মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনি পুরো ঘটনাটি বিশদে জেনেছেন। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
মালদহের স্কুলে বন্দুকবাজের হানার পিছনে গভীর চক্রান্ত ছিল বলে মনে করছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার ওই ঘটনার কিছু পরেই নবান্নে একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘বাচ্চাদের পণবন্দি করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পুলিশ, শিক্ষক এবং সাংবাদিকেরা দারুণ বুদ্ধির পরিচয় দিয়েছেন। বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে চক্রান্তকে ধাক্কা মেরে টেনে ফেলে দিয়েছেন!’’
বুধবার দুপুরে হঠাৎ মালদহের মুচিয়া চন্দ্রমোহন হাই স্কুলে জোড়া বন্দুক হাতে ঢুকে পড়ে এক বন্দুকবাজ। তাঁর সঙ্গে ছিল দু’টি পেট্রোল বোমা, এমনকি, একটি ছুরিও। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ক্লাসরুমে ঢুকে পড়ে প্রথমে শিক্ষিকাকে হুমকি দেন বন্দুকবাজ। তার পর বন্দুক উঁচিয়ে পড়ুয়াদেরও খতম করে দেওয়ার হুমকি দেন তিনি। যদিও পণবন্দি বলতে যা বোঝায়, অর্থাৎ বন্দিদের মুক্তির জন্য বিনিময়মূল্য চাওয়া— এ ক্ষেত্রে তা হয়নি। তবে পড়ুয়াদের খতম করার হুমকি দেওয়ার পর ক্লাসরুমে দাঁড়িয়ে বন্দুকবাজকে অসংলগ্ন ভাবে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমার বৌ কোথায়?’’
পরে অবশ্য পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে সাংবাদিক এবং শিক্ষকদের সাহায্যে কাবু করে ফেলে ওই বন্দুকবাজকে। তার ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই সাংবাদিক বৈঠক করে পুলিশ, সাংবাদিক এবং স্কুলের শিক্ষকদের ভূয়সী প্রশংসা করেন মমতা। তবে একই সঙ্গে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, পরিচয়পত্র ছাড়া ওই বন্দুকবাজের স্কুলে কী করে ঢুকল, তা নিয়েও। মমতা বলেছেন, ‘‘পরিচয়পত্র থাকে তো। পরিচয়পত্র ছাড়া তো এখন পড়ুয়ারাও স্কুলে ঢুকতে পারে না!’’
চক্রান্ত প্রসঙ্গে এর পরে আরও কথা বলেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এখন আর এত সহজ ভাবে কিছু নিলে চলবে না। এই যুগটাই হল সাইবার ক্রাইমের যুগ। একটা ফোন যেমন আমাদের সাহায্যও করে। তেমন একটা ফোনের মধ্যে দিয়ে বিশ্ব চক্রান্তও করা যায়। সুতরাং আমি বলব, সবার মধ্যেই আত্মবিশ্বাস থাকা জরুরি।’’
বুধবার পুলিশ এই ঘটনার পর ওই বন্দুকবাজকে আটক করেছে। পরে পুলিশ সূত্রেই জানা গিয়েছে, ওই ব্যক্তির নাম দেব বল্লভ। বাড়ি পুরাতন মালদহের নেমুয়ায়। এর আগেও ফেসবুকে বেশ কয়েক বার বিভিন্ন বিষয়ে হুমকি দিতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। বুধবারও মালদহের স্কুলে পড়ুয়াদের সামনে বন্দুক হাতে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘সবাই বলছে আমার স্ত্রীর চরিত্র খারাপ, আমার স্ত্রীকে বলেছে তোমার স্বামীর চরিত্র খারাপ।’’
মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনি পুরো ঘটনাটিই বিশদে জেনেছেন। পুলিশ বিষয়টি দেখছে। তবে একই সঙ্গে এমন ঘটনা যাতে আর না হয়, তার জন্য সতর্ক হওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ, ‘‘আমি স্কুল কমিটিকে বলব, স্কুল খোলার পর স্কুলে দু’জন দারোয়ানের ব্যবস্থা করা হোক। তাঁরা প্রয়োজনে পুলিশের কাছ থেকেও সাহায্য চাইতে পারে। পরিচয়পত্র ছাড়া স্কুলে ঢুকতে দেওয়া উচিত নয়। তবে গ্রামের মানুষ সহজ-সরল হন, তাঁরা অভিভাবক ভেবে হয়তো ঢুকতে দিয়েছেন। কিন্তু এখন সতর্ক হতে হবে।’’