বার্তা: প্রশাসনিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার হাওড়ার শরৎ সদনে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যে সাংসদ তহবিলের টাকা উন্নয়নের কাজে খরচ করার নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার হাওড়ার প্রশাসনিক বৈঠকে এসে তিনি জানিয়ে দিলেন, লোকসভা ভোট শীঘ্রই। সাংসদদের টাকা যেন পড়ে না থাকে।
তিনি জানান, রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটের জন্য তিন মাস উন্নয়ন থমকে ছিল। নয়া জেলা পরিষদ বা পঞ্চায়েত বোর্ড গঠনের আগেই বাকি থাকা কাজে নামতে হবে। তাঁর কথায়, ‘‘কাজ ফেলে রাখবেন না। দ্বিগুণ গতিতে এগিয়ে চলুন। এটা বিডিওদের দেখতে হবে।’’ হাওড়া-সহ অন্যান্য জেলায় ১০০ দিনের কাজে বিডিওদের গুরুত্ব দিতে বলেন তিনি।
হাওড়ার আইন-শৃঙ্খলা নিয়েও এ দিন উদ্বেগ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। হাওড়ায় তিনটি নতুন থানা ও একটি ফাঁড়ি তৈরির নির্দেশ দেন। গত বছর ধূলাগড়ের দাঙ্গার ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী যে এখনও উদ্বিগ্ন, ফের তা মনে করিয়ে বলেন, ‘‘হাওড়ায় সাম্প্রদায়িক সমস্যা হয়। বেশ কয়েকটি জায়গা অন্যান্য জেলার সীমানা এলাকায় হওয়ায় সেখানে দুষ্কৃতীদের উপদ্রবও রয়েছে।’’ সব থানা, বিডিও অফিস এবং হাসপাতাল সিসি ক্যামেরায় মুড়ে দিতে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।
বৈঠকে হাওড়া জেলা (গ্রামীণ) তৃণমূল সভাপতি পুলক রায় জানান, আমতার চন্দ্রপুরে ১৮টি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে। একটি থানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা সম্ভব হচ্ছে না। ভাটোরা-সহ আরও কয়েকটি জায়গায় থানা, ফাঁড়ি তৈরির আবেদন জানান পুলকবাবু। মুখ্যমন্ত্রী তৎক্ষণাৎ স্বরাষ্ট্র সচিব অত্রি ভট্টাচার্য, নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুরজিৎ করপুরকায়স্থ ও ডিজি বীরেন্দ্রকে নির্দেশ দেন অবিলম্বে অনুমোদিত নতুন ৫২টি থানা চালু করতে হবে। সাঁকরাইলকে আইসি থানায় উন্নীত করা, ধূলাগড়, উলুবেড়িয়ার রাজাপুর, আমতার চন্দ্রপুরে নতুন থানা-সহ ভাটোরাতে একটি সম্পূর্ণ ফাঁড়ি তৈরির নির্দেশ দেন।
বৈঠকে বিধায়ক জটু লাহিড়ী অভিযোগ করেন, টিকিয়াপাড়া-সাঁতরাগাছি স্টেশনের মধ্যে দক্ষিণপূর্ব রেল চতুর্থ লাইন করায় উন্নয়নের কাজে সমস্যা হচ্ছে। এ বিষয়ে রেল সহযোগিতা করছে না। মমতা জানান, রেলের কথা মতো বন্দুক দিয়ে লোক উচ্ছেদ করতে পারবেন না। তবে রেল পথে কালোটাকা, অস্ত্র আসছে অভিযোগ তুলে হাওড়ার পুলিশ কমিশনার ও জেলা পুলিশ সুপারকে আরপিএফ ও জিআরপি-র সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করার নির্দেশ দেন।
বার্ন স্ট্যান্ডার্ড, বেঙ্গল কেমিক্যাল বন্ধের সিদ্ধান্তের সমলোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। উন্নয়নের কাজে কেন্দ্রীয় সংস্থা সহযোগিতা না করলে দলকে আন্দোলন করতে নির্দেশও দেন তিনি। ব্যারাকপুরে একটি ইংরাজি মাধ্যম স্কুলের জমি সেনা দখল নেওয়ায় খবরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘মুখ্যসচিবকে বলেছি সেনাবাহিনীর সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নিতে। দু’কাঠা জমি সেনার লাগলে আমাদের থেকে দিয়ে দেব।’’
হাওড়ার বন্যা পরিস্থিতি নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেন মমতা। সেচের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি নবীন প্রকাশ জানান, ৩০টি ভাঙনপ্রবণ জায়গা চিহ্নিত করে সেখানে খাল সংস্কার-সহ বিভিন্ন কাজ হয়েছে। সাত বছরে রাজ্যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় কাজের খতিয়ান দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘অনেক কাজ হয়েছে। স্বাস্থ্যটাকে সামলাতে দিন।’’ বৈতরণী প্রকল্পে গ্রামের শ্মশানগুলিতে কংক্রিট ছাউনি, পাঁচিল, বসার জায়গা তৈরির জন্য বিধায়কদের উদ্যোগী হতে পরামর্শ দেন।’’