মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
রাজ্য মন্ত্রিসভায় রদবদল নিয়ে বেশ কিছু দিন ধরেই জল্পনা দানা বাধছিল। বৃহস্পতিবার নবান্ন সূত্রে খবর, তা যে কোনও দিন হয়ে যেতে পারে। তবে, প্রশাসনিক সূত্রে এ-ও জানা গিয়েছে, কোনও নতুন মুখ আসছেন না মন্ত্রিসভায়। শুধু বর্তমান মন্ত্রীদের মধ্যে দফতর ও দায়িত্বের অদলবদল করা হবে।
রাজ্য সরকারের সঙ্গে রাজভবনের সংঘাত কার্যত সপ্তমে পৌঁছেছে। এই পরিস্থিতিতে নতুন কাউকে মন্ত্রী করা হলে তাঁকে শপথ নেওয়ার জন্য রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হত। অনেকের মতে, সেই জটিলতার মধ্যে যেতে চাইছে না রাজ্য সরকার। তবে দফতরের অদলবদল করতে হলেও তার বিজ্ঞপ্তিতে রাজ্যপালের সই দরকার। সে ব্যাপারেও সংশয় প্রকাশ করছেন নবান্নের অনেক কর্তাই। নবান্নের একটি সূত্র জানাচ্ছে, দফতর বদল প্রক্রিয়ার যাবতীয় কাগজপত্র পৌঁছে গিয়েছে রাজভবনে। সেখান থেকে অনুমোদন দেওয়া হলেই সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি হয়ে যাবে। আগামী মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিদেশ সফরে রওনা হবেন। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী চান, বিদেশ সফরে যাওয়ার আগেই এই প্রক্রিয়া যাতে সম্পন্ন হয়ে যায়।
দফতর অদলবদল হলেও শাসকদলের অন্দরে এ নিয়ে জল্পনা ক্রমশ তীব্র হচ্ছে। কারণ, এর মধ্যে দিয়েই মন্ত্রীদের গুরুত্ব নির্ধারিত হবে। কার দফতর কমল, কার বাড়ল, কাকে গুরুত্বপূর্ণ দফতর থেকে সরিয়ে দিয়ে অপেক্ষাকৃত কম ওজনের দায়িত্ব দেওয়া হল—এ সবই ভবিষ্যতের রাজনীতির সূচক হিসাবে দেখা হয়। সেই প্রেক্ষাপটে মন্ত্রিসভার রদবদল ঘিরে শাসকদলে এখন আলোচনা তুঙ্গে। অনেকের মতে, সরকারি ভাবে না হলেও একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, বাবুল সুপ্রিয় পর্যটন দফতরের দায়িত্বে আর থাকতে চাইছেন না। মুখ্যমন্ত্রীকে তিনি সে কথা জানিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী তা মেনে নিয়েছেন বলেই খবর। তবে পর্যটনের দায়িত্ব কাকে দেওয়া হয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। অনেকে বলছেন, সেই দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে ইন্দ্রনীল সেনকে। তবে তা-ও এখনও জল্পনার স্তরে রয়েছে। তেমন হলে বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ হবে। কারণ, ইন্দ্রনীলের থেকেই বাবুলের হাতে পর্যটনের দায়িত্ব গিয়েছিল।
দফতর বদল নিয়ে অনেক জল্পনা রয়েছে। যেমন, বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের হাতে রয়েছে অচিরাচরিত শক্তি দফতরও। তাঁর হাত থেকে সেই দফতরটি অন্য কোনও মন্ত্রীকে দেওয়া হতে পারে। তার বদলে জ্যোতিপ্রিয় পেতে পারেন অন্য একটি দফতর। জল্পনা এই যে, জ্যোতিপ্রিয়কে আবার খাদ্য দফতরে ফেরানো হতে পারে। সে ক্ষেত্রে খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষকে অন্য কোনও দফতরের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে।
রাজ্য মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস এবং প্রবীণ রাজনীতিক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। বিদেশসফরের আগে এই মন্ত্রীদের দায়িত্ব মুখ্যমন্ত্রী আরও খানিকটা বৃদ্ধি করতে পারেন বলে জল্পনা তৈরি হয়েছে। তবে অরূপকে বিদ্যুৎ দফতর নিয়ে আরও বেশি মনোযোগী হতে বলতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী। কারণ, নবান্ন সূত্রের খবর, সম্প্রতি বিদ্যুৎ নিয়ে ‘সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী’ কর্মসূচিতে বেশ কিছু অভিযোগ জমা পড়েছে। তাই অরূপকে বাড়তি দায়িত্ব দেওয়ার পাশাপাশি নিজের দফতরেও বাড়তি সময় দিতে বলা হতে পারে। বন দফতরের প্রতিমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদার দায়িত্ব বাড়তে পারে বলেও জল্পনা রয়েছে। বিরবাহার কাজে মুখ্যমন্ত্রী সন্তুষ্ট বলেই প্রশাসনিক মহলের বক্তব্য।