তাণ্ডব: বিজেপির অভিযোগ, নোট বাতিলের বর্ষপূর্তি পালনে তাদের মিছিলে বাধা দিয়েছে তৃণমূল। এর প্রতিবাদেই বৌবাজার থানা চত্বরে ঢুকে তাণ্ডব গেরুয়া সমর্থকদের। বুধবার শহরে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
নোটবন্দির বর্ষপূর্তি পালন করতে গিয়েও বেধে গেল সংঘর্ষ। খাস কলকাতায় দু’টি জায়গায় গোলমাল বাধল তৃণমূল ও বিজেপি’র। আবার আসানসোলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ের সভায় কংগ্রেসের কালো পতাকা দেখানো ঘিরে দু’দলের মধ্যে ধস্তাধস্তি বাধল। বামেদের প্রতিবাদ অবশ্য ছিল শান্তিপূর্ণই।
মধ্য কলকাতার চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ এবং দক্ষিণ কলকাতার রাসবিহারী মোড়ের কাছে বুধবার দু’টি ঘটনাই ঘটেছে পুলিশের সামনে। পুলিশ সূত্রের খবর, দু’জায়গাতেই বিজেপি-র কর্মী-সমর্থকেরা আক্রান্ত হয়েছেন তৃণমূলের হাতে। এমনকী, বিজেপি-র ‘উজালা দিবস’ পালনের মঞ্চ ভেঙে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। শহরের বাকি জায়গায় তৃণমূলের মিছিল মিটেছে শান্তিতেই।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য গোলমালের জন্য দায়ী করেছেন বিজেপি-কেই। নবান্নে এ দিন মমতা বলেন, ‘‘যার কিছু থাকে না, সে মারপিট করে। যার কিছু থাকে, সে শান্তিপূর্ণ ভাবে মিছিল করে। ক’টা বাইক নিয়ে গুন্ডামি করা খুব সহজ। কিন্তু এক লক্ষ লোক নিয়ে মিছিল করা সহজ নয়। ওরা গুন্ডামি জানে। আর কিছু জানে না।’’
শহরে গোলমালের প্রথম ঘটনাটি এ দিন ঘটে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে। রাজ্য দফতরের দিকে যেতে থাকা বিজেপি-র একটি মিছিলে এক দল সমর্থককে তৃণমূলের লোকজন মারধর করে বলে অভিযোগ। ক্ষুব্ধ বিজেপি সমর্থকেরা চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ অবরোধ শুরু করেন। ছেঁড়া হয় তৃণমূলের পোস্টারও। কিছু ক্ষণ অবরোধ চলার পরে বিজেপি সমর্থকেরা বিক্ষোভ দেখাতে বউবাজার থানার ভিতরেও ঢোকার চেষ্টা করেন। পরে পুলিশকর্তাদের আশ্বাসে বিজেপি বিক্ষোভ তুলে নেয়।
দক্ষিণে রাসবিহারী মোড়ের অদূরে বিজেপি-র সমর্থকেরা ‘উজালা দিবস’ পালন করছিলেন মঞ্চ বেধে। নোটবন্দির প্রতিবাদে টালিগঞ্জ থেকে তৃণমূলের একটি মিছিলের রাসবিহারী মোড় হয়ে হাজরা পর্যন্ত যাওয়ার কথা ছিল। মিছিলটি আচমকাই রাসবিহারী মোড় থেকে ফের মুদিয়ালির দিকে যেতে শুরু করে পুলিশকর্মীদের নিষেধ অমান্য করে। বিজেপি-র মঞ্চের সামনে তৃণমূলের মিছিল পৌঁছলে দু’দলের সমর্থকেরা উত্তেজিত হয়ে স্লোগান শুরু করেন। শুরু হয়ে যায় বচসা। বিজেপি-র অভিযোগ, সমর্থকদের মারধর করে তৃণমূল তাদের মঞ্চও ভেঙে দেয়। দু’বছর আগে পুরভোটের সময়ে আলিপুরে বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের সভায় হামলা করে তাঁকে হেনস্থা করা হয়েছিল তৃণমূল নেতা প্রতাপ সাহার নেতৃত্বে। পুলিশের উপস্থিতিতে এ দিনের ঘটনা সেই স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে। বিজেপি ও তৃণমূল দু’পক্ষই টালিগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে।
বাম ও কংগ্রেস নেতাদের অবশ্য দাবি, পারস্পরিক ‘বোঝাপোড়া’ রেখে গোলমাল বাধিয়ে বিজেপি এবং তৃণমূল নিজেদেরকেই প্রধান প্রতিপক্ষ হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে। গোলমাল থেকে দূরে ৬ বাম দল সিপিএম, সিপিআই, আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লক, এসইউসি এবং সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন মিছিল করেছে মৌলালি থেকে বিবাদী বাগ পর্যন্ত। নোটবন্দির জেরে অর্থনীতির এক বছরে কী হাল হয়েছে, তার রিপোর্ট প্রকাশ করার দাবিতে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আঞ্চলিক অধিকর্তার সঙ্গে দেখা করেন বিমান বসুর নেতৃত্বে বাম নেতারা। কংগ্রেসও প্রতিবাদ সভা করে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অদূরে। রাতে প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরীর নেতৃত্বে মোমবাতি মিছিল হয় সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত।