মুকুল রায় ও দিলীপ ঘোষ। ফাইল চিত্র।
মুকুল রায়ের স্ত্রী-কে হাসপাতালে দেখতে যাওয়া নিয়ে বিজেপি-র অন্দরের বিতর্ক আরও এক ধাপ এগোল। মুকুল-পত্নী অসুস্থ কৃষ্ণা রায়কে দেখতে যাওয়া নিয়ে মুকুলের সঙ্গে দিলীপের সম্পর্কের শৈত্য প্রকাশ্যে এসেছিল। বুধবার তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় হাসপাতালে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই যান দিলীপ। তবে তখন মুকুল সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। মুকুল পরে বলেন, ‘‘উনি আমাকে বা অন্য কাউকে বলে তো হাসপাতালে যাননি। কাকে দেখতে গিয়েছিলেন, তা-ও জানি না!’’ তার জবাব দিতে গিয়েই শুক্রবার দিলীপ বলেন, ‘‘অসুস্থকে দেখতে হাসপাতালে যাওয়ার আগে কাউকে জানিয়ে যেতে হয় নাকি!’’
অভিষেকের ঠিক পরেই তিনি কেন হাসপাতালে গিয়েছিলেন, সেই প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে দিলীপ বলেন, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যাওয়ায় আমার চিন্তা বেড়ে গিয়েছিল।’’দিলীপের এই অভিষেক সংক্রান্ত বক্তব্য নিয়ে ইতিমধ্যেই জ্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক মহলে। অনেকের মতে, তৃণমূলের অঘোষিত দু’নম্বর অভিষেকের হাসপাতালে যাওয়া এবং মুকুলের পুত্র শুভ্রাংশুর সঙ্গে বেশ খানিকক্ষণ কথা বলাতেই ‘চিন্তা’ বেড়ে গিয়েছিল দিলীপের। যে ‘চিন্তা’-র মূলে ছিল পিতা-পুত্রের সম্ভাব্য তৃণমূল যোগের সাম্প্রতিক জল্পনা। তবে দিলীপের ঘনিষ্ঠদের দাবি, ওই বক্তব্যে মোটেই ‘রাজনৈতিক’ কিছু ছিল না। তাঁরা বলছেন, অভিষেক মুকুলের স্ত্রী-কে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছেন খবর পেয়ে দিলীপ মুকুল-জায়ার অসুস্থতা নিয়ে ‘উদ্বিগ্ন’ হয়ে পড়েছিলেন। সেই ভিত্তিতেই ওই মন্তব্য বিজেপি রাজ্য সভাপতির।
প্রসঙ্গত, বুধবার সন্ধ্যায় অভিষেক আচমকাই ই এম বাইপাসের ধারের হাসপাতালে মুকুল-জায়াকে দেখতে চলে যান। তার ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই পৌঁছন দিলীপ। সেটাও এতটাই তাৎক্ষিণক সিদ্ধান্ত ছিল যে, সেই সফরের কথা সংবাদমাধ্যমকে জানানো হয় একেবারে শেষ মুহূর্তে। এর পরে বৃহস্পতিবার সকালে মুকুলকে ফোন করে তাঁর স্ত্রী-র স্বাস্থ্য সম্পর্কে খোঁজ নেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
গত প্রায় তিন সপ্তাহ ধরেই অসুস্থ মুকুল-জায়া কৃষ্ণা। এখন শারীরিক অবস্থার অবনতি হলেও করোনা ও তার পরবর্তী নানা সমস্যায় ভুগছেন আগে থেকেই। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় গত ১৪ মে। অন্য দিকে, করোনা আক্রান্ত হন মুকুলও। কিন্তু তিনি বাড়িতেই নিভৃতবাসে ছিলেন। তার পরে বিজেপি-র রাজ্যনেতারা সে ভাবে মুকুল ও কৃষ্ণার খোঁজ নেননি বলে আগেই ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছিলেন শুভ্রাংশু। এর পর বিজেপি-র সমালোচনা করে ফেসবুকে পোস্টও করেন তিনি। তখন থেকেই শুরু হয় তৃণমূল ঘনিষ্ঠতার সম্ভাবনা। এর পরে অভিষেকের হাসপাতালে যাওয়া ও শুভ্রাংশুর সঙ্গে কথা বলা সেই জল্পনা আরও বাড়িয়ে দেয়।
তবে অভিষেক জানিয়েছেন, ছোটবেলা থেকেই তিনি ‘মাতৃসমা’ কৃষ্ণার ঘনিষ্ঠ। একই সুরে শুভ্রাংশু বলেছেন, তাঁদের পারিবারিক সম্পর্ক অনেক দিনের। সেই সঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘‘রাজনৈতিক মতপার্থক্য সত্বেও অভিষেকের সৌজন্য নজির গড়ার মতো।’’ তবে শুভ্রাংশু এখন চাইছেন মা আগে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরুন। তিনি বলেন, ‘‘আমি সঠিককে সঠিক আরবেঠিককে বেঠিক বলি। তবে এখন রাজনীতির কথা নয়। সবাই প্রার্থনা করুন, মা যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে বাড়ি আসেন।’’