মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
আসন্ন গঙ্গাসাগর মেলার নিরাপত্তার প্রেক্ষিতে রাজ্য প্রশাসনকে জল-পাহারায় গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই নিয়ে নৌ-বাহিনী এবং উপকূলরক্ষী বাহিনীর সঙ্গেও কথা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদলের পরে স্থল-সীমান্তের নিরাপত্তা, বিএসএফ, অনুপ্রবেশ-সহ বিভিন্ন বিষয়ে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এমন আবহে মমতার মঙ্গলবারের এই মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ।
গঙ্গাসাগরের প্রস্তুতি দেখে মঙ্গলবার কলকাতায় ফেরার আগে মুখ্যমন্ত্রী জল-পাহারায় গুরুত্ব দিতে রাজ্য ও জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের নাম না-করেও তিনি বলেছেন, “নৌ-বাহিনীকে বলেছি, উপকূলরক্ষী বাহিনীকেও বলতে হবে যাতে ও-দিক থেকে এ-দিকে কোনও সমস্যা না হয়। জলটাকেও খেয়াল রাখতে হবে। জল-স্থল-আকাশ, সব দিকেই খেয়াল রাখতে হবে। কেউ যাতে কোনও রকম ক্ষতি করতে না পারে, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।”
প্রশাসন সূত্রে খবর, সকালে মমতার সঙ্গে নৌ-বাহিনী, উপকূলরক্ষী বাহিনী এবং কেন্দ্র ও রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর বৈঠক হয়েছে। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, প্রতি বার সাগরে নৌ-বাহিনী পাহারা দিলেও এ বার তার সঙ্গে জেলা পুলিশও নৌকা নিয়ে নজরদারিতে থাকছে। তবে এখনও পর্যন্ত কোনও বিপদ-সঙ্কেত নেই। সুন্দরবনের পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও পুলিশের সঙ্গে সব ধরনের বাহিনীর সমন্বয় করে কাজ করার বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, “কড়া নিরাপত্তা-ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। সব রকম নজরদারি চলবে।” প্রশাসন সূত্রের খবর, গঙ্গাসাগর মেলার নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন বাহিনী মিলিয়ে ১৩ হাজার পুলিশ মোতায়েন থাকবে। থাকছে দু’হাজারের বেশি সিসি ক্যামেরা, নজর-মিনার থেকে নজরদারিও।
পাশাপাশি, মমতা জানিয়েছেন, পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তার জন্য সব রাস্তার সঙ্গে বড়বাজার থেকে গার্ডেনরিচ হয়ে গঙ্গাসাগরে আসার গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। গাড়ির গতি ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটারের বেশি করা যাবে না। ওই রাস্তায় বিভিন্ন সহায়তা বুথ থেকে এই নিয়ে ঘোষণা করা হবে।
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন কয়েকটি প্রকল্পের শিলান্যাস ও উদ্বোধন করেছেন। তার মধ্যে রয়েছে চালতা দুনিয়া এবং পাখিনালা নদীতে চারটি এলসিটি ফেরি পরিষেবা পরিচালনার জন্য রো-রো ভেসেল নির্মাণ, মুনি নদীর উপরে সিমেন্ট-কংক্রিটের সেতু, সুন্দরিকা-দ্বারিকা নদীর উপরে সিমেন্ট কংক্রিটের সেতু-সহ নানা কিছু। শিলান্যাস এবং উদ্বোধন মিলিয়ে ২১৪ কোটি টাকার কাজের কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এর মধ্যে গঙ্গাসাগরে মুড়িগঙ্গা নদীর উপরে প্রস্তাবিত সেতুর কথাও তিনি জানিয়েছেন। ইংরেজিতে তিনটি বই— গঙ্গাসাগরের প্রস্তুতি সংক্রান্ত পুস্তিকা, ‘সাগর সংবাদ’ এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার পর্যটন নিয়ে ‘সুন্দরী দক্ষিণী’ প্রকাশ করেছেন মমতা। জেলাশাসক সুমিত গুপ্তকে বইগুলি বাংলায় প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।