আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। —ফাইল চিত্র।
টানা পাঁচটা বছর। ২০১১ থেকে ২০১৬।
কল্যাণী জেএনএম মেডিক্যাল কলেজে নানা বিভাগের ক্লাসরুমে, হস্টেলে, রাস্তায়, ক্যান্টিনে ছড়িয়ে কত অজস্র স্মৃতি। ‘ডাক্তার’ হয়ে ওঠার পথে বন্ধু, সহপাঠী, শিক্ষক, সাধারণ কর্মী— কত জনের সঙ্গে রাতদিন ওঠাবসা। সহপাঠীরা বেশির ভাগই ছড়িয়ে গিয়েছেন নানা দিকে কর্মক্ষেত্রে। কিন্তু এখনও অনেক ঘনিষ্ঠ জন রয়েছেন নদিয়ার এই ক্যাম্পাসে।
খবরটা শুনে তাঁরা পাথর হয়ে গিয়েছেন!
শনিবার দুপুরে ফোনে গলা প্রায় বুজে আসছিল কল্যাণী মেডিক্যালের চিকিৎসক তথা ডিন (স্টুডেন্টস অ্যাফেয়ার্স) প্রদীপকুমার মহন্তের। নিজেকে সামলে মৃদু স্বরে তিনি বলেন, “মেধাবী, নম্র, ভদ্র, শান্ত স্বভাবের মেয়ে। কতই বা বয়স হবে! ওর এই ভবিতব্য আমরা কেউ মেনে নিতে পারছি না।”
একটু চুপ করে ফের প্রদীপ বললেন, “আমাদের ছাত্রী... এখান থেকেই এমবিবিএস...
নিজের বিভাগের সঙ্গে, এখানকার পড়ুয়াদের সঙ্গে তার নিয়মিত যোগাযোগ থেকেছে।” এই পর্যন্ত বলার পরেই নীরবতা, যদিও ফোন কেটে যায়নি।
কেউ হারিয়েছেন সহপাঠীকে। কেউ আবার ডাক্তার দিদিকে। কেউ বা স্নেহের ছাত্রীকে।
উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট স্বাস্থ্য জেলার এক গ্রামীণ হাসপাতালের চিকিৎসক হয়েছেন নিহত ছাত্রীর এক সহপাঠী। তিনি বলেন, “আমাদের খুব কাছের বন্ধু ছিল ও। কোনও দিন ওকে উঁচু গলায় কথা বলতে শুনিনি।”
তাঁদের এক সহপাঠিনী এখন শান্তিনিকেতনে একটি হাসপাতালে কর্মরত। তাঁর মনে পড়ে, “ও কিন্তু বেশ ভিতু ছিল! কখনও একা থাকত না।” তার পরেই তাঁর গলা কেঁপে যায়— “যা ঘটেছে তা কল্পনার বাইরে। আমার তো রীতিমতো গা-হাত-পা কাঁপছে। সরকারি হাসপাতালের ভিতরে কোনও চিকিৎসকের সঙ্গে এমন কিছু কখনও ঘটেছে কি না, আমার
জানা নেই!”
জেএনএমের এক চিকিৎসক-শিক্ষিকার মনে পড়ে, “ডাক্তারি পড়ার সময়ে ও খুব মনোযোগী ছাত্রী ছিল। পরে ইন্টার্নশিপ করার সময়ে যথেষ্ট ধৈর্য নিয়ে রোগী দেখত। কর্তব্যপরায়ণ ছিল।” একটু থমকে থেকে তিনি বলেন, “ঘটনাটা শুনে ওই রাতে ঘুমোতে পারিনি। বারবার ওর মুখ মনে পড়েছে।”
এক সময় কল্যাণী মেডিক্যালের শিক্ষক বর্ণিক চৌধুরী এখন বিহারের কিসানগঞ্জে এমজিএম মেডিক্যাল কলেজে কর্মরত। থমথমে গলায় তিনি বলেন, “শান্তশিষ্ট মেয়ে। কখনও কারও ক্ষতি করার মেয়ে সে নয়। একটা পিঁপড়ের ক্ষতিও বোধহয় করেনি কখনও। তার এই পরিণতি!"