মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফাইল চিত্র।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এসে নামোচ্চারণ করেননি। তার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সেই একই মাঠে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডানলপ কারখানার অচলাবস্থার জন্যে কেন্দ্রীয় সরকারকেই দায়ী করলেন। মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, বন্ধ হয়ে যাওয়া ডানলপ কারখানা ফের চালু করতে কেন্দ্র নিজেরা উদ্যোগী হয়নি। বরং, কারখানা অধিগ্রহণ করার জন্য রাজ্যের প্রস্তাবে সায় না দিয়ে পাঁচ বছর ফেলে রেখেছে। পাশাপাশি, ডানলপের মালিক পবন রুইয়ার সঙ্গে বিজেপি নেতাদের ঘনিষ্ঠতার অভিযোগও তুলেছেন মমতা।
ডানলপ কারখানার মাঠে সোমবার সভা করেছিলেন মোদী। সেই মাঠেই বুধবার পাল্টা সভা থেকে মমতা জানতে চান, সভাস্থলে ডানলপের কোনও শ্রমিক বা তাঁদের পরিবারের কেউ আছেন কি না। এর পরেই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০১৬ সালে রাজ্য সরকার ডানলপ এবং জেসপ কারখানা অধিগ্রহণ করতে চেয়েছিল। মমতার কথায়, ‘‘২০১৬ সালে চিঠি দিয়েছি, বিধানসভায় পাশ করিয়েছি। পাঁচ বছর হয়ে গেল, ডানলপ অধিগ্রহণ আমাদের করতে দিল না। নিজে করবেন না, আমাকেও করতে দেননি!’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘শ্রমিকেরা খেতে পাবেন না বলে আমরা ১০ হাজার টাকা করে ভাতা দিই। তাই তাঁরা আজও বেঁচে আছেন।’’ পাঁচ বছর কেন ডানলপ বন্ধ করে রাখা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর কাছে সেই জবাবদিহি চান মমতা।
মমতার অভিযোগ, ডানলপ এবং জেসপের মালিক রুইয়ার বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার একাধিক মামলা করলেও তাঁর সঙ্গে বিজেপি নেতাদের ওঠাবসা রয়েছে। রুইয়ার শরৎ বোস রোডের বাড়িতে বিজেপির দুই নেতা থাকেন। মমতার তোপ, ‘‘মজদুরদের মুখের গ্রাস কেড়ে রুইয়ার অতিথি হয়েছেন তাঁরা। এঁদের মুখে বড় বড় কথা শুনব আমি?’’ কোল ইন্ডিয়া, রেল, সেল, বিএসএনএলের মতো সংস্থা কেদ্রীয় সরকার বেচে দিচ্ছে বলেও মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন। বক্তব্যের শেষ লগ্নে ডানলপের শ্রমিকদের মমতা বলেন, রুইয়ার বাড়িতে বিজেপি নেতারা থাকেন কেন, এই মর্মে তাঁরা যেন সর্বত্র পোস্টার লাগান।
এই বিষয়ে ডানলপ-কর্তা রুইয়ার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তবে রুইয়ার বাড়িতে বিজেপি নেতাদের থাকার দাবি ‘বাজে কথা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন হুগলির বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। তাঁর পাল্টা বক্তব্য, ‘‘ডানলপ কর্তৃপক্ষকে তৃণমূলের চাপে আদালত পর্যন্ত যেতে হয়েছিল। কিন্তু তাঁর সম্পত্তি বিক্রি করে শ্রমিকদের টাকা ফেরানোর যে সম্ভাবনা ছিল, সেটা তৃণমূলের জন্যই হতে পারেনি। কারণ, তৃণমূল সেখানেও কাটমানি নিয়েছে।’’ শ্রমিক মহল্লার আক্ষেপ, বিধানসভা ভোটের মুখে ফের রাজনৈতিক তরজার বিষয় হয়ে দাঁড়াল ডানলপ। শ্রমিক রইলেন তিমিরেই।
অন্য দিকে, বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘রাজ্যের প্রস্তাব কেন্দ্রের আটকে রাখার বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় কখনও বলেননি। তা হলে আমরা সবাই মিলে সরব হতে পারতাম। সেই সঙ্গেই আমাদের কথা হল, ডানলপের ওই মাঠে প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর সভা করার আগে দু’পক্ষেরই মানুষের কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিল! ওই জেলায় সিঙ্গুরে শিল্প সম্ভাবনা ধ্বংস করতে তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন বিজেপির রাজনাথ সিংহ।’’
মোদী সিঙ্গুরের প্রসঙ্গ না তুললেও এ দিন মমতা অবশ্য তাঁর ‘জমি আন্দোলনের ভূমি’র কথা বলেছেন। মুখ্যমন্ত্রী জানান, সিঙ্গুরে ১১ একর জমিতে অ্যাগ্রো-ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইউনিট তৈরি হচ্ছে। চাষিদের এখনও মাসিক দু’হাজার টাকা, চাল দেওয়া হয়। তাঁরা চাষও করছেন।
প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনার জবাবে মুখ্যমন্ত্রী নিজের ‘শিল্পবন্ধু’ ভাবমূর্তি তুলে ধরতেও চেষ্টার কসুর করেননি। তিনি বলেন, হুগলিতে অনেক শিল্প হয়েছে। হ্যান্ডলুম, প্লাস্টিক, এমব্রয়ডারি, ইমিটেশন গয়নার ক্লাস্টার হয়েছে। রেলমন্ত্রী থাকাকালীন ডানকুনিতে রেল কারখানা, ডানকুনি থেকে অমৃতসর ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডর, ডানকুনি থার্ডলাইন-সহ একাধিক প্রকল্প, দক্ষিণেশ্বর-নোয়াপাড়ার মতো একাধিক মেট্রো রেল প্রকল্প যে তিনিই করেছিলেন, তা-ও উল্লেখ করেছেন মমতা। মোদীকে নিশানা করে তাঁর কটাক্ষ, ‘‘ফিতে কাটার আগে মনে পড়ল না, করল কে? লড়ল কে? টাকা দিল কে? আর দালালি করল কে? দালালি ছাড়া কোনও কাজ নেই! দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়ে মিথ্যা বলছেন!’’