—প্রতীকী চিত্র।
অভিযোগ, পদোন্নতির ক্ষেত্রে দুর্নীতি চলছে। বেছে বেছে পছন্দের কর্মীদের পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। মানা হচ্ছে না পদোন্নতির ইন্টারভিউ সংক্রান্ত নিয়ম। এমনকি, সুপ্রিম কোর্টের চাকরির ইন্টারভিউ সংক্রান্ত বিধিও মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। এই দাবিতে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা (ডব্লিউবিএসইডিসিএল) কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হলেন সেখানকার কর্মীদের একাংশ। ২০২২ এবং ২০২৩ সালে চাকরিতে পদোন্নতির দু’টি ক্ষেত্রেই গরমিল করা হয়েছে বলে তাঁরা হাই কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। কোনও রকম স্বজনপোষণ হয়েছে কি না, তা দেখতে মামলাটি গ্রহণ করেছে আদালত। আগামী ১৫ জানুয়ারি পরবর্তী শুনানির আগে দু’পক্ষকেই লিখিত আকারে বক্তব্য জানাতে বলা হয়েছে।
সূত্রের খবর, ডেপুটি চিফ ইঞ্জিনিয়ার এবং সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার পদ থেকে অ্যাডিশনাল চিফ ইঞ্জিনিয়ার পদে ওঠার জন্য ডব্লিউবিএসইডিসিএল-এ এই ইন্টারভিউ হয়। অভ্যন্তরীণ এই ইন্টারভিউয়ে গরমিল করা হয়েছে বলে ২০২২ সালে প্রথম কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয় ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট পাওয়ার ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন’। এই সংগঠনের সেক্রেটারি তীর্থ মালের অভিযোগ, ‘‘কোনও নিয়মই মানা হচ্ছে না। কতগুলি শূন্য পদ তৈরি হয়েছে, সেটা প্রকাশ্যে জানানোর কথা। শূন্য পদ-পিছু কত জনকে ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকা হচ্ছে, সেটাও জানানোর কথা। কিছুই জানানো হচ্ছে না। উল্টে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে দু’দিন আগে ইমেল করে ইন্টারভিউ রয়েছে, সেই খবর জানানো হচ্ছে।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘এই পদোন্নতির ক্ষেত্রে ২৫ নম্বর রাখা হয়েছে জনসংযোগের নিরিখে। অর্থাৎ, যিনি ইন্টারভিউ দিচ্ছেন, তাঁর ঊর্ধ্বতন এই ২৫ নম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্মী কত পাচ্ছেন, তা দেবেন। আর বাকি ৭৫ নম্বর রাখা হয়েছে ইন্টারভিউয়ে। সুপ্রিম কোর্ট যেখানে মনে করে, কোনও ইন্টারভিউয়ে ৫০ শতাংশের বেশি নম্বর রাখা উচিত নয়, সেখানে এটা কী করে করা হচ্ছে? তা ছাড়া, এই ৭৫ নম্বরের ইন্টারভিউ নিয়ে নেওয়া হচ্ছে খুব বেশি হলেও দুই থেকে তিন মিনিটে!’’
এমনই ইন্টারভিউ দেওয়া ডব্লিউবিএসইডিসিএল-এর এক কর্মী জানান, ২০২২ সালের
৪ নভেম্বর ইন্টারভিউ হয়। সেখানে ১১টি পদের জন্য ৫০ জনকে ইন্টারভিউয়ে ডাকা হয়েছিল। তিন ঘণ্টারও কিছু কম সময়ে নেওয়া হয়েছিল গোটা ইন্টারভিউ। এর পরেই আদালতে মামলা হয়। সেই মামলার বিচার চলাকালীন চলতি মাসের ২১ তারিখ ফের ইন্টারভিউ নেওয়া হয়েছে। এ বার ১০টি পদের জন্য দু’দিন আগে মেল করে ডাকা হয়েছে ৪৪ জনকে। ইন্টারভিউ দেওয়া এক ব্যক্তির অভিযোগ, ‘‘ইন্টারভিউ বোর্ডের চেয়ারম্যানই উপস্থিত ছিলেন না। দু’ঘণ্টার মধ্যে তড়িঘড়ি ৪৪ জনের ইন্টারভিউ নিয়ে নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, এক-এক জনের জন্য বরাদ্দ সময় ছিল আড়াই মিনিটের কিছু বেশি! আমার মতো অধিকাংশ জনের থেকেই শুধু জানতে চাওয়া হয়েছে, রাজ্যে কোথায় ডব্লিউবিএসইডিসিএল-এ যুক্ত আছি আর কী করি! এইটুকু উত্তরে আমি ৭৫ নম্বরের মধ্যে কত পাওয়ার যোগ্য, এটা ঠিক হয় কী করে?’’ ইন্টারভিউ দেওয়া আর এক কর্মীর মন্তব্য, ‘‘ওই দিনই ফের আদালতে গিয়েছিল কর্মীদের সংগঠন। অতীতের ইন্টারভিউয়ের জট খোলার আগেই কী করে ফের ইন্টারভিউ হতে পারে! কিন্তু তার পরেও না থেমে তড়িঘড়ি ইন্টারভিউ নিয়ে নেওয়া হয়েছে! পরের দিনই ১০ জনের নামের তালিকা প্রকাশ করে দেওয়া হয়েছে। কিসের ভিত্তিতে এই ১০ জন মনোনীত হয়েছেন, সেটাও পরিষ্কার নয়।’’
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ডব্লিউবিএসইডিসিএল-এর চেয়ারম্যান তথা ম্যানেজিং ডিরেক্টর শান্তনু বসু ফোন ধরেননি। টেক্সট মেসেজেরও উত্তর দেননি। সংস্থার ডিরেক্টর (ডিস্ট্রিবিউশন) পার্থপ্রতিম বরেন্দ্রনারায়ণ মুখোপাধ্যায় অবশ্য বললেন, ‘‘বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন। মন্তব্য করব না।’’
আদালত সূত্রের খবর, দু’পক্ষের বক্তব্য লিখিত আকারে জমা দিতে বলার পাশাপাশি বিচারপতি মন্তব্য করেছেন, অ্যাডিশনাল চিফ ইঞ্জিনিয়ার পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফাঁকা রাখা যায় না। যাঁরা পদোন্নতি পেয়েছেন, তাঁরা আপাতত কাজ করুন। রায় দেওয়ার পরে পরবর্তী বিষয় দেখা যাবে। এক কর্মীর এ নিয়ে মন্তব্য, ‘‘রায় ইন্টারভিউয়ের বিরুদ্ধে গেলে এই ক’দিনের কাজের বেতন তাঁরা পাবেন তো? এই প্রশ্নও তোলা হয়েছিল আদালতে। কিন্তু আপাতত এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি বিচারপতি।’’