Mamata Banerjee

‘চিন্তা করবেন না, হতাশ হবেন না, যত দূর দরকার লড়াই করব’, মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস চাকরিহারাদের

এই রায়ের প্রসঙ্গ টেনে নাম না করে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকেও কটাক্ষ করলেন তৃণমূলনেত্রী। প্রশ্ন তুললেন, সোমবার আদালত যে রায় দিয়েছে, তা তিনি শনিবার কী ভাবে জেনেছিলেন?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০২৪ ১৬:২৪
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। — ফাইল চিত্র।

কলকাতা হাই কোর্টের রায়ে যে শিক্ষকেরা চাকরি হারিয়েছেন, তাঁদের পাশে থাকার বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার রায়গঞ্জের জনসভা থেকে তিনি জানালেন, আদালতের সোমবারের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে উচ্চ আদালতে যাবেন তিনি। এই রায়কে ‘বেআইনি’ বলেও দাবি করলেন তিনি। পাশাপাশি, এই রায়ের প্রসঙ্গ টেনে নাম না করে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকেও কটাক্ষ করলেন তৃণমূলনেত্রী। প্রশ্ন তুললেন, সোমবার আদালত যে রায় দিয়েছে, তা তিনি শনিবার কী ভাবে জেনেছিলেন? তবে কি তাঁরাই রায় লিখে দিয়েছেন? ‘বিজেপির বিচারালয়’ বলেও কটাক্ষ করেছেন তিনি।

Advertisement

সোমবার রায়গঞ্জের চাকুলিয়ায় জনসভা করেন তৃণমূলনেত্রী মমতা। তৃণমূল প্রার্থী কৃষ্ণ কল্যাণীর হয়ে প্রচার করেন। সেই মঞ্চ থেকেই এসএসসি মামলা নিয়ে হাই কোর্টের রায় প্রসঙ্গে মুখ খোলেন তিনি। তুলে আনেন শুভেন্দুর বোমা ফাটানোর হুঁশিয়ারির প্রসঙ্গ। মমতা বলেন, ‘‘বোমা ফাটাবেন, বোমা? ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি চলে যাবে, এমন বোমা! আমিও বলে রাখি, আমরাও লড়ে যাব। লড়াই করব। রায়কে চ্যালেঞ্জ করছি। উচ্চ আদালতে যাব। আশা রাখুন।’’ এখানেই থামেননি মমতা। নাম না করে শুভেন্দুকে আরও কটাক্ষ করেছেন তিনি। কী ভাবে শুভেন্দু সোমবারের রায়ের কথা শনিবার জেনেছিলেন, সে প্রশ্নও তুলেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘ধিক্কার জানাই। কোর্ট কী রায় দেবে, তুই আগে জানলি কী ভাবে? সোমবার রায় দেবে, শনিবার জানলি কী ভাবে? যদি রায় নিজেরা লিখে না দিস? রায় নিজেরা তৈরি করে না দিস?’’ প্রসঙ্গত, শুভেন্দু গত শনিবার দাবি করেছিলেন, চলতি সপ্তাহে ‘বোমা’ পড়তে চলেছে! কোনও তারিখ না জানালেও বিরোধী দলনেতা দাবি করেন, আগামী সপ্তাহের ‘বোমা’য় ‘বেসামাল’ হয়ে যাবে তৃণমূল। সেই বোমার প্রসঙ্গ তুলেই মমতার পাল্টা খোঁচা, ‘‘বলছে বোমা ফাটাবে। বোমা কী? ২৬ হাজার লোকের চাকরি খেয়ে নিচ্ছে।’’

তবে মমতা এ-ও জানিয়েছেন, রায় যা-ই হোক চাকরিহারাদের পাশে রয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘যাঁদের চাকরি বাতিল করা হল, চিন্তা করবেন না, হতাশ হবেন না। কেউ জীবনের ঝুঁকি নেবেন না। আমরা পাশে আছি। যত দূর দরকার, লড়াই করব।’’ এর পর তিনি প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রসঙ্গও তুলেছেন। ইঙ্গিত দিলেন যে, প্রাক্তন বিচারপতির রায়ের নেপথ্যে আসলে রয়েছে বিজেপি। তিনি সোমবার জনসভায় বলেন, ‘‘এক জনকে দেখলেন না বিজেপির হয়ে ভোটে দাঁড়িয়ে গেলেন। তাঁর রায় ছিল (চাকরি বাতিলের রায়)। দেখলেন না সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে সরিয়ে দিয়েছিল। বলেছিল, নতুন ডিভিশন বেঞ্চ করে আলোচনা হোক। কাকে নিয়ে করবেন ডিভিশন বেঞ্চ? ‘বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে’! রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন।’’ মমতা জানিয়ে দেন, তিনি কোনও বিচারপতিকে নিয়ে বলছেন না। রায় নিয়ে বলছেন। সেই ‘অধিকার’ তাঁর রয়েছে। তবে বিচারালয়কে কটাক্ষ করতেও ছাড়েননি তিনি। বলেন, ‘‘এই এক হয়েছে বিজেপির বিচারালয়। না মন্দির, না মসজিদ। রাজনৈতিক বিচার। সেখানে অন্য লোক পিল করলে দেবে কিল। বিজেপি পিল (আবেদন) করলে বেল, আমরা পিল করলে জেল। এই তো অবস্থা। দীর্ঘ দিন ধরে চলছে। এটা বিচারপতিদের দোষ নয়। কেন্দ্রের দোষ। বিজেপি বসিয়েছে। যাতে তারা যা বলে, তা-ই করেন।’’

Advertisement

কলকাতা হাই কোর্ট সোমবার জানিয়েছে, এসএসসির প্যানেলের মেয়াদ শেষের পরে যাঁরা চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের জনগণের টাকা থেকে বেতন দেওয়া হয়েছে। চার সপ্তাহের মধ্যে সুদ-সহ সেই বেতন ফেরত দিতে হবে সকলকে। বছরে ১২ শতাংশ সুদে টাকা ফেরত দিতে হবে। এই নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘২৬ হাজার শিক্ষক মানে দেড় লক্ষ পরিবার। আট বছর তাঁরা চাকরি করেছেন। চার সপ্তাহে টাকা ফেরত কি সম্ভব? আপনারা পারবেন?’’ তার পরেই তাঁর আশ্বাস, ‘‘চিন্তা করবেন না শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্র-ছাত্রীরা। আর কেউ না থাকলেও আমরা পাশে রয়েছি। আরও ১০ লক্ষ চাকরি তৈরি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement