-বিরোধী ভোটের বিভাজন কমিয়ে আনা হোক। আবার বিধায়ক ও নিচু তলার একাংশের চাপ রয়েছে প্রার্থী দেওয়ার পক্ষে। এমতাবস্থায় আগামী ২৩ অক্টোবর প্রদেশ নির্বাচন কমিটির বৈঠক ডেকেছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। সেখানে সকলের মতামত জানার পরে দিল্লিতে এআইসিসি-কে জানাবেন অধীরবাবু।
প্রদেশ সভাপতি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করেন, এমন কিছু করা উচিত নয়, যাতে তৃণমূল-বিজেপি’র সুবিধা হয়। সেই সঙ্গে বিধানসভার ভিতর ও বাইরে আব্দুল মান্নান-সুজন চক্রবর্তীদের যে অলিখিত সমঝোতা চলছে, তা অটুট থাকা উচিত। এই সূত্র ধরেই উঠছে টাকার প্রশ্ন। এআইসিসি বলে দিয়েছে, উপনির্বাচনে দল লড়বে কি না, তা প্রদেশ নেতৃত্বকেই ঠিক করতে হবে। এমনকী, ভোটে লড়লে টাকাও জোগাড় করতে হবে প্রদেশ নেতাদেরই। এতেই চিন্তার ভাঁজ দেখা দিয়েছে অধীর-মান্নানদের কপালে। ভোটে লড়ার টাকা জোগাবে কে?
সচরাচর এআইসিসি নির্বাচনী তহবিল দিলে সেই টাকায় ভোটের সময়ে সংগঠন সাজানো হয়। প্রচারের ব্যবস্থা এবং অন্যান্য প্রস্তুতির কাজ হয়। তার সঙ্গে আরও কিছু তহবিলের ব্যবস্থা প্রার্থীরা নিজস্ব উদ্যোগেও সাধ্যমতো করে থাকেন। কিন্তু হাইকম্যান্ড হাত তুলে নিলে পুরো খরচের জোগানই প্রদেশ নেতৃত্ব এবং প্রার্থীকে করতে হবে। রাজ্য জুড়ে বিরোধী শিবিরের অস্তিত্বই যখন সঙ্কটে, শাসক দল কংগ্রেসের ঘর ভেঙে সাফ করে দিচ্ছে, এমন সময়ে অধীর-মান্নানদের পাশে অর্থনৈতিক ভাবে দাঁড়াতে যাবে কে? প্রার্থী দেওয়া নিয়ে অধীরবাবুদের চিন্তা তাই গভীর!
অর্থনৈতিক প্রশ্ন সরিয়ে রেখে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা কংগ্রেস সভাপতি আনোয়ার আলির মতো নেতাদের রাজনৈতিক যুক্তি, প্রদেশ সভাপতি তৃণমূল-বিজেপি’কে সাহায্য না করার কথা বলছেন। কিন্তু প্রার্থী না দিলে কংগ্রেসের ভোট তো তৃণমূলের দিকেই চলে যেতে পারে! পরিষদীয় দলের বৈঠকে সোমবার অধীরবাবুর সামনেই নোয়াপাড়ার বিধায়ক মধুসূদন ঘোষ প্রার্থী দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। একই মত আরও কিছু বিধায়কের। অধীরবাবু মঙ্গলবার বলেন, ‘‘কেউ ভোটে লড়ার পক্ষে। আবার কেউ বিপক্ষে। এই পরিস্থিতিতে অবস্থান নিতেই রবিবার বৈঠক ডেকেছি।’’ মান্নান জানিয়েছেন, শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস লড়বে কি না, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে দিল্লি।
বিরোধী দলনেতা মান্নানের মাধ্যমেই কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন, যাতে একটি লোকসভা আসন সিপিএম ছেড়ে দেয়। কিন্তু আলিমুদ্দিনের পক্ষে এখন সেই প্রস্তাব মানা সম্ভব হয়নি। গত লোকসভা নির্বাচনে তমলুকে কংগ্রেস পেয়েছিল প্রায় ২৯ হাজার ভোট। আর কোচবিহারে প্রায় ৭৪ হাজার। স্বভাবতই বামেদের কাছ থেকে তাদের চাহিদা ছিল কোচবিহারই। কিন্তু ওই আসনে বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক লড়ে বলে সেটা আরওই কংগ্রেসকে ছাড়া সম্ভব নয় বামফ্রন্টের পক্ষে। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস এখন প্রবল দোলাচলে!
বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু এ দিনই তমলুক লোকসভা ও মন্তেশ্বর বিধানসভা কেন্দ্রে সিপিএম প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে দিয়েছেন। তমলুকে প্রার্থী হচ্ছেন হলদিয়া জোনাল কমিটির সদস্য এবং এলাকার একটি লোকাল কমিটির সম্পাদক মন্দিরা পণ্ডা। হলদিয়া বিধানসভা কেন্দ্রে এ বার মহিলা মুখ সামনে রেখেই জেতে বামেরা। তমলুক লোকসভাতেও একই পথে হাঁটতে চেয়েছে তারা। মন্তেশ্বরে প্রার্থী মহম্মদ ওসমান গনি সরকার। কোচবিহার আসনে প্রার্থীর নাম ফ ব ঠিক করলে পরে ঘোষণা করা হবে বলে বিমানবাবু জানিয়েছেন।
কংগ্রেস শেষ পর্যন্ত প্রার্থী না দিলে বামেদের পক্ষে তা শুভ। তৃণমূল-বিরোধী ভোট বিভাজন তা হলে কমবে। কিন্তু কংগ্রেসও পাল্টা আশ্বাস চাইছে যে, তুষার ভট্টাচার্য থেকে মানস ভুঁইয়া— দলত্যাগ-বিরোধী আইনের কোপে পড়ে আগামী দিনে যে সব কংগ্রেস বিধায়কের পদ বাতিল হবে, সেখানে বামেরা কোনও প্রার্থী দেবে না। সেখানে বামেদের মত, দলত্যাগীরা সবাই এখনও বিধায়ক পদেই আসীন! তাই এমন আশ্বাস নিয়ে কথা বলার সময় আসেনি। ফলে, কংগ্রেসে দোলাচলই বাড়ছে!