বিজেপি কর্মীদের তাণ্ডব। —নিজস্ব চিত্র
অনাস্থা ভোট ঘিরে ধুন্ধুমার বনগাঁ পুরসভা এলাকা। ভাঙচুর, বোমাবাজি, লাঠিচার্জ ঘিরে কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় পুরসভা ও তার আশপাশের এলাকা। তৃণমূলের দাবি, আস্থা ভোটে জয় পেয়ে বোর্ড দখলে রাখতে পেরেছে তারা। অন্য দিকে, বিজেপির দাবি, আস্থা ভোটে তৃণমূলকে হারিয়ে তাদেরই জয় হয়েছে। দু’পক্ষই পুরসভা দখলের দাবি করায় রাজনৈতিক উত্তেজনা যেমন চরমে, তেমনই ব্যাপক গন্ডগোলের পরিস্থিতি কার্যত পুলিশ প্রশাসনের হাতের বাইরে চলে যায়।
আস্থা ভোট ঘিরে মঙ্গলবার সকাল থেকেই ছিল টানটান উত্তেজনা। বিতর্কের সূত্রপাত তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া দুই কাউন্সিলরকে ঘিরে। হিমাদ্রি মণ্ডল ও কার্তিক মণ্ডলের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা ছিল। হাইকোর্ট এক নির্দেশে জানায়, আগামী ৭ দিন তাঁদের গ্রেফতার করা যাবে না। সেই নির্দেশ নিয়ে এ দিন পুরসভা চত্বরে গেলেও পুলিশ তাঁদের ভিতরে ঢুকতে দেয়নি বলে অভিযোগ বিজেপির। জানানো হয়, নির্দেশের লিখিত নথি লাগবে। এই নিয়েই ক্ষুব্ধ বিজেপি সমর্থকরা ব্যাপক উত্তেজনা শুরু করেন। পরে যদিও তাঁরা ওই নির্দেশের প্রতিলিপি নিয়ে জমা দেন।
২২ আসনের বনগাঁ পুরসভা ছিল তৃণমূলের দখলে। কাউন্সিলরের সংখ্যা ছিল ২০। এক জন করে কাউন্সিলর ছিল সিপিএম এবং কংগ্রেসের। কিন্তু সম্প্রতি ১৪ জন কাউন্সিলর তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। তার মধ্যে অবশ্য পরে তিন জন ফিরেও যান তৃণমূলে। অর্থাৎনতুন সমীকরণ দাঁড়ায় বিজেপি ১১, তৃণমূল ৯, কংগ্রেস ১, সিপিএম ১।
এই পরিস্থিতিতেই পুরসভার চেয়ারম্যান শঙ্কর আঢ্যর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন বিজেপিতে যোগ দেওয়া কাউন্সিলররা। সেই অনাস্থার ভোটাভুটি ছিল মঙ্গলবার। কিন্তু বিজেপিতে যোগ দেওয়া এবং অনাস্থার এই মধ্যবর্তী সময়ে দুই কাউন্সিলর হিমাদ্রি মণ্ডল ও কার্তিক মণ্ডলের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের হয়। সেই মামলাতেই কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশনামা নিয়ে এ দিন বনগাঁ পুরসভার বাইরে হাজির হন হিমাদ্রি এবং কার্তিক। কিন্তু পুলিশ প্রাথমিক ভাবে তাঁদের পুরভবনের ভিতরে ঢুকতে দেয়নি।
এ ভাবেই বিজেপি কাউন্সিলরদের আটকে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। —নিজস্ব চিত্র
আরও পডু়ন: কর্নাটক জট কাটার ইঙ্গিত, বিদ্রোহী বিধায়কদের মামলার রায় আগামিকাল, জানাল সুপ্রিম কোর্ট
অন্য দিকে, বিজেপির ৯ কাউন্সিলর পুরভবনের ভিতরে ঢুকলেও তাঁরা অনাস্থার ভোটাভুটি যে কক্ষে নেওয়ার কথা, সেখানে ঢোকেননি। তাঁদের বক্তব্য, দলের দুই কাউন্সিলর হিমাদ্রি ও কার্তিকের জন্য জন্য তাঁরা অপেক্ষা করছিলেন। তাঁরা না আসায় অনাস্থা কক্ষে ঢোকেননি।
রাজ্য পুর আইন অনুযায়ী, যে পক্ষ অনাস্থা আনবে, তাকেই সেই অনাস্থা প্রমাণ করতে হবে। মঙ্গলবার সেই সময়সীমা ছিল বিকেল তিনটে পর্যন্ত। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে বিজেপি কাউন্সিলররা অনাস্থা প্রক্রিয়ায় অংশই নেননি। ফলে কার্যত অনাস্থা প্রক্রিয়াই ভেস্তে গিয়েছে, যার অর্থ, ক্ষমতা পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। অনাস্থা প্রমাণ করতে পারেনি বিজেপি। এমনটাই দাবি তৃণমূলের।
পুলিশের সঙ্গে বিজেপি কর্মীদের ধস্তাধস্তি। —নিজস্ব চিত্র
যদিও বিজেপি দাবি করেছে, বনগাঁ পুরসভা তাঁদেরই দখলে। পুরসভার চেয়ারম্যান শঙ্কর আঢ্য বলেন, ‘‘বিকেল ৩টে পর্যন্ত সময়সীমা ছিল। কিন্তু এক্সিকিউটিভ অফিসার তার পরও আরও আধঘণ্টা অর্থাৎ সাড়ে তিনটে পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। অনাস্থার পক্ষে কেউ আসেননি। স্বাভাবিক ভাবেই আমরা ক্ষমতা ধরে রাখতে পেরেছি।’’
কিন্তু নাটকে এখানেই যবনিকা পড়েনি। বিজেপি আবার পাল্টা দাবি করেছে, তাঁরা অনাস্থায় জয়ী হয়েছে। এবং আইন মেনেই তা হয়েছে। কী ভাবে? কাউন্সিলরদের দাবি, সাড়ে তিনটে নাগাদ তাঁরা এক্সিকিউটিভ অফিসারের ঘরে গিয়েছিলেন। অনাস্থার পক্ষে তাঁদের দলের ১১ কাউন্সিলর ভোট দিয়েছেন। অনাস্থার বিপক্ষে কেউ ছিলেন না। ফলে ১১-০ ব্যবধানে জিতে তাঁরা বনগাঁ পুরসভায় জয়ী হয়েছে।
আরও পড়ুন: বছরের শেষ চন্দ্রগ্রহণ আজ, দেখা যাবে ভারতের সর্বত্র
ভোটাভুটিতে অংশ নেবে না বলেই জানিয়ে দিয়েছিল সিপিএম। অর্থাৎ হাউসে উপস্থিত কাউন্সিলরদের সংখ্যা দাঁড়ায় ২১। উপস্থিতির ভিত্তিতে ম্যাজিক ফিগার দাঁড়ায় ১১। সেই সূত্রেই বিজেপিও পুরসভা দখলের দাবি করেছে।
ভিতরে যখন এই অনাস্থা ঘিরে এই চরম টানপড়েন চলছে, বাইরে তখন তুমুল অশান্তি। বিজেপি কর্মী সমর্থকরা দফায় দফায় বিক্ষোভ, জমায়েত শুরু করেন। পুলিশও মাঝে মধ্যেই তাঁদের দিকে লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে গিয়ে নিরস্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু সাড়ে তিনটে নাগাদ তৃণমূল পুরসভা দখলের দাবি করতেই পরিস্থিতি কার্যত অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। বিজেপি কর্মীরা পুরভবন চত্বরের দোকানপাট এবং কার্যত সামনে যা পান, তাই ভাঙচুর করতে শুরু করেন। পুলিশ-র্যাফের সামনেই ছোড়া হয় বোমা। বেশ কিছুক্ষণ এই উত্তেজনা চলার পর পুলিশ ও র্যাফ মৃদু লাঠিচার্জ করে সরিয়ে দেয়। যদিও তার পরও পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। গোটা এলাকায় এখনও উত্তেজনা রয়েছে।