ভেজাল মদ আটকানোর সরকারি নজরদারি ব্যবস্থায় ত্রুটির কথা কার্যত মেনে নিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাদের হুঁশিয়ারি দিয়ে জানালেন, এ ব্যাপারে কোনও রকম গাফিলতি আর বরদাস্ত করা হবে না। দায়িত্ব পালন করতেই হবে সংশ্লিষ্ট কর্তাদের।
কালনার অঘোরনাথ পার্কের সভায় শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী নদিয়ার শান্তিপুরে বিষমদে মৃত্যু নিয়ে যা বলেছেন, তার নির্যাস হল— ফাঁক থেকে গিয়েছে নজরদারির ব্যবস্থায়। যাঁদের উপরে এই মদ ঢোকা আটকানোর ভার ছিল, তাঁরাই দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করেননি। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘খুব দুঃখজনক ঘটনা। শান্তিপুরে কয়েক জন মারা গিয়েছেন বিষাক্ত মদ খেয়ে। আমি বিশ্বাস করি, যাঁরা খেয়েছেন তাঁরা বুঝেশুনে খাননি।’’ মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি, ‘‘পুলিশ, প্রশাসন ও আবগারি দফতরকে ভাল কাজ করতে হবে। এখনও এক শতাংশ লোক আছেন যাঁরা বসে বসে কাজ করেন। আমি মনে করি, আপনাদের রাখা হয়েছে কাজগুলো দেখার জন্য, যাতে ভেজাল মদ বিক্রি না হয়।’’
একই দিনে রাজ্যের মন্ত্রী তথা নদিয়া জেলা তৃণমূলের পর্যবেক্ষক পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিষমদে মৃতদের পরিবার-পিছু দু’লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণের চেক তুলে দিতে গিয়ে ভর্ৎসনা করেছেন শান্তিপুরের বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্যকে। শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের ফাঁকেই অরিন্দমকে তিনি বলেন, এত বড় কাণ্ড সারা পৃথিবী জানে, আর বিধায়ক খোঁজ রাখেন না! ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরে তিনি বিধানসভায় কী করছিলেন? বিষ-চোলাই আটকাতে প্রশাসনিক ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে এ দিন পার্থবাবু বলেন, ‘‘যাঁদেরকে যা বলার, বলা হয়েছে।’’ শান্তিপুরের অনেক জায়গায় এখনও চোলাইয়ের কারবার চলছে বলা হলে পার্থবাবুর মন্তব্য, ‘‘আপনারা যদি প্রশ্ন করে তাদের সতর্ক করে দেন, তা হলে প্রশাসন কাজ করবে কী করে?’’
আরও পড়ুন: রক্তের ‘দাম’ ফেরানোর নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর
হাসপাতালে অসুস্থদের সঙ্গে দেখা করে পার্থবাবু চৌধুরীপাড়ায় মৃত ও অসুস্থদের বাড়ি গিয়েও তাঁদের আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলেন। সেখানে কয়েক জন স্থানীয় মহিলা তাঁর পথ আটকে অভিযোগ করেন, ‘‘চোলাই বন্ধ না হলে আমরাও খাওয়া শুরু করব!’’ পার্থবাবু তাঁদের আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘‘চিন্তিত হবেন না। প্রশাসনকে বলেছি।’’ পার্থবাবু চলে যাওয়ার পরে সিপিএম ও কংগ্রেসের দু’টি প্রতিনিধিদল চৌধুরীপাড়ায় এসে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে। তবে বাধার সামনে পড়েন বিজেপির প্রতিনিধিরা। দলের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়-সহ বিজেপি নেতাদের গাড়ির রাস্তা আটকে, শুয়ে পড়ে, কালো পতাকা দেখিয়ে, ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ দেখান তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা। তাঁরা বিজেপি নেতাদের পথ আটকে বলতে থাকেন, ‘‘ঘটনার চার দিন পরে কী করতে এসেছেন?’’ উভয় পক্ষের মধ্যে খানিক ধস্তাধস্তি হয়। তার পরে অবশ্য বিজেপি নেতারা এলাকায় ঢুকে বাড়ি-বাড়ি যান। মৃত ৬ জনের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণও দেন।
আরও পড়ুন: চাষিদের আয় বেড়েছে তিন গুণ: মমতা
মৃতদের মধ্যে কালনা ও ঝাড়খণ্ডের দুই বাসিন্দার আত্মীয়েরা অবশ্য এ দিন টাকা পাননি। প্রশাসন সূত্রের খবর, কালনার বাসিন্দাকে বর্ধমান থেকে টাকা দেওয়া হবে। ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দার কিছু কাগজপত্র এখনও খতিয়ে দেখা বাকি রয়েছে। বিষাক্ত মদ খেয়ে মৃত এলাকার চোলাই কারবারি চন্দন ওরফে গুলবার মাহাতোর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। পার্থবাবু জানান, এফআইআরে নাম রয়েছে, এমন কাউকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না। তবে চন্দনের ভাই লক্ষ্মীর (এঁর নাম এফআইআরে নেই) পরিবার ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছে।