Coronation Bridge

বিপন্ন আশি বছরের সেতু

র্ত দফতর সূত্রে খবর, ২০১১ সালে ভূমিকম্পের পর করোনেশন সেতু বা বাঘপুলের ‘ডেক স্ল্যাবে’ ফাটল দেখা দেয়।

Advertisement

শান্তশ্রী মজুমদার

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২০ ০৪:০৯
Share:

বিপন্ন: করোনেশন সেতু। (ইনসেটে) ডানদিকের চিহ্নিত খিলানের গোড়া থেকে বালি-পাথরের নিরেট বাঁধন আলগা হয়ে গিয়েছে। ছবি: স্বরূপ সরকার

সেবকে আশি বছরের পুরনো তিস্তার করোনেশন সেতুই শিলিগুড়ি-ডুয়ার্সের ‘লাইফলাইন’। কিন্তু সেই সেতুরই আয়ু নিয়ে এ বার বড়সড় প্রশ্ন উঠে পড়ল।

Advertisement

গত বছর এই সেতুর গোড়া থেকে মাটি সরে ভয়াবহ অবস্থা নজরে আসে। তার পর বছর পার হয়েছে, মেরামতির কাজ মাঝপথেই বন্ধ। কবে তা শুরু হবে, নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউই। এরকম ভাবেই ওই সেতু কলকাতার মাঝেরহাট ব্রিজ হয়ে উঠবে না তো, প্রশ্ন উঠেছে উত্তরবঙ্গে। অবিলম্বে একটি ‘বিশেষজ্ঞ কমিটি’ গড়ে ব্রিজের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দেওয়ার দাবি উঠেছে। পূর্ত দফতরের কর্তাদের আশ্বাস, আইআইটি খড়্গপুর কর্তৃপক্ষকে ইতিমধ্যেই বলা হয়েছে।

পূর্ত দফতর সূত্রে খবর, ২০১১ সালে ভূমিকম্পের পর করোনেশন সেতু বা বাঘপুলের ‘ডেক স্ল্যাবে’ ফাটল দেখা দেয়। তখনকার মতো ঘটনা যাচাই করতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিশেষজ্ঞ দল আসে। তারা ঘুরে গিয়েই রিপোর্ট দেন, সেতুর অবস্থা ভাল নয়। তখনই ভারের ঊর্ধ্বসীমা ১৬ টন বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু তার পরে ২০১৭ সাল থেকেই সেতুর খিলানের গোড়া থেকে একটু করে মাটি সরে যাওয়ার বিষয়টি বাস্তুকারদের নজরে আসে। যা বিপজ্জনক আকার নেয় ২০১৯ সালের মাঝামাঝি। ভারের সীমা কমিয়ে করা হয় ১০ টন। মেরামতি পরিকল্পনা করে কাজ শুরু হতেই ছ’মাস পেরিয়ে যায়। মার্চে একটি দুর্ঘটনার পর কাজ বন্ধ করে দেয় ঠিকাদার সংস্থা। আজও শুরু হয়নি।

Advertisement

সেতু কাহিনি

• নির্মাণ ১৯৪১ সালে

• দৈর্ঘ্য ৯০০ মিটার

• ভূমিকম্পে ক্ষতি ২০১১ সালে
• ২০১৯ সালে গোড়ার মাটি সরে যায়
• অতি ভারী বাহনে নিষেধাজ্ঞা ২০২০ সালে
• মেরামতির কাজ শুরু হয়ে বন্ধ ২০২০ সালে
• প্রযুক্তিগত বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি হয়নি

করোনেশন সেতু ভাঙলে

• ডুয়ার্সের সঙ্গে শিলিগুড়ি কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে
• ঘুরপথে শিলিগুড়ি আসতে হবে ৭০-৮০ কিলোমিটার ঘুরে
• গুরুতর রোগীদের শিলিগুড়ি আনতেই বিপদ বাধবে
• সেনার জরুরি সরবরাহ মার খাবে
• এলাকার অর্থনীতির উপর ব্যাপক প্রভাব পড়বে
• অসম, ভুটান থেকে কলকাতা ও বিহারগামী বাসও সমস্যায় পড়বে।

পূর্ত দফতর সূত্রে দাবি, সেতুর দুটি খিলান বা অর্ধগোলাকার কংক্রিটের আর্চের উপরই যাবতীয় ভার নির্ভর করে। সেই খিলানের গোড়া থেকে মাটি বা বালি পাথরের নিরেট বাঁধন আলগা হতে শুরু করলে সেতুর ভবিষ্যৎ কী হবে তা নিয়ে চিন্তা সব স্তরেই। কিন্তু কেন এতদিন ধরে সেতুর সার্বিক স্বাস্থ্যের উপর নজর দেওয়া হল না তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। এই মুহূর্তে করোনেশনের বিকল্প সেতুর প্রস্তাব অথৈ জলে। ততদিন এই সেতু দিয়েই চালাতে হবে এলাকার মানুষ এবং সেনার সরবরাহ। তাই সেতুর দিকে নজর অবিলম্বে দেওয়া জরুরি বলেই মনে করছেন তাঁরা। পূর্ত দফতর সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ করে।

কেন বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়া হচ্ছে না? দফতরের মুখ্য বাস্তুকার (মহাসড়ক) সৌমিত্র মাইতি বলেন, ‘‘আমরা এ বিষয়ে আইআইটি খড়্গপুর কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করে চিঠি দিয়েছি।’’ পূর্ত দফতরের স্থানীয় সূত্রে খবর, নদীগর্ভ থেকে অন্তত সাত মিটার উচ্চতা পর্যন্ত বিশেষ তারের বেড়ায় পাথর ফেলে দিয়ে কাঠামো তৈরি হবে। তবেই তার ভিতর কংক্রিটের ঢালাই টিকবে। সেজন্য কম করে কোটি টাকার খরচ। তবে আপাতত কাজ হবে আনুমানিক ৩৬ লক্ষ টাকার। তাও জল কিছুটা কমলে কাজ শুরু করতে পারবে ঠিকাদার সংস্থা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement