প্রশাসক: হাওড়ার শরৎ সদনে প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
কয়েক দিন আগেই নদিয়া জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে সেখানকার আইনশৃঙ্খলার ব্যর্থতা নিয়ে পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের একহাত নিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার হাওড়ার প্রশাসনিক বৈঠকেও তারই পুনরাবৃত্তি ঘটল। সাম্প্রতিক কালে হাওড়ায় সব থেকে বড় ঘটনা ধুলাগড়ের অশান্তি। তার মোকাবিলায় তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব এবং পুলিশ-প্রশাসন যে ব্যর্থ, তা এ দিন জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
ধুলাগড়ে অশান্তি হয়েছে বেশ কয়েক মাস আগে। অশান্তির জেরে জেলার পুলিশ সুপার, স্থানীয় থানার আইসি-কে বদলি করা হয়েছে। ওই অশান্তি নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ময়দানেও নেমেছিল। ধুলাগড় নিয়ে এ যাবৎ তেমন মন্তব্য করেননি মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু এ দিন হাওড়া শরৎ সদনে প্রশাসনিক বৈঠকে ধুলাগড় নিয়ে দলীয় নেতৃত্ব ও পুলিশ-প্রশাসনকে ভর্ৎসনা তো করলেনই, পাশাপাশি সকলকেই আরও সতর্ক হওয়ার বার্তাও দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ধুলাগড়ের ঘটনা সামাল দিতে না পারার অভিযোগ মূলত পাঁচলার বিধায়ক গুলশন মল্লিক ও সাঁকরাইলের বিধায়ক শীতল সর্দারের বিরুদ্ধে। এ দিন শীতলবাবু একাধিক বার কিছু বলতে উঠলেই তাঁকে ধমকে বসিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। একই ভাবে গুলশনকেও কড়া ভাষায় সতর্ক করেছেন তিনি। এ দিন গুলশন জানান, তাঁর এলাকায় কোনও সমস্যা নেই। তখনই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘তোমার ওখানে সব ঠিকঠাক আছে তো মারামারি কর কেন?’’ ওই বিধায়ককে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘দেখ গুলশন তোমায় একটা কথা বলি, হোয়েন ইউ আর দ্য লিডার, ইউ লিড অল, লিডার মাস্ট লিড অল।’’
এ দিনের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী সব বিডিও ও থানার আইসিদের বলেন, একটি এলাকা সম্পর্কে খোঁজ রাখতে গেলে সেখানে কতগুলি অঙ্গনওয়ারি কেন্দ্র, ক্লাব, মন্দির, মসজিদ, গুরুদ্বার, মিড ডে মিল সেন্টার রয়েছে তা নিয়ে ইনফরমেশন সেন্টার ম্যাপ তৈরি করতে হবে। তাঁর কথায়, ‘‘আচমকা কেউ বাইরে থেকে এল, আর সন্ত্রাস করে দিয়ে চলে গেল, এটা হবে না।’’
এর পরেই ধুলাগড়ের প্রসঙ্গ টেনে পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের বলেন, বাইরের কিছু গুন্ডা এসে গন্ডগোল করছে। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, পুরো বিষয়টিই পরিকল্পনা মাফিক করা হয়েছে। তাঁর আরও দাবি, ধুলাগড়ের ঘটনা দুই-তিন যুবকের গ্রাম্য বিবাদ ছিল। দলীয় নেতৃত্ব ও পুলিশ-প্রশাসন ঠিক মতো নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় কিছু বহিরাগত সেটা নিয়ে অশান্তি পাকানোর সুযোগ পেয়েছে।
আরও পড়ুন: আরও এক বার প্রণবকেই রাষ্ট্রপতি হিসাবে চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ধুলাগড়ের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির পাশে আমরা দাঁড়িয়েছি।’’ ধুলাগড়ের ঘটনা নিয়ে ময়দানে নেমে বিজেপি কেন্দ্রীয় সাহায্যের কথা বলেছিল। কিন্তু তা যে আসেনি, সেটা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘দিল্লি থেকে যে টাকা দিতে আসবে বলেছিল, সেটা তো কেউ দিতে আসেনি।’’ বৈঠকে হাওড়ার জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তী জানান, ধুলাগড়ে ২৫০টি বাড়ি ও দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জায়গা পরিষ্কার করে বাড়ি, দোকান তৈরি-সহ অন্যান্য সাহায্যও করা হয়েছে। এ ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্তদের ২৫ হাজার টাকা করে এককালীন অনুদান দেওয়া হয়েছে।
এই বৈঠকে হাওড়ার পুলিশ সুপার সুমিত কুমারকেও আরও সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘টনক নড়াতে টনিক দিতে হয়। পুলিশ গা বাঁচিয়ে চলবে, এটা হতে পারে না। কোনও খবর পেলে সেটাকে গুরুত্ব দিতে হবে।’’ পাশাপাশি পুলিশের সব মহলের প্রতি তাঁর বার্তা, ‘‘কেউ দাঙ্গা লাগানোর উস্কানি দিলে রেয়াত করবেন না।’’
জেলা পুলিশ কর্তাদের একাংশের মতে, মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে স্পষ্ট, ধুলাগড়ের ঘটনায় পুলিশ প্রথম থেকে গা-ছাড়া মনোভাব দেখায়। যার ফলে ঘটনাটা অন্য মাত্রা পায়। এর ফলে স্থানীয়রা তো বটেই, রাজ্যের অন্যত্রও বহু মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। রাজ্য বিজেপি সেটাকেই মূলধন করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু তাঁর সরকার যে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা বরদাস্ত করবে না, সেটাই এ দিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।