মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
পোস্তায় জগদ্ধাত্রী পুজোর উদ্বোধন মঞ্চ থেকে কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরাসরি টক্কর নেওয়ার বার্তা দিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে মমতা এ-ও জানান, সরকারি পতিত জমি নিয়ে ভূমি ও ভূমিরাজস্ব দফতরের কিছু কর্তা বেনিয়ম করছেন। তা রুখতে শুক্রবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে এক জন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতিকে নেতৃত্বে রেখে কমিটি গড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, পোস্তার মঞ্চ থেকেই শুক্রবার চন্দননগরের বেশ কয়েকটি জগদ্ধাত্রী পুজোরও ভার্চুয়াল উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। এমনিতে প্রতি বারই পোস্তা বাজার মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের জগদ্ধাত্রী পুজোর উদ্বোধন করেন মমতা। তাঁর বক্তৃতার আগে উদ্যোক্তাদের তরফে বলা হয়, মমতা না থাকলে পোস্তা বাজারের সঙ্গে যুক্ত কয়েক লক্ষ মানুষের রুটিরুজি বিপন্ন হতে পারত। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী তা রুখে দিয়েছেন। তাই তিনিই তাঁদের জগদ্ধাত্রী, অন্নপূর্ণা। সেই সঙ্গে এ-ও বলা হয়, আদালতে মামলা চললেও বন্দর কর্তৃপক্ষ জুলুম চালাচ্ছে। কোথাও গাড়ি পার্কিংয়ের নামে, কোথাও পাঁচিল তুলে দিয়ে।
এ বার পোস্তা বাজারের জগ্ধাত্রী পুজো ৫০ বছরে পদার্পণ করল। সেই মঞ্চ থেকেই মমতা স্পষ্ট বলেন, ‘‘আমি পুলিশকে বলব, এই যে পাঁচিল তুলে দিচ্ছে, গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা করে দিচ্ছে, এগুলো নিয়ে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে বেআইনি ঘোষণা করে দিন। বেআইনি ঘোষণা করে দিলে আর আইনি থাকে না।’’ কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল, মেয়র ফিরহাদ হাকিম, রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা, বেচারাম মান্নাও উপস্থিত ছিলেন মঞ্চে। মুখ্যমন্ত্রী পরামর্শ দেন, সবাইকে নিয়ে একটি কমিটি গড়ে বিষয়টির নিষ্পত্তি করতে হবে।
মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘কোনও দালাল, কোনও মাফিয়া যদি কারও নামে টাকা তোলে, আপনাদের অসুবিধা করে, তা হলে ব্যবস্থা নিতে হবে। মামলা আদালতে পড়ে রয়েছে। কিন্তু মালিকানা রাজ্য সরকারের হাতে আছে। কাগজ দেখে অধিগ্রহণ করে নিন। এটা কারও জায়গা নয়। রাজ্য সরকারের জায়গা।’’ মমতা আরও বলেন, ‘‘হঠাৎ করে পর্চা (নথি) নিয়ে আসছে। ওই পর্চা যে আসল, তার কী মানে আছে? আমাদের খতিয়ানে (রেকর্ডে) তো তা নেই! রসিদ দিচ্ছে না অথচ টাকা নিচ্ছে (পার্কিং ফি)। কোনও পয়সা দেবেন না। আর রসিদ দিলেও ওই রসিদের কী মূল্য আছে?’’ পোস্তা বাজারের মধ্যে একটি কৃষিবিপণন কেন্দ্র গড়ার ব্যাপারেও সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রী বেচারামকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
শুক্রবার নবান্নে রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠক ছিল। সেখান থেকেই পোস্তায় গিয়েছিলেন মমতা। সেখানে গিয়েই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘ল্যান্ডের কিছু কিছু অফিসার সরকারের অব্যবহৃত জমি বেচে দিচ্ছেন। মানুষ সে সব কিনে তার পর পস্তাচ্ছেন। ওই জন্য আজ (শুক্রবার) একটা কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। যাঁরা জমি কিনছেন, তাঁরা রেকর্ড দেখে কিনুন।’’ মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে স্পষ্ট যে, তিনি বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন, তাঁর সরকারের কোনও দফতরে যদি অনিয়মের কথা তাঁর কানে যায়, তা হলে সঙ্গে সঙ্গে তিনি পদক্ষেপ করেন। প্রসঙ্গত, ভূমি ও ভূমিরাজস্ব দফতর রয়েছে মমতার হাতেই।