‘দিশা’ ডিউটিতে আপত্তি আশা-কর্মীদের, সংঘাত চরমে

সরকারি খাতায় শুধুই ‘স্বেচ্ছাসেবক’ আশা-কর্মীরা। ফলে তাঁরা এর বিরুদ্ধে আইনি পথে হাঁটতে পারছেন না।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:৩৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

অনেক দিন ধরেই ‘দিশা’ ডিউটি করার ব্যাপারে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে আশা-কর্মীরা আপত্তি জানাচ্ছিলেন। স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে তাঁদের ব্যাপক টানাপড়েনও চলছিল। শেষ পর্যন্ত নজিরবিহীন কড়া সিদ্ধান্ত নিয়ে এই ডিউটি না-করার জন্য তিন আশা -কর্মীর এক মাসের স্থায়ী সরকারি ভাতা আটকে দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। এক মাসের স্থায়ী ভাতা বন্ধ করার কথা মৌখিক ভাবে জানানো হয়েছে আরও তিন আশা-কর্মীকে।

Advertisement

সরকারি খাতায় শুধুই ‘স্বেচ্ছাসেবক’ আশা-কর্মীরা। ফলে তাঁরা এর বিরুদ্ধে আইনি পথে হাঁটতে পারছেন না। কিন্তু অধিকাংশ আশা-কর্মীই ক্ষোভে ফুঁসছেন এবং আন্দোলনের পথে যাবেন বলে জানিয়েছেন। স্বাস্থ্যকর্তারাও অনড়। সরকারপ্রদত্ত দায়িত্ব পালন না-করলে সরকারি ভাতা মিলবে না বলে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন তাঁরা। সব মিলিয়ে আশা-কর্মীদের একাংশের সঙ্গে স্বাস্থ্য দফতরের সংঘাত তুঙ্গে উঠেছে।

‘দিশা’ ডিউটির অর্থ হল, কোনও সরকারি হাসপাতালে এক মাসের জন্য প্রসূতি ও শিশুদের জন্য হেল্প ডেস্ক চালানো ও তাঁদের চিকিৎসা পরিষেবা পেতে সহযোগিতা করা। ক্ষুব্ধ আশা- কর্মীদের অভিযোগ, পরিকাঠামো ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা না-করে স্বাস্থ্য দফতর প্রত্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতালে তাঁদের ‘দিশা’ ডিউটি করতে পাঠাচ্ছে। পাশাপাশি অন্যায় ভাবে তাঁদের দিয়ে বিনা পারিশ্রমিকে অসংখ্য কাজ করিয়ে নিচ্ছে, যা তাঁদের করার কথাই নয়। উদাহরণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, বহু জায়গায় ডেঙ্গি দমন কর্মসূচির নামে আশা-কর্মীদের জঙ্গল কাটা, কচুবনে জমে থাকা লার্ভা পরিষ্কার করা, মশা মারার তেল স্প্রে করার কথাও বলছেন ব্লক প্রাইমারি হেলথ অফিসারেরা।

Advertisement

রাজ্যে এখন প্রায় ৫৩ হাজার আশা -কর্মী রয়েছেন। তাঁরা প্রতি মাসে স্থায়ী ভাতা হিসেবে ৩৫০০ টাকা পান। এ ছাড়া কাজের প্যাকেজ অনুযায়ী তাঁরা আরও কিছু টাকা পান। প্রত্যেক আশা -কর্মীকে বছরে এক বার এক মাসের জন্য কোনও সরকারি হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ‘দিশা’ ডিউটি করতে হয়। তার মধ্যে নাইট ডিউটিও পড়ে। এর জন্য তিনি পান বাড়তি ১৭০০ টাকা। স্বাস্থ্যভবন সূত্রের খবর, গত ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত উত্তরবঙ্গে নকশালবাড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে ‘দিশা’ ডিউটি পড়েছিল নকশালবাড়ি ব্লকের তিন আশা-কর্মীর। কিন্তু দূরত্ব ও পরিকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তুলে তাঁরা ডিউটি করেননি। ফলে নভেম্বরে তাঁদের স্থায়ী ভাতার ৩৫০০ টাকা আটকে দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।

কিন্তু ওই এক মাস তো তাঁরা নিজের এলাকায় রুটিন কাজ করেছে। তা হলে কেন স্থায়ী ভাতা আটকানো হবে? স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘প্রবণতাটাই খারাপ। তাই কড়া বার্তা দেওয়া দরকার ছিল। সরকার যে কাজ বলবে, সেটাই করতে হবে। আশা-কর্মীরা ইচ্ছে মতো ডিউটি করতে পারেন না। সেটা করলে স্থায়ী ভাতা পাবেন না।’’

নদিয়া জেলার নবদ্বীপ ব্লকের তিন জন আশা সম্প্রতি চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন যে, তাঁরা কৃষ্ণনগর মহকুমা হাসপাতালে ‘দিশা’ ডিউটি করবেন না। আশা সংগঠনের রাজ্য সম্পাদিকা ইসমত আরা খাতুনের অভিযোগ, ‘‘স্বাস্থ্য দফতর থেকে এঁদের তিন জনকে জানানো হয়েছে, ‘দিশা’ ডিউটি না করলে এক মাসের স্থায়ী ভাতা এবং ফিল্ড ওয়ার্কের প্যাকেজের টাকাও দেওয়া হবে না। এটা চরম অন্যায়।’’ প্রসঙ্গত, উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুর বিএন বোস হাসপাতালে ব্যারাকপুর ১ ও ২ ব্লকের আশা-কর্মীদের ‘দিশা’ ডিউটি পড়ত। সেখানে পরিকাঠামো ও নিরাপত্তার অভাবের অভিযোগ তুলে আশা-কর্মীরা ডিউটি বন্ধ করেন। গত জুলাই মাস থেকে ওই দুই ব্লকের কোনও আশা-কর্মীই ‘দিশা’ ডিউটি করছেন না। এর জন্য অবশ্য তাঁদের স্থায়ী ভাতা কাটা হয়নি। প্রশ্ন উঠেছে স্বাস্থ্য দফতরের এই দু’রকম নীতি নিয়েও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement