—ফাইল চিত্র।
বিধানসভায় পাশ হয়ে গেল ক্লিনিক্যাল এসটাবলিশমেন্ট বিল। বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসায় গাফিলতি, অনিয়ম এবং আর্থিক জুলুম রুখতে এই বিল এনেছিল রাজ্য সরকার। শুক্রবার বিলটি পেশ হওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এই বিল ঐতিহাসিক বিল, সারা দেশের কাছে এই বিল মডেল হয়ে উঠবে।’’ কিন্তু সরকারি হাসপাতালগুলিকে এই বিলের আওতায় আনা হয়নি বলে বিরোধী দলগুলি এর সমালোচনায় সরব হয়। মুখ্যমন্ত্রী পাল্টা আক্রমণে যান, পশ্চিমবঙ্গের সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবায় বিপুল উন্নতি হলেও বিরোধীরা তা দেখতে পান না বলে তিনি মন্তব্য করেন। নিজের ভাষণ শেষে বিরোধীদের প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বান ছিল, সর্বসম্মতিক্রমে পাশ করানো হোক বিলটি। কিন্তু বিরোধীদের আনা সংশোধনীগুলি মানতে সরকার পক্ষ রাজি না হওয়ায় সর্বসম্মতির প্রস্তাব ভেস্তে যায়। সরকার ধ্বনি ভোটে পাশ করিয়ে নিয়েছে বিলটি। বিরোধীরা বিলকে সমর্থন জানাননি। তবে প্রস্তাবের বিপক্ষেও তাঁরা ভোট দেননি।
বিলটি পেশ হওয়ার পর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আইনটির প্রয়োজনীয়তা বিশদে বাখ্যা করেন। বিরোধীদের সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে রাজ্যের সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার ইতিবাচক ছবি তুলে ধরার চেষ্টা করেন। যে বিল পেশ হল, তাতে বেসরকারি হাসপাতালের জুলুম রোখার জন্য ঠিক কী ধরনের ব্যবস্থা থাকছে, তাও মুখ্যমন্ত্রী সবিস্তার তুলে ধরেন। তবে ভাষণের মাঝে মুখ্যমন্ত্রীর দিকে বার বার বিরোধী বেঞ্চ থেকে উড়ে এসেছে কটাক্ষ। ঝাঁঝাঁলো স্বরে প্রত্যেক কটাক্ষের জবাবও দিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার ঠিক কেমন ছিল রাজ্য বিধানসভার চিত্র? জেনে নিন সংক্ষেপে:
• ‘আমাদের রাজ্যে সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা দেশের মধ্যে সবচেয়ে ভাল। আগের সরকার কিছুই করেনি। আমরা এর মধ্যেই ২৭ হাজার বেড বাড়িয়েছি। সেগুলো বিরোধীরা বলছেন না।’ মন্তব্য মুখ্যমন্ত্রীর।
• প্রতিবেশী রাজ্য বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, উত্তর-পূর্ব ভারত এবং প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ থেকে মানুষ এ রাজ্যে চিকিৎসা করাতে আসেন। বললেন মুখ্যমন্ত্রী।
• শিশুদের টিকাকরণ ৮০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৯১ শতাংশ হয়েছে।
• মেডিক্যাল পড়ার জন্য ১৩৪৫টি আসন বাড়ানো হয়েছে।
• প্রসবের সময় মা মারা গেলেও বাচ্চারা যাতে দুধ পায়, তার জন্য ‘মধুর স্নেহ’ প্রকল্প চালু করা হয়েছে।
• যে বিল বিধানসভায় পেশ হল আজ, তার ভূয়সী প্রশংসায় মুখ্যমন্ত্রী। বললেন, ‘ভাল বিল আনার জন্য আমি নিজে ৬ ঘণ্টা বিলের তথ্য খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছি।’
• বেসরকারি হাসপাতালগুলোর বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ মুখ্যমন্ত্রীর।
• বললেন, ‘রোগী মারা গেলেও তার অপারেশন করে দেওয়া হচ্ছে।’
• ‘গতকাল অ্যাপোলো থেকে চিঠি পেয়েছি।’ বললেন মুখ্যমন্ত্রী।
• বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার চড়া খরচের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘লোভ বাড়তে বাড়তে সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে।’
• ‘ইনডোর এবং আউটডোরে চিকিৎসার খরচ বেঁধে দিতে হবে, অপ্রয়োজনীয় টেস্ট করিয়ে খরচ বাড়ানো যাবে না।’ মন্তব্য মুখ্যমন্ত্রীর।
• এই বিল আগামী দিনে দেশের মডেল হবে, এই বিল ঐতিহাসিক বিল। দাবি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েক।
• রাজ্য সরকারের পেশ করা ক্লিনিক্যাল এসটাবলিশমেন্ট বিলের আওতায় শুধু বেসরকারি হাসপাতালগুলি আসছে। চিকিৎসায় গাফিলতি বা অনিয়ম হলে শুধু বেসরকারি হাসপাতালই শাস্তির মুখে পড়বে। সরকারি হাসপাতাল এর আওতায় আসবে না। বিরোধীরা এই নীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন।
• সমালোচনার মুখে পড়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। পূর্বতন বাম সরকারকে তীব্র আক্রমণ।
শুক্রবার বিধানসভায় ক্লিনিক্যাল এসটাবলিশমেন্ট বিল পেশ হওয়ার পর ভাষণ দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। —নিজস্ব চিত্র।
• বিরোধীদের কটাক্ষ করে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘ভাল কথা বলব না, ভাল কিছু দেখব না, ভাল কাজ করব না। শুধু বিরোধিতা করতে হবে বলে সমালোচনা করে যাব।’
• পশ্চিমবঙ্গের সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে যে মানের চিকিৎসা হয়, তা আর কোথাও হয় না। দাবি মুখ্যমন্ত্রীর।
• ব্লাড টেস্ট, এমআরআই, এমনকী হার্ট অপারেশনও প্রায় বিনামূল্যে হচ্ছে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানালেন।
• বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রতিষ্ঠানগুলির উপর নজরদারির জন্য ১৩ সদস্য বিশিষ্ট রেগুলেটরি কমিশন গঠন করা হচ্ছে। কমিশনকে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজন হলে কমিশন হাসপাতাল বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশও দিতে পারে।
• হাসপাতালের লাইসেন্স পেতে হলে এ বার থেকে নির্দিষ্ট শর্ত মেনে চলতে হবে। জানালেন মুখ্যমন্ত্রী।
• আপৎকালীন চিকিৎসার ক্ষেত্রে আগে টাকা চাওয়া যাবে না।
• চিকিৎসায় গাফিলতিক অভিযাগ প্রমাণিত হলে হাসপাতাল ছ’মাসের মধ্যে রোগীর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবে।
• চিকিৎসায় অনিয়ম বা গাফিলতির কারণে রোগীর সামান্য ক্ষতি হলে ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা, বড় ক্ষতি হলে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা এবং রোগীর মৃত্যু হলে ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা হবে।
• সরকারের নির্দিষ্ট করে দেওয়া ন্যূনতম পরিকাঠামো না থাকলে এ বার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে হাসপাতাল খোলার লাইসেন্স দেওয়া হবে না। জানালেন মুখ্যমন্ত্রী।
• লাইসেন্সে যে শর্ত থাকবে, তা না মানলে তিন বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে।
• সব বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে জন-অভিযোগ বিভাগ খুলতে হবে। রোগীর পরিবার নিজেদের অভিযোগুলি সেখানে নথিবদ্ধ করাবে।
• সরকারের থেকে জমি বা অন্য সুবিধা পেয়ে থাকলে গরিব মানুষকে নিখরচায় চিকিৎসা দিতে হবে। স্পষ্ট জানালেন মুখ্যমন্ত্রী।
• মুখ্যমন্ত্রী ফের জানিয়েছেন, বেসরকারি হাসপাতালকে ইচ্ছা মতো টাকা নিতে দেওয়া হবে না। প্যাকেজের চেয়ে বেশি টাকা নেওয়া যাবে না।
• বাম আলের বিলটিকেই ফের বেশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিধানসভায় শুক্রবার এমনই মন্তব্য উড়ে এল মুখ্যমন্ত্রীর দিকে। বিরোধীদের এই বক্তব্য সরাসরি নস্যাৎ করলেন মুখ্যমন্ত্রী। জানালেন, বাম আমলের বিল এটা নয়, এই বিলে অনেক নতুন বিষয় রয়েছে। বিরোধীরা বিলটা পড়েও দেখেননি বলে কটাক্ষ করলেন মুখ্যমন্ত্রী।
আরও পড়ুন: রাজ্যে ২৭টি নার্সিংহোম ও বেসরকারি হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল
• রাজ্যের সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা গত ছ’বছরে অনেক উন্নত হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করলেন। বামেদের তীব্র আক্রমণ করে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য, ‘কিচ্ছু করেননি ৩৪ বছরে।’
• রাজ্যের বিভিন্ন অংশে যে ৪২টি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল তৈরি করার প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছিলেন, তার মধ্যে ৩৩টিই চালু হয়ে গিয়েছে, জানালেন মুখ্যমন্ত্রী।
• সরকারি হাসপাতালে গাফিলতির অভিযোগ পেলে স্বাস্থ্য দফতর সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেয় বলেও মুখ্যমন্ত্রীর দাবি।
• বেসরকারি হাসপাতালে অনিয়ম এবং চড়া খরচে রাশ টানতে ক্লিনিক্যাল এসটাবলিশমেন্ট বিলকে বিধানসভায় সর্বসম্মত ভাবে পাশ করানোর আহ্বান জানালেন মুখ্যমন্ত্রী।
• বিরোধীরা বিলকে সমর্থন করতে রাজি হলেন না। বিলটিতে কিছু সংশোধনীর প্রস্তাব দিয়েছিলেন তাঁরা। সরকার তা মানতে রাজি হয়নি। তাই বিরোধীরা ভোটাভুটি চাইলেন।
• সরকার পক্ষের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুবাদে ধ্বনি ভোটে পাশ হয়ে গেল বিল।
• বিরোধীরা বিলকে সমর্থন জানাননি, তবে এর বিপক্ষেও তাঁরা ভোট দেননি।