শুটআউটের পরে তদন্তে আবাসন চত্বরে পুলিশ। বুধবার নিউ টাউনে। নিজস্ব চিত্র।
অফিসের কাজ করছিলাম। ঘরে বসে। আচমকাই ফটফট শব্দ! প্রথমে চমকেই গিয়েছিলাম। গুলির শব্দ? আমাদের আবাসনে? জানলা দিয়ে উঁকি মারতেই দেখি, নীচে পুলিশ ছোটাছুটি করছে। আরও কয়েক বার ফটফট শব্দ শুনতে পেলাম। এ বার বুঝলাম, গুলিই চলছে। দেখেশুনে মনে হল, আমার উল্টো দিকের পাঁচতলা বিল্ডিংয়ের ভিতরে যেন কিছু ঘটছে। ওই দৃশ্য দেখেই সব কিছু কেমন তালগোল পাকিয়ে গেল। টিভিতে এমন দৃশ্য অনেক দেখেছি। তা বলে একেবারে নিজের আবাসনে!
কী করব, বুঝে উঠতে পারছিলাম না। আমার কয়েক জন আত্মীয় বাইরে ছিলেন। প্রথমে তাঁদেরই ফোন করি। তাঁরা সিঁড়ি দিয়ে উঠছেন শুনে কিছুটা হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম। তত ক্ষণে আবাসনের বাসিন্দাদের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে মেসেজ চালাচালি শুরু হয়ে গিয়েছে। কেউ যাতে ফ্ল্যাট ছেড়ে না-বেরোয়, সেই ব্যাপারেও সতর্ক করা হয়। হঠাৎ পুলিশ ঢুকে কেন গুলি চালাচ্ছে, বাসিন্দাদেরও অনেকে সেটা বুঝতে পারছিলেন না। শেষে জানতে পারলাম, উল্টো দিকের বিল্ডিংয়ে নাকি পঞ্জাবের দু’জন দুষ্কৃতী ঢুকে ঘাঁটি গেড়ে ছিল। তাদের ধরতে এসেই এই কাণ্ড! একটু পরে আরও শুনলাম, দু’জনেই মারা গিয়েছে। পুলিশের এক জন আহত হয়েছেন।
শুনলাম বটে, কিন্তু নীচে নামার সাহস পেলাম না। জানলা দিয়েই দেখলাম, নীচে পুলিশ থিকথিক করছে। এমনিতে এই আবাসন অনেক বড়। তবে বেশির ভাগ বিল্ডিংয়েই ফ্ল্যাট-মালিকেরা থাকেন না। এই আবাসনের বেশির ভাগ আবাসিকই ভাড়াটে। সত্যি কথা বলতে গেলে, এই আবাসনে কোনও আবাসিক কমিটিই নেই। একটি ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কমিটি আছে। আমি তার যুগ্ম-সম্পাদক। বেশির ভাগ ভাড়াটে থাকায় এবং আবাসিক কমিটি না-থাকায় আবাসনের বাসিন্দাদের মধ্যে যোগাযোগও কম। ফলে কখন, কোন ফ্ল্যাটে কে আসছে, তা অনেক সময় জানাও যায় না। আবার অনেকে এখানে থাকেন, মুখচেনা। কিন্তু তাঁদের ব্যাপারে সবিস্তার তথ্য থাকে না।
এই যে দু’জন দুষ্কৃতী ঘাঁটি গেড়ে ছিল, তাদের হয়তো চোখে দেখেছি। কিন্তু আলাপ-পরিচয় হয়নি। তবে শুনলাম, এ দিন সকালে কয়েক জন নাকি ওই দু’জনকে আবাসনের ভিতরে থাকা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থেকে ডিম, দুধ কিনতে দেখেছেন। তবে দেখে তো মানুষকে বোঝার উপায় থাকে না।
এমনিতে এই আবাসন নিরুপদ্রব। মাঝেমধ্যে পুলিশের টহলদার গাড়ি আসে। এলাকাটা নিরালা হলেও তেমন কোনও ভয়ভীতি আমাদের ছিল না। জানতাম, নিরাপদেই আছি। এই ঘটনা আমাদের চোখ খুলে দিল!
(লেখক ওই আবাসনের বাসিন্দা)