ফাইল চিত্র।
আশঙ্কাই সত্যি হল! শিয়ালদহ মেন, বনগাঁ এবং হাসনাবাদ শাখায় একাধিক ট্রেন বাতিল থাকায় শনিবার সকাল থেকেই চরম ভোগান্তির শিকার হলেন নিত্যযাত্রীরা। বিভিন্ন স্টেশনে দাঁড়িয়ে থেকেছে একের পর এক ট্রেন। বহু ট্রেনেই মাত্রাতিরিক্ত ভিড়। বসার জায়গা পাওয়া তো দূরের কথা, অনেকে ট্রেনেই উঠতে পারেননি বলে অভিযোগ। অনেককেই লাইন ধরে হাঁটতে দেখা গিয়েছে। রোজ যে সংখ্যায় লোকাল ট্রেন চলে এই সব শাখায়, তার ৩৭ শতাংশ ট্রেন বাতিল করা হয়েছিল। বাকি ট্রেন টাইম টেবল মেনে চলবে বলেই জানিয়েছিল রেল। কিন্তু শনিবার যাত্রীদের অভিজ্ঞতা, কোনও ট্রেন নির্দিষ্ট সময়ে তো চলেইনি, উল্টে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেছে বিভিন্ন স্টেশনে। রেল জানিয়েছে, দমদমের কাজ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই শেষ হবে।
দমদম স্টেশনে নন-ইন্টারলকিংয়ের কাজ শুরু হয়েছে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে। পূর্ব রেল জানিয়েছিল, নন-ইন্টারলকিংয়ের ওই কাজ চলবে টানা ৫২ ঘণ্টা। এই তিন শাখায় মোট ৮৯২টি ট্রেন চলে। তার মধ্যে শনি এবং রবিবার ৭৪৯টি ট্রেন চলবে। নন-ইন্টারলকিংয়ের কাজের জন্য বাতিল করা হয়েছে ১৪৩টি লোকাল। তাই অনেকেই ভেবেছিলেন তেমন অসুবিধা হবে না। কিন্তু শনিবার সকালে বেরিয়ে কার্যত বিপদেই পড়েন যাত্রীরা।
নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, নির্ধারিত সময়ে ট্রেন আসেনি। কোনও ট্রেন ৩ ঘণ্টা দেরিতে চলেছে, কোনওটা আবার চার ঘণ্টা। ফলে ভিড় বেড়েছে ট্রেনে। অনেকের দাবি, কখন কোন ট্রেন আসবে তা স্টেশনে ঘোষণা করা হচ্ছে না। রেলের কাছেই সঠিক তথ্য ছিল না বলেও অভিযোগ যাত্রীদের।
শুধু লোকাল নয়, কয়েকটি এক্সপ্রেসও বাতিল করা হয়েছে। শনিবার শিয়ালদহ-জঙ্গিপুর এক্সপ্রেস, আসানসোল ইন্টারসিটি এবং শিয়ালদহ-সিউড়ি এক্সপ্রেস বাতিলের কথা ঘোষণা করেছিল রেল। তবে বেশ কয়েকটি দূরপাল্লা ট্রেন দেরিতে চলেছে। দার্জিলিং মেলে নিউ জলপাইগুড়ি থেকে ফিরছিলেন বেলঘরিয়ার বাসিন্দা রিতিকা সাহা। ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয় তাঁকেও। তিনি বলেন, ‘‘শনিবার ভোর সাড়ে পাঁচটায় শিয়ালদহ ঢোকার কথা ছিল। কিন্তু ভোরবেলা দমদম এবং বিধাননগরের মাঝে ট্রেন দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়। তিন ঘণ্টা একই জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে দেখে বাবা-মাকে নিয়ে ট্রেন থেকে রেললাইনে নামতে বাধ্য হই। তার পর রাস্তা খুঁজে বেড়াতে হয়। ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মধ্যে পড়তে হয়েছিল।’’ তাঁর অভিযোগ, টিকিট পরীক্ষক বা আরপিএফ কেউই সহযোগিতা করেননি। রেলের তরফেও যাত্রীদের কিছু বলা হয়নি।
শনিবার সকালে বসিরহাট থেকে সকাল সাড়ে ১০টায় ট্রেনে উঠেছিলেন মধ্য কলকাতার একটি অফিসের কর্মী লাল্টু দাস। তিনি বলেন, ‘‘অনেকগুলো ট্রেন পাল্টে কোনও রকমে ঘণ্টা তিনেক ধরে দমদম ক্যান্টমেন্টে পৌঁছই। তার পর লাইন ধরে হেঁটে দমদম জংশন। সেখান থেকে মেট্রো ধরে অফিস পৌঁছই।’’
শ্যামনগর স্টেশনে দাঁড়িয়ে স্থানীয় বাসিন্দা অরিন্দম সেন বলেন, ‘‘এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছি শিয়ালদহ যাওয়ার জন্য কোনও ট্রেন নেই। তার উপর এত ভিড়। আগের ট্রেন ভিড়ের জন্য ধরতে পারিনি।’’