—প্রতীকী ছবি।
লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে শাসক দলের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পরেই রাজ্যের চিকিৎসকমহলের নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি শাসক দলের কোন গোষ্ঠীর হাতে থাকবে, তা নিয়ে তৃণমূলের চিকিৎসক-নেতাদের অন্তর্দ্বন্দ্ব চরমে উঠেছে বলে অভিযোগ। যা শেষ পর্যন্ত প্রকাশ্যে হাতাহাতি, গালিগালাজ এবং থানায় পরস্পরের বিরুদ্ধে এফআইআর পর্যন্ত গড়িয়েছে!
ভোট চলাকালীন গত ২৫ মে হাওড়া আইএমএ দফতরে চিকিৎসকদের সর্বভারতীয় সংগঠন ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’ (আইএমএ)-এর রাজ্য শাখার ৭৫তম স্টেট কাউন্সিলের বৈঠকে তৃণমূলের চিকিৎসক-নেতা তথা বিধায়ক সুদীপ্ত রায় এবং উত্তরবঙ্গ লবির চিকিৎসক সুশান্ত রায়ের গোষ্ঠীর সঙ্গে তৃণমূলের চিকিৎসক নেতা শান্তনু সেন ও নির্মল মাজি গোষ্ঠীর চিকিৎসকদের ধুন্ধুমার গোলমাল বাধে। অভিযোগ, ধাক্কাধাক্কি, মাইক ভাঙা, চেয়ার ছোড়া, গালি দেওয়া—কিছুই বাকি থাকেনি। দু’পক্ষই থানায় অভিযোগ দায়ের করেন! তবে সমাধান এখনও অধরা।
আগামী অগস্ট-সেপ্টেম্বরে প্রায় ১৬ হাজার সদস্যের আইএমএ রাজ্য শাখার নির্বাচন হওয়ার কথা। তার আগেই সংগঠনের দখল নিতে মরিয়া দু’পক্ষ। শান্তনু-নির্মল গোষ্ঠীর চিকিৎসকদের অভিযোগ, বৈঠকে সুদীপ্তর দুই মেয়ে (যাঁরা পেশায় চিকিৎসক ও বড় মেয়ে শিল্পা বসু রায় আইএমএ-র কলকাতা শাখার সচিব) এবং সুদীপ্ত-ঘনিষ্ঠ চিকিৎসকদের উত্তরবঙ্গ লবির অন্যতম মাথা সুশান্ত ইচ্ছাকৃত ভাবে চরম অশান্তির পরিবেশ তৈরি করেন। বাসে করে প্রচুর বহিরাগতকে এনে তাঁরা গোলমাল বাধিয়েছেন এবং আইএমএ-র বৈধ নির্বাচন কমিশনকে অস্বীকার করেছেন। এমনকি, শান্তনুদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন। যদিও সুদীপ্ত নিজে সে দিন উপস্থিত
ছিলেন না।
অন্য দিকে, সুদীপ্ত গোষ্ঠীর দাবি, কোনও বহিরাগতকে তাঁরা আনেননি। বরং শান্তনু লবির চিকিৎসকেরাই প্রথমে তাঁদের উপর হামলা চালান। সুদীপ্তর মেয়ে শিল্পার কথায়, “আমার বোনকে ওরা প্রথম হেনস্থা করে। আমি মঞ্চে উঠে প্রতিবাদ করি। শান্তনু সেন তো চুপচাপ বসে মজা দেখছিলেন। তখন আমি নির্মল মাজিকে বলি, আপনি কিছু করুন!” শিল্পার দাবি, “এটা তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নয়। আইএমএ-র মধ্যে প্রচুর বিজেপি ঢুকে পড়ে এই সব করাচ্ছে। আইএমএ-র সভাপতি দিলীপ দত্ত বিজেপি-ঘনিষ্ঠ। অন্যায় ভাবে কাউকে কিছু না জানিয়ে ওরা নির্বাচন কমিশন তৈরি করেছে। আমরা সেটা মানব কেন?”
দিলীপের প্রতিক্রিয়া, “মিথ্যা অভিযোগ। জীবনে কখনও রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকিনি। ৭৫ বছর বয়স হয়েছে। সে দিন যে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা আইএমএ-তে হল, আগে কখনও হয়নি।” আইএমএ-র নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান সমরেন্দ্র বসুর কথায়, “আমি সে দিন ঘটনাস্থলে ছিলাম না। তবে শুনেছি, সুদীপ্ত রায়ের মেয়েরা অশান্তি করেছেন এবং আমার মৃত্যুকামনা করেছেন। ওঁদের হয়ে সুশান্ত রায় গোটা বিষয়টি পরিচালনা করেছেন।” সুশান্ত রায়, সুদীপ্ত রায় ও নির্মল মাজিকে বহু বার ফোন ও হোয়্যাটসঅ্যাপ মেসেজ করলেও জবাব দিতে চাননি। শান্তনু সেন বলেছেন, “সংবাদমাধ্যমে কিছু
বলব না।”