মুখোমুখি। প্রার্থী হওয়ার পরে দিদির সঙ্গে এই প্রথম দেখা। বিমানবন্দরেই অপেক্ষা করছিলেন নায়ক। মঙ্গলবার হায়দরাবাদ থেকে ফিরলেন দেব, মমতা গেলেন দিল্লি। তার ফাঁকে কথা হল দু’জনের। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
ভোটের ময়দানে লড়াটা তাঁর কাছে কঠিন ‘চ্যালেঞ্জ’ হতে পারে। কিন্তু তরুণ প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করতে সেই ‘চ্যালেঞ্জ’ তিনি নিচ্ছেন। মানসিক ভাবে তিনি প্রস্তুত। প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হওয়ার পর মঙ্গলবার কলকাতায় ফিরে দেবের প্রথম কথা ছিল এটাই।
হায়দরাবাদ থেকে শু্যটিং সেরে এ দিন সকালেই কলকাতা বিমানবন্দরে নামেন দেব। এ দিনই যে মমতা দিল্লি যাওয়ার জন্য বিমান ধরতে আসবেন, সেটা জানতেন তিনি। নেত্রীর জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন নায়ক। দেখা হওয়ার পরে দু’জনের মধ্যে আধ ঘণ্টা কথা হয়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “দেব অনেক ভোটে জিতবে।” শুধু দেবই নয়। মমতা দাবি করেন, “বেশ কিছু দল হারার জন্য প্রার্থী দিচ্ছে। আমরা জিতিয়ে আনব বলে প্রার্থী দিচ্ছি। মুনমুন সেন, সন্ধ্যা রায়ও জিতবেন। ইন্দ্রনীল, সৌমিত্র রায়রাও জিতবে।”
দেবও আশা করছেন, সিনেমায় যেমন দর্শক তাঁকে পছন্দ করে, তেমনই ভোট-যুদ্ধেও মানুষের ভালবাসা পাবেন। ঘাটালের ‘ভূমিপুত্র’ বলেন, “চন্দ্রকোনা টাউনে তিন বছর স্কুলে পড়েছি। ঘাটাল থেকে দাঁড়াচ্ছি শুনে বাবা-মা খুবই আপ্লুত।”
আগামী সপ্তাহ নাগাদ দেব ঘাটাল যেতে পারেন বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। তার আগে নেত্রীর সাক্ষাৎ তাঁকে উৎসাহিত করেছে। মমতা তাঁর হয়ে প্রচারে যাবেন বলেছেন। রাজনীতিতে নবাগত দেবকে শিক্ষক হিসেবে মমতা কী শেখাবেন? জবাব আসে, “মায়ের পেট থেকে পড়েই সবাই সব কিছু জানতে পারে না। রাজনীতি পৃথিবীর বাইরের জিনিস নয়! আমরাও এক দিনে রাজনীতি শিখিনি। অভিজ্ঞতা দিয়ে শিখেছি। ও-ও অভিজ্ঞতা দিয়ে শিখবে।” দেবকে নিয়ে তাঁর পরিকল্পনার কথাও বলেন মমতা। “ওকে তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব করবে দেব। ছাত্র ও যুবদের ভালবাসা, বয়স্কদের আশীর্বাদ থাকবে। তরুণদের এগিয়ে না দিলে উন্নয়ন হবে কী ভাবে?” নেত্রীর কথার সূত্র ধরে নায়ক বলেন, “বড় বড় কোনও প্রতিশ্রুতি দিতে চাই না। শিখতে এসেছি। কিছু করতে চাই, ভাল করতে চাই।”
বাংলা সিনেমার ব্যস্ত নায়ককে প্রার্থী করছেন মমতা। সামনে ভোট। অথচ হাতে বেশ কয়েকটি ছবির শু্যটিংয়ের কাজ বাকি রয়েছে। সিনেমা ও রাজনীতির মধ্যে দেব ভারসাম্য রাখবেন কী করে? দল সেই সুযোগ তাঁকে করে দেবে বলে ইঙ্গিত দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ওর নিয়মিত কাজে কোনও বিঘ্ন ঘটানো হবে না। সাংস্কৃতিক জগতে ওর কাজটাই ওর পরিচয়। আমি চাই দেব কাজের জগতে আরও নাম করুক। এ বার ও জনগণের পরিবারের সদস্য হয়ে গেল। তাদের সঙ্গে মিশুক।’’ মমতাকে ধন্যবাদ জানিয়ে দেবও বলেন, “তরুণ প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করা দরকার। দিদি আমাকে দাঁড় করিয়েছেন। জানি না, কতটা ভাল করব! এ বার মাঠে নামছি।”
তরুণদের সম্পর্কে কী ভাবছেন নায়ক? তাঁর কথায়, “তরুণ প্রজন্ম ভোট নিয়ে মাথা ঘামায় না। অথচ তারাই ভবিষ্যৎ। তাদের রাজনীতিতে অংশ নেওয়া দরকার। সরকার কী কাজ করছে, সেটাও জানা উচিত। এত দিন পর্দায় মানুষের জন্য ভাল কাজ করতাম। এ বার মাঠে নেমে পড়তে হবে।” তবে কাজটা যে কঠিন, সেটাও স্বীকার করছেন ‘খোকাবাবু’। বলছেন, “পাগলু ডান্স বা চাঁদের পাহাড় করা অনেক সহজ। কিন্তু মানুষের সঙ্গে থাকা, মানুষের হয়ে কাজ করা অনেক কঠিন।”