প্রবল হচ্ছে জনমত, ফেসবুক থেকে ছবি সরলো কমিশনারের

‘প্রভাবশালী তত্ত্ব’ নিয়ে জনমত প্রবল হতেই ‘ফেসবুক’ থেকে একাধিক মন্ত্রী, পুলিশ কর্তার সঙ্গে থাকা ছবি সরিয়ে দিলেন নিখোঁজ সঙ্গীতা কুণ্ডু যে সংস্থায় কাজ করতেন, তার কর্তা তথা জিম-পার্লার মালিক পরিমল সরকার।

Advertisement

কিশোর সাহা ও অনির্বাণ রায়

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৬ ০২:০১
Share:

ভক্তিনগর থানায় বিক্ষোভ মহিলা সমিতির। — বিশ্বরূপ বসাক

‘প্রভাবশালী তত্ত্ব’ নিয়ে জনমত প্রবল হতেই ‘ফেসবুক’ থেকে একাধিক মন্ত্রী, পুলিশ কর্তার সঙ্গে থাকা ছবি সরিয়ে দিলেন নিখোঁজ সঙ্গীতা কুণ্ডু যে সংস্থায় কাজ করতেন, তার কর্তা তথা জিম-পার্লার মালিক পরিমল সরকার। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পরিমলবাবুর নিজের ও সংস্থার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে কোনও পুলিশ কর্তা কিংবা মন্ত্রীর সঙ্গে ছবি দেখা যাচ্ছে না। যা কি না বুধবার অনেক রাত পর্যন্ত ছিল। গোটা ঘটনায় পুলিশের উপরেও চাপ বেড়েছে।

Advertisement

এদিনই পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব ফের উদ্বেগ প্রকাশ করে সিপিকে দ্রুত সঙ্গীতার হদিস করার নির্দেশ দিয়েছেন। মন্ত্রী বলেছেন, ‘‘প্রভাবশালী তত্ত্ব বলে কিছু হয় না। সঙ্গীতার হদিশ না পেলে শিলিগুড়িতে মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে যাবে। সেটা হতে পারে না। পুলিশকে যে করেই হোক হদিশ করতে হবে। সেটা সিপিকে ফের বলেছি।’’ মন্ত্রী জানান, মামলাটিকে ঘিরে নানা গাফিলতির যে প্রশ্নও উঠেছে সেগুলি দেখে উচ্চ পদস্থ পুলিশ অফিসারদের তরফে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

পুলিশ সূত্রের খবর, তদন্তে কেন গতি আসছে না, সেই প্রশ্নে স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিমকেও (সিট) সতর্ক করেছেন শিলিগুড়ির সিপি চেলিং সিমিক লেপচা। ঘরে-বাইরে চাপে পড়ে পুলিশও নড়েচড়ে বসতে বাধ্য হয়েছে। পরিমলবাবুকে তো বটেই, তাঁর সংস্থার কর্মীদের দফায় দফায় জেরা শুরু হয়েছে। সিপি বলেন, ‘‘অনেক তথ্য পেয়েছি। সবই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

Advertisement

সিট সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই পুলিশের কাছে খবর পৌঁছেছে, পরিমলবাবু ও সঙ্গীতা, দুজনের নামেই অগস্ট মাসে কলকাতাগামী একটি ট্রেনে টিকিট কাটা হয়েছিল। তা কতটা সত্যি সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদিও পরিমলবাবু সে কথা মানতে চাননি। তিনি আগেই বলেছেন, ‘‘আমিও শুনেছি সঙ্গীতাকে নাকি এনজেপিতে পদাতিক এক্সপ্রেসের সময়ে দেখা গিয়েছিল। পুলিশ খতিয়ে দেখলেই সব বোঝা যাবে।’’

গত ১৭ অগস্ট সেবক রোডে কর্মক্ষেত্র থেকে নিখোঁজ হন ২৭ বছরের সঙ্গীতা। স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পরে ওই তরুণী জিম মালিক পরিমলবাবুর সেবক রোডের অফিসের উপরের ফ্ল্যাটেই থাকতেন। সেখানে নাচের স্কুলও খুলেছিলেন। সেখান থেকে নিখোঁজ হতেই নিয়োগকারী সংস্থার কর্ণধারের ভূমিকা নিয়ে সহ্গীতার পরিবারের পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়। পরিমলবাবু নিজেই অবশ্য ‘মিসিং ডায়েরি’ করেছিলেন ২৬ অগস্ট। পরে তাঁর বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন সঙ্গীতার মা অঞ্জলিদেবী ও দাদা শম্ভুবাবু। তা নিয়ে পরিমলবাবুর বিরুদ্ধে অপহরণের মামলাও হয়।

ঘটনাচক্রে, সঙ্গীতা নিখোঁজের পরে একাধিক জিমের উদ্বোধন করান পরিমলবাবু। একটি জিম উদ্বোধন করেন এক মন্ত্রী। আরেকটি জিম উদ্বোধন করেন শিলিগুড়ির পুলিশ কর্তা। সেই ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন পরিমলবাবু। সেই সঙ্গে আরেক মন্ত্রী তাঁর পার্লারে চুল কাটাতে গেলে তাঁর সঙ্গে তোলা ছবিও নিজের ও সংস্থার ‘ফেসবুক’-এ পোস্ট করেন পরিমলবাবু। অপহরণের মামলা দায়েরের পরে তরুণীর পরিবার ও পড়শিদের পক্ষ থেকে ওই ছবি সামনে রেখে ‘প্রভাবশালী’ হিসেবে নিজেকে দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে কি না, সেই প্রশ্ন তোলা হয়। সেই খবর পৌঁছয় মন্ত্রীদের কাছেও। কেন তাঁদের না জানিয়ে ওই ধরনের ছবি ব্যবহার হচ্ছে, তা নিয়ে একাধিক মন্ত্রীর পক্ষ থেকে সতর্ক করা হলে রাতারাতি ছবি সরিয়ে ফেলা হয় বলে সংস্থা সূত্রের খবর।

এ দিন সিপিএমের মহিলা সংগঠনের পক্ষ থেকে ভক্তিনগর থানায় বিক্ষোভ দেখিয়ে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। সংগঠনের অভিযোগ, থানার একাংশ গোড়া থেকে গড়িমসি করায় ‘সিট’ গঠন করতে হয়েছে। তাঁরা জানান, দ্রুত রহস্যের কিনারা না হলে লাগাতার বিক্ষোভ দেখাবেন।

(সহ প্রতিবেদন: কৌশিক চৌধুরী)।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement