মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
বার্সেলোনা থেকে দুবাইয়ের উদ্দেশে রওনা হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার ভোরে দুবাই পৌঁছবেন তিনি এবং তাঁর সফরসঙ্গীরা। স্পেন ছাড়ার আগে কাতালোনিয়া সরকারের প্রেসিডেন্ট পেরে আরাগোনেস আই গার্সিয়া শুভেচ্ছাবার্তা পাঠান মমতাকে। বুধবার, সফরের শেষ দিনে বাংলার প্রতিনিধি দলের সঙ্গে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকও করেন গার্সিয়া। সেই বৈঠকে একাধিক ক্ষেত্রে বিনিয়োগের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছে বলে রাজ্য সরকার তরফে জানানো হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে মোটরগাড়ি উৎপাদন, পরিবেশ ও মেডিটেক, পর্যটন, তথ্যপ্রযুক্তির মতো ক্ষেত্র।
বুধবার কাতালোনিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী, মুখ্যমন্ত্রীর প্রধান উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়, শিল্প ও বাণিজ্য দফতরের প্রধান সচিব বন্দনা যাদব। স্পেনে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত দীনেশ পট্টনায়েকও উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে। কাতালোনিয়ার প্রেসিডেন্টকে মুখ্যমন্ত্রীর তরফ থেকে অভিবাদন জানানো হয়েছে।
বৈঠকের পর (বাঁ দিকে থেকে) আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়, হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী, পেরে গার্সিয়া, দীনেশ পট্টনায়েক এবং বন্দনা যাদব। —নিজস্ব চিত্র।
স্পেনের পর সংযুক্ত আরব আমিরশাহি সফর মুখ্যমন্ত্রীর। সেখানে অবশ্য শুধুমাত্র দুবাই শহরেই যাচ্ছেন তিনি। এই সফরে রাজ্যের মুখ্যসচিব দ্বিবেদী যাবেন দুবাই বন্দর পরিদর্শনে। রাজ্যের তাজপুরে গভীর সমুদ্র বন্দর করার ব্যাপারে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার। দুবাই বন্দরে গিয়ে সেখানকার পরিকাঠামো দেখবেন মুখ্যসচিব।
সন্ধ্যায় দুবাইয়ের ভারতীয় উপদূতাবাসে চা-চক্রে যোগ দিতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর সফরসঙ্গীরা। ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের ব্যাপারে উৎসাহ প্রকাশ করেছে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির লুলু (LuLu) শিল্পগোষ্ঠী। শুক্রবার সেই বৈঠক হওয়ার কথা। লুলু গ্রুপের কর্ণধার ইউসুফ আলি মুসালিয়াম ভেট্টিল আবদুল কাদের কেরলের ত্রিশূরের ভূমিপুত্র। তাঁর কাকা এমকে আবদ্দুলাহ এই সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা। সংস্থার প্রধান কেন্দ্র আবু ধাবি। কয়েক বছর ধরে রফতানি বাণিজ্য শুরু করেছে লুলু। তাদের হোটেল ও রিয়েল এস্টেট ব্যবসাও রয়েছে। কেরল ছাড়াও ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে লুলু গ্রুপের বিনিয়োগ রয়েছে। লখনউতে সবচেয়ে বড় শপিংমলটি তাদেরই নির্মিত। শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রবাসী ভারতীয়দের সঙ্গে আলাপচারিতায় যোগ দেবেন মমতা।
মূলত লগ্লি আনার লক্ষ্যেই স্পেন ও দুবাই সফরে এসেছেন মমতা। মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার কর্মসূচি সম্পন্ন হওয়ার পর সেই সম্ভাবনা উজ্জ্বল বলেই মনে করছে রাজ্য সরকার। স্প্যানিশ মুলুক থেকে বাংলায় বিনিয়োগের রাস্তা খুলতে শুরু করে দিয়েছে। মাদ্রিদ এবং বার্সেলোনার দুই শিল্পবৈঠকে স্পেনের শিল্পমহলের পক্ষ থেকে যে ভাবে সাড়া মিলেছে, প্রবাসী ভারতীয়েরা যে ভাবে রাজ্যে বিনিয়োগের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তাতে যথেষ্টই আশার আলো দেখছে মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গী ভারতীয় বাণিজ্যমহলও।
স্পেন ছাড়ার দিন কাতালোনিয়া সরকারের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বাংলার প্রতিনিধিদলের বৈঠকের পর সেই আশা এবং সম্বাবনা আরও জোরালো হয়েছে। আগামী নভেম্বরে কলকাতায় যে বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন হতে যাচ্ছে, তাতে কাতালোনিয়ার প্রতিনিধিদল পাঠানোর জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফে।
কাতালোনিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিবের বৈঠক। —নিজস্ব চিত্র।
মমতার এই স্পেন সফরের মূল উদ্দেশ্য দু’টি। বাংলার ফুটবলের উন্নতি এবং রাজ্যে লগ্নি আনা। স্পেনের ফুটবল লিগ লা লিগার সঙ্গে মাদ্রিদে সমঝোতাপত্র (মউ) সই হয়েছে রাজ্য সরকারের। মাদ্রিদে বাণিজ্য সম্মেলনও করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। স্পেনের বণিকমহলকে মমতার বার্তা ছিল, ‘‘বাংলায় সব আছে। আপনারা এসে দেখে যান।’’ বার্সেলোনায় মমতা বলেছেন, ‘‘বাংলা এখন দেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। বাংলাই গেম চেঞ্জার। আপনারা আসুন। সব পাবেন বাংলায়।’’ মাদ্রিদের সব কর্মসূচিতেই হাজির ছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক তথা ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রাক্তন প্রধান সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। শিল্পবৈঠকের মঞ্চে সৌরভ ঘোষণা করেছিলেন, বাংলায় তাঁর দ্বিতীয় ইস্পাত কারখানাটি গড়ে উঠতে চলেছে। পাঁচ-ছ’মাসের মধ্যেই সেই কাজ শুরু হবে পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনীতে।
মুখ্যমন্ত্রীর গোটা স্পেন সফরে তাঁর সঙ্গে ছিলেন সে দেশে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত দীনেশ পট্টনায়েক। ক্রীড়াচুক্তি স্বাক্ষর থেকে শুরু করে শিল্প সম্মেলন, সব মঞ্চেই ছিলেন তিনি। বাংলার শিল্পায়নের জন্য সওয়ালও করেছেন দীনেশ।